শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রুহুল আমীনের আপাতত বিদায় পটুয়াখালীতে মহাজোটকে স্বস্তি দিলেও মাসুদ পারভেজের ফেরা অনিশ্চতা বাড়ছে

বরিশালÑ৩ ও ঝালকাঠী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে খুশি মহাজোট শিবির

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:১৪ এএম | আপডেট : ২:৪৩ পিএম, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে আপীলেও বাতিল হওয়ায় যথেষ্ট স্বস্তি ফিরেছে পটুয়াখালী সদরে মহাজোট প্রার্থী সহ নেতা কর্মীদের মাঝে। কিন্তু বরিশাল-২ আসনে জাপা’র মাসুদ পারভেজের আপীল গৃহীত হওয়ায় মহাজোটের মূল শরিক আওয়ামী লীগ শিবিরে কিছুটা অস্বস্তি বেড়েছে। এ ঘটনায় খুশি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও তার সমর্থকগণও। তবে বরিশাল-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মূল শরিক সরফুদ্দিন সান্টুকেই বেছে নিলেও শহিদুল হক জামাল কি ২০০৮-এর পুনরাবৃত্তি ঘটান কিনা তা সময়ই বলতে পারবে। অপরদিকে বরিশালÑ৩ ও ঝালকাঠী-২ আসনে বিএনপি’র সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ে দুরদর্শিতার অভাবে বিপর্যয় ঘটার আশংকায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। শুক্রবার সন্ধায় সান্টুকে সবুজ সংকেত দিলেও বরিশালÑ৩ আসনে বিএনপি সেলিমা রমানের পরিবর্তে এ্যাডভোকেট জয়নুল অবেদিন ও ঝালকাঠী-২’তে ইলেন ভ’ট্টোর পরিবর্তে জেবা আমীন খানের মনোনয়ন এলাকায় দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ নেতা কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি করেছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্তির পাশাপাশি এলাকায় সংশয় আছে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে। জনমনেও বিষয়টি নিয়ে নানা মত ও কথাবার্তা চলছে।
পটুয়াখালী-১ আসনে জাপার সদ্য বিদায়ী মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার জোটের বাইরে গিয়ে অনেকটা একগুয়েমী করেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন বলে দাবী মূল শরিক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের। সমঝোতা অনুযায়ী জাপাকে বরিশাল-৬ ও পিরাজপুর-৩ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া পিরোজপুর-২ জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ও বরিশাল-৩ ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এসব সিদ্ধান্তের বাইরে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের অনেকগুলো আসনেই জাতীয় পার্টি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। যার মধ্যে পটুয়াখালী-১ ও বরিশাল-২ অন্যতম। বরিশাল-৬ আসনে রুহুল আমীন হাওলাদার তার সহধর্মীনি রতœা আমীনকে দাঁড় করিয়ে নিজে পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যা জেলা সদরটির আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে যথেষ্ঠ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগ পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়াকে মনোনয়ন দেয়।
বাছাইয়ের দিন ঋণ খেলাপীর দায়ে রুহুল আমীন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিলের পরে শুক্রবার তা নির্বাচন কমিশনের আপীলেও খারিজ হয়ে গেছে। ফলে পটুয়াখালী আওয়ামী লীগ শিবিরে যথেষ্ঠ স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে ২০১৪-এর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই আমরা কাজ করেছি। আর কোন প্রবাসী এমপিকে আমরা ছাড় দিতে রাজী নই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এর ফলে পটুয়াখালী সদরে আওয়ামী লীগের শাহজাহান মিয়ার সাথে বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ভোট লড়াই জমে উঠতে পারে। তবে তা যদি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।
এদিকে বরিশাল-২ আসনে জাপার মাসুদ পারভেজ বিল খেলাপী হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়ায় তা পরিশোধ করে আপীল করায় আবেদন গৃহীত হয়েছে। এর ফলে যথেষ্ঠ অস্তস্তি বেড়েছে মহাজোটের মূল শরিক দলে। ঐ আসনে আওয়ামী লীগ সাবেক ছাত্র নেতা শাহে আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে। শাহে আলম দীর্ঘদিন ছাত্র লীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। মাসুদ পারভেজ এক সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকলেও পরে দল বদলে এরশাদের সাথে যুক্ত হয়ে এবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার দাবী মহাজোটের শীর্ষ পর্যায়ে সবুজ সংকেত পেয়েই তিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে মহাজোটের চুড়ান্ত তালিকায় তার নাম নেই।নির্বাচনে শাহে আলম ও মাসুদ পারভেজ দুজনই নবীন।
অপরদিকে ঐক্য ফ্রন্টের সরফুদ্দিন সান্টু ও শহিদুল হক জামাল একাধিক নির্বাচন করেছেন। জামাল ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রার্থী হয়ে আমীর হোসেন আমুকে ২৫ হাজার ভোট পরাজিত করলেও ’৯৬-এর নির্বাচনে ফয়জুল হকের কাছে সাড়ে ৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন। আবার ২০০১-এর নির্বাচনে তিনি ২৯ হাজার ভোটে ফয়জুল হককে পরাজিত করেন। তবে ১/১১ সরকারে সময় সংস্কারবাদীদের দলে নাম লিখিয়ে দল থেকে বহিস্কৃত হন। ২০০৮-এর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বরিশাল ও পিরোজপুরের দুটি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জামানত হারান জামাল। সরফুদ্দিন সান্টু ২০০৮-এর নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বিএনপিতে যোগদিয়ে প্রায় ৮৮ হাজার ভোট পেলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ২২ হাজারের ব্যবধানে হেরে যান। তিনি ২০০৮ সালেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেব প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে ৫৭৫ ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান।
দিন কয়েক আগে জামালের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরে মনোনয়ন তালিকায় তার নাম থাকলেও বিএনপি শেষ পর্যন্ত বরিশাল-২ আসনে সান্টুকেই চুড়ান্ত মনোনয়ন দিল। তবে ভোটের লড়াই নির্ভর করবে মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন তার ওপর। শেষ পর্যন্ত জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে মাসুদ পারভেজ ভোটের মাঠে থাকলে লড়াই কিছুটা ত্রিমুখী হলেও মাসুদ পারভেজ জনমতের বাইরেও থাকতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, তাতে কে সুবিধা লাভ করবে তা বুঝতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। তবে মাসুদ পারভেজের ভোটে ফিরে আসা মহাজোটের মূল শরিককে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিতে রাখবে বলেই মনে করছেন মহলটি।
এদিকে বরিশালÑ৩ আসনে সেলিমা রহমানের পরিবর্তে জয়নুল আবেদিনকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দোয়ায় খুশি মহাজোট শিবির। রাশেদ খান মেনন ও সেলিমা রহমানের পৈত্রিক ভ’মী বাবুগঞ্জ-মুরামী নিয়ে গঠিত এ আসনে ২০০৮-এর নির্বাচনে বিদ্রহী প্রার্থী হিসেবে জয়নুল আবেদিন ২০হাজার ভোট পেয়েছিলেন। সেলিমা রহমান ৬০হাজারেরও বেশী ভোট পেয়ে ৬হাজারের ব্যবধানে হেওে যান। এবার দল হয়নুল আবেদিনকেই মনোনয়ন দিল। এআসনে মহাজোটের শরিক ওয়র্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি টিপু সুলতান এবারো প্রার্থী।
অপরদিকে ঝালকাঠীÑ২ আসনে ইলেন ভ’ট্টোর পরিবর্তে জেবা আমীন খানকে মনোনয়ন দেয়ায়ও খুশী মাজোট শিবির। এখানে মহাজোটের প্রার্থী আমীর হোসেন আমু। এআসনে ১৯৯১ ও ’৯৬-এর নির্বচনে আমু তৃতীয়স্থান লাভ করেন। ’৯৯সালের উপ-নির্বাচনে তিনি প্রয়াত এমপি জুলফিকার আলী ভ’ট্টোর স্ত্রী ইলেন ভ’ট্টোকে প্রায় ৫৮হাজার ভোটে পরাজিত করলেও একবছর পরে ২০০১-এর নির্বাচনে ঐ প্রার্থীর কাছেই ৩৮হাজার ভোটে হেরে যান। ২০০৮-এর চরম প্রতিকুলতার নির্বাচনেও ইলেন ভ’ট্টো ৬০হাজারের বেশী ভোট পান। তবে রাজনীতি ও নির্বাচনে নবীন জেবা আমীন খানকে নিয়ে দল এবার কি ধরনের ‘ভোটের পরিক্ষা’ করছে তা বোধগম্য নয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের কাছে। মহলটির মতে এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য ২০০৮-এর চেয়েও অনেক কঠিনতর হতে পাড়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন