কক্সবাজার জেলায় ৪টি আসনের ২৮ প্রার্থী প্রতীক পেয়েই মাঠে নেমেছেন, সঙ্গে আছেন নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘ দিন পর বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা মাঠে নামায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক সাড়া। তবে নৌকা সমর্থকদের মারমুখো অবস্থানেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে কোনো কোনো জায়গায়। শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশসহ সব ঠিকঠাক থাকলে ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজারের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীকে ভোট দিয়ে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে ৪টি আসনে প্রতীক নিয়ে ২৮ প্রার্থী মাঠে থাকলেও ১, ৩ ও ৪ তিনটি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে নৌকা বনাম ধানের শীষে। আর মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় ধানের শীষের কোন প্রার্থী না থাকায় এখানে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নৌকা আর আপেল।
গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের নির্ধারিত দিনে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পেয়েই সাথে সাথে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থীরা।
তথ্য মতে, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সালাহ উদ্দীন আহমদের স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদকে ধানের শীষ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলমকে নৌকা, জাপার মৌলভী মো. ইলিয়াছকে লাঙ্গল, আবু মো. বশিরুল আলমকে হাতুড়ি, মুহাম্মদ ফয়সালকে হারিকেন, আলী আজগরকে হাতপাখা, বদিউল আলমকে সিংহ ও তানিয়া আফরিনকে মটর (গাড়ি-কার) প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে নৌকা, জামায়াতের এইচএম হামিদুর রহমান আযাদকে আপেল, ড. আনছারুল করিমকে মাছ, ড. জসীম উদ্দিনকে হাতপাখা, আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মনজুর আহমদকে মোমবাতি, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ মোহিব্বুল্লাহকে লাঙ্গল, শাহেদ সরওয়ারকে কুলা, মো. জিয়াউর রহমানকে চেয়ার, মো. শহীদুল্লাহকে হারিকেন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এই আসনে সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ বিএনপি মনোনিত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও শেষ মুহ‚র্তে দল তাঁকে ধানের শীষের চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন না দেয়ায় তাঁর মনোনয়ন আপনা-আপনি বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় ঐক্যফ্রন্ট জোটের মনোনয়ন পেয়েও আইনী জটিলতায় তিনি ধানের শীষ প্রতীক পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলকে ধানের শীষ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে নৌকা, জাতীয় পার্টির মুফিজুর রহমানকে লাঙ্গল, মোহাম্মদ আমিনকে হাতপাখা এবং মো. হাছানকে টেলিভিশন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক চার বারের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে ধানের শীষ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমা বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারকে নৌকা, জাতীয় পার্টির মাস্টার এম.এ মঞ্জুরকে লাঙ্গল, মোহাম্মদ শোয়াইবকে হাতপাখা, সাইফুদ্দিন খালেদকে হারিকেন এবং রবিউল হোছাইনকে মিনার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থীরা। মাইকিং দিয়েই প্রচারণা শুরু করেন অধিকাংশ প্রার্থী। প্রতীক পেয়ে সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরাও।
রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে যাতে কোন ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কোনো প্রার্থীকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া বিশৃংখলা হলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কিন্তু ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের। টেকনাফে বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি, মামলা-হামলা ও পুলিশের সহযোগিতায় ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার মত ঘটনার অভিযোগ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী।
একইভাবে কক্সবাজার সদর রামুর ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল অভিযোগ করেন নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা রামুতে তাঁর সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে। চকরিয়া-পেকুয়া আসনেও এমন অভিযোগ করেন ধানের শীষের প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমদ। ওদিকে মহেশখালীতেও ঐক্যফ্রণ্ট প্রার্থী জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন