শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বরগুনায় ত্রিমুখী লড়াই

মো. মোশাররফ হোসেন, বরগুনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ইতিহাস আজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। তার পরেও দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে জাতি অনেকটা আশান্নিত হলেও ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’ এ প্রবাদ বাক্য বাস্তবায়িত হলে দেশ ও জাতির আশা পূর্ণ হবে।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সব দলের সমন্বয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে জাতির মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছিল। নির্বাচনের মেঘাচ্ছন্নতার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা ড. কামাল হোসেনের আগমন জাতিকে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সহায়তা করেছে। দলীয় মনোনয়ন ক্রয় থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া, মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া, বাছাই ও প্রত্যাহারসহ সর্বশেষ গত সোমবার প্রতীক বরাদ্ধ পর্যন্ত স্ব-স্ব দলীয় ও জোটগত দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলা যায়।

বরগুনা-১ ও ২ আসনের মানুষ মনোনয়ন প্রত্যাহারে শেষ দিন পর্যন্ত ছিল সঙ্কিত। কারণ দ্বিধাবিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী থাকায় দু’পক্ষের মধ্যেই ছিল টান টান উত্তেজনা। এ দু’টি আসনে প্রথম থেকেই ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের একক প্রার্থী থাকলেও আসন-১ এ ধানের শীষের প্রার্থীও ছিলেন ২ জন। বরগুনা-২ আসনে ছিল নৌকা ও মহাজোটের লাঙ্গলের প্রার্থী।

সর্বশেষ প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ায় এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বরগুনার দু’টি আসনে ভোটের বাজার গত সোমবার বিকাল থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই মিছিল, মিটিং, সভা সমাবেশ ও গণসংযোগে ভোটের মাঠ একদম গরম। পথে-ঘাটে চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, যোগ-বিয়োগ করতে শুরু করেছেন ভোটাররা।

স্বাধীনতা পরবর্তী টুঙ্গীপাড়া হিসেবে খ্যাত বরগুনা-১ আসনে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ৪ বার নির্বাচিত এমপি (বর্তমান এমপি), সাবেক প্রতিমন্ত্রী, এ অঞ্চলের হেভিওয়েটদের অন্যতম অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের প্রাণ পুরুষ হিসাবে পরিচিত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে। সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়নের স্রোতধারাকে কাজে লাগিয়ে দলের পুরাতন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দ্বিধাবিভক্ত দু’গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এ আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। দলীয় সিদ্ধান্তে এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি আমতলী উপজেলার মতিয়ার রহমান তালুকদার। প্রত্যাহার করতে হয়েছে বিএনপি’র সদ্য নির্বাচিত জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম মোল্লাকে। বরগুনা-১ আসন ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আমতলী ও তালতলী উপজেলায় একক প্রার্থী ধানের শীষের মতিয়ার রহমান তালুকদার। এমপি থাকাকালীন তালতলী উপজেলা প্রতিষ্ঠায় তার প্রাথমিক অবদানসহ উন্নয়নমূলক কাজ, আঞ্চলিকতার টান এবং বিএনপি’র ভোট ব্যাংক কাজে লাগাতে পারলে তার বিজয় দেখছেন এলাকার লোকজন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি, কেওড়াবুনিয়ার মরহুম পীর সাহেবের পুত্র, বর্তমান পীর মাওলানা মো. অলী উল্লাহ। তিনি এবার নতুন প্রার্থী হলেও ইতিপূর্বে ৪ বার নির্বাচনে তার পিতার অংশগ্রহণের ইমেজ এবং পীর মুরিদী হিসেবে গড়ে যাওয়া ভোটব্যাংক রয়েছে। সব মিলিয়ে তিনিও রয়েছেন ভোটারদের হিসাব নিকাশের প্রতিযোগিতার তালিকায়।
বরগুনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বর্তমান এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমন থাকলেও জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি এ আসনটি দাবি করে দলে সদ্য যোগদানকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত জাপার সে প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হয়নি। এ আসনে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং ব্যক্তি রিমনের সততা এ দুইয়ের সমন্বয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তার।

তবে এ আসনে বিএনপি’র হেভিওয়েট প্রার্থী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা, জাতীয় বার কাউন্সিলের বার বার নির্বাচিত সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় তার বিজয়ের সম্ভাবনাও একেবারে কম নয়। বিএনপি’র অন্য প্রার্থী একাধিকবার নির্বাচিত এমপি নুরুল ইসলাম মনিকে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয়েছে।

এ আসনটিতে নির্বাচনের শুরু থেকেই ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে আছেন দলের জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক এমপি গোলাম সরোয়ার হিরু। তিনি ইতিপূর্বে ২ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে একবার। পারিবারিক পরিচিতি, ব্যক্তি ইমেজ, সততা, ইতিপূর্বের কার্যক্রম এবং দলীয় ভোটব্যাংক সবমিলিয়ে তিনিও আছেন জনপ্রিয়তার একটি শক্ত অবস্থানে।ভোটারদের আলোচনা, দলীয় জনসমর্থন এবং ব্যক্তি ইমেজ সব মিলিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণে যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বরগুনা-১ ও ২ আসনে নৌকা-ধানের শীষ ও হাতপাখার ত্রিমুখি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন