জোটে জোটে হবে ভোটের মূল লড়াই। অবস্থাদৃষ্টে নির্বাচনী লড়াই সেদিকেই এগিয়ে চলেছে। কেননা যাচাই-বাছাইয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিলের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আসছে ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আরও সঙ্কুচিত হয়ে আসবে প্রার্থী সংখ্যা। এরফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যকার সরাসরি ভোটযুদ্ধের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ মার্কা হবে প্রধান ফ্যাক্টর। ‘নৌকা’ কিংবা ‘ধানের শীষ’।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে মহাজোটের প্রধান শরিকদল আওয়ামী লীগের বাইরে তিনটি দলের মাত্র ৩ জন প্রার্থী আছেন। বাকি সবগুলো আসনে প্রার্থী আওয়ামী লীগের। অন্যদিকে বিএনপি জোটের ছোট দুইটি শরিকদলের মাত্র দুই জন মনোনীত প্রার্থী ছাড়া বাকিরা বিএনপির প্রার্থী। বিএনপি জোটের শরিকদের ঘোষিত দুই আসনে (চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ এবং চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) বিএনপির সাথে কোনো দূরত্ব ও জটিলতা নেই। তবে মহাজোটের ছোট শরিকদের তিনটি আসনে (চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম-৮ বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের মাঝে প্রকাশ্যে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। আছে বিদ্রোহী ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর বাগড়া।
বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬টি আসন, তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির তিনটি আসন মিলিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচনী এলাকা রয়েছে ১৯টি। মনোনয়ন বাছাইয়ের পর মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৩ জন। (বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল হয় ৫৯ জনের, যা মোট মনোনয়নপত্রের ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ)।
প্রার্থিতা পর্যালোচনা করে চাটগাঁর রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ জানিয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট বনাম বিএনপি জোটের মধ্যকার সরাসরি ভোটের লড়াইয়ের দিকটি ক্রমেই ফুটে উঠছে। অনেক আসনে ছোটখাট দল বা সংগঠনের প্রার্থীরা থাকলেও তারা মূল লড়াইয়ে আসার সম্ভাবনা কম। তবে ভোটের অঙ্কে কমবেশি ফ্যাক্টর হতে পারে। যেমন- তিনটি পার্বত্য জেলার তিন আসনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এই দুটি পাহাড়ি স্থানীয় সংগঠন প্রধানত আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে পারে। এ নিয়ে ‘নৌকা’র প্রার্থীরা মহাটেনশনে আছেন। ওই দুই বিবদমান পাহাড়ি সংগঠন অন্তত একটি আসনে জেতার টার্গেট নিয়েই মাঠে রয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন দল বা জোটগত প্রার্থী, তাদের সমর্থকগণ এবং ভোটারদের নানামুখী ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। কারাগার-মামলা-হুলিয়া ও হরেক রকম বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও বিএনপি জোটের ভোটের মাঠে সরব পদচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে মামলা-হুলিয়ার ঝক্কি-ঝামেলা বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রস্থলের গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে বিএনপি জোটের প্রার্থী দলের মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন প্রায় এক মাস যাবৎ কারাবন্দী। একাধিক মামলায় সর্বশেষ তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলার সংখ্যা ৪৫টি।
একইভাবে বিভিন্ন আসনে বিএনপি ও জোটের প্রার্থীরা মামলার জালে নাস্তানাবুদ অবস্থায় আছেন। তবে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই বিএনপি জোটের মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থনে বিভিন্ন এলাকাওয়ারি প্রতিদিনই হচ্ছে উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া। তাদের লক্ষ্য চট্টগ্রামে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির পুরনো ঘাঁটি পুনরুদ্ধার। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা বাধাহীন মাঠে তৎপর রয়েছে। তবে বাধা না থাকলেও রয়েছে অনেক এলাকায় ‘বিপত্তি’। তা হলো মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভ-অসন্তোষ, মান-অভিমান ভাঙানো ইত্যাদি। মহাজোটের টার্গেট ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর পর অর্জিত বিজয় অটুট রাখা। বিজয়ের মাসে বিজয়ের প্রত্যাশায় উজ্জীবিত মহাজোটের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা তৃণমূলের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন