শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জাপায় ঝুঁকিতে আ.লীগ

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বৃহত্তর খুলনার ১৪টি আসনে ভোটযুদ্ধে ৭৮ প্রার্থী এখন মাঠে। এর মধ্যে ৩ জেলার ৬টি আসনে মহাজোটের শরীকদল এরশাদের জাতীয় পার্টি নৌকার পাশাপাশি লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, এ আসনগুলো মহাজোট লাঙ্গল এবং নৌকার জন্য উন্মুক্ত করেছে। ফলে আসনগুলোতে ভোটের হিসাব অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগের বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছে এমন আসনগুলো আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যদিও নৌকার প্রার্থীরা বলছেন, জাপা ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়ায় নৌকার কোন ক্ষতি হবে না।

সূত্রমতে, খুলনা ১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে লড়ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। খুলনা ৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে লড়ছেন জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শহিদ আলম। খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বাবুর বিপরীতে লড়ছেন জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু।

সাতক্ষীরা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লুৎফল্লা (ওয়ার্কার্স পার্টির)-এর বিপরীতে জাপার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি প্রার্থীকে মেনে নিতে পারেনি আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তারা রয়েছে নিশ্চুপ। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছে জাপার প্রার্থী। এ আসনে গত নির্বাচনেও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সৈনিক লীগ নেতা সরদার মুজিব বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু বঞ্চিত হয়েছেন। তিনিও এবার মহাজোটের প্রার্থীর সঙ্গে কোন নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে লড়ছেন জাতীয় পার্টির শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন। সাতক্ষীরা সদর আসনটি বরাবর মহাজোট জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। এ আসন থেকে দু’বার জাপা নেতা মরহুম এম এ জব্বার নির্বাচিত হন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জগলুল হায়দারের বিপরীতে লড়বেন জাপার প্রার্থী আব্দুস সাত্তার মোড়ল। এ আসনে জাপার প্রার্থীর একটি বিশাল প্রভাব ও ভোট ব্যাংক রয়েছে। এরশাদের মনোনীত প্রার্থী এখানে দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়। এমনকি এবার জাপা প্রেসিডিয়াম এরশাদ এ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও তিনি মনোনয়ন জমা না দিয়ে সাত্তার মোড়লকে মনোনয়ন দেন। তাই এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের কাঁটা হতে পারে জাপা প্রার্থী।

সূত্রমতে, খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের দলীয় প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল। তাই তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা নিশ্চুপ রয়েছে। অপরদিকে খুলনা-৬ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরুল হক দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ায় তার অনুসারীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয়। ফলে এই দু’টি আসনে ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রæপিংয়ের সুযোগ নিতে চাইছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তবে মহাজোট থেকে ছাড় না দেওয়ায় খুলনার জাপার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জেলা জাপার যুগ্ম সম্পাদক জিএম বাবুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা মহাজোট হলেও খুলনার ছয় আসনের মধ্যে একটিও ছাড় দেয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তারপরও নির্বাচনের সময় কেন্দ্র যে নির্দেশনা দিবেন তিনি তা মেনে চলবেন বলে জানান।
জেলা যুবসংহতির সাধারণ সম্পাদক এরশাদুজ্জামান ডলার বলেন, খুলনার তিনটি আসন জাপা আ.লীগকে ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে আ.লীগ একটি আসনও ছাড়লো না। আসন ছাড়লে খুলনায় মহাজোট আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারতো বলে তিনি জানান।
মহানগর জাপার সদস্য শেখ পিয়াস বাবু বলেন, মহাজোট গঠনে জাপার অনেক অবদান রয়েছে। সেভাবে জাপাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। খুলনার ক্ষেত্রে চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ফুলতলা উপজেলা জাপার আহবায়ক আবু সাঈদ মোড়ল বলেন, জাপা মহাজোটের শরিক দল হলেও বিগত পাঁচ বছরে স্থানীয় মন্ত্রী তাদের কোনো ধরনের খোঁজ-খবর রাখেননি। অবমূল্যায়নের জায়গা থেকে তিনি এ আসনে জাপার প্রার্থী হয়েছেন। খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে জাপার প্রার্থী জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, আ.লীগ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি। এ জন্য খুলনার তিনটি আসন ওপেন করে দেয়া হয়েছে। তারপরও বাকী তিনটি আসনে জাপার নেতাকর্মীরা মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন