শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সিলেটে আতঙ্কে বিএনপি নির্ভয়ে আওয়ামী লীগ

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সিলেটে প্রচারণায় ব্যস্ত দুটি প্রধান রাজনৈতিক জোট মনোনীত প্রার্থীরা। গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই শুরু করেছেন প্রচারণা। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা নিজেদের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়গুলো উদ্বোধন করেছেন। সেখান থেকেই পরিচালনা করা হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। তবে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও নির্লজ্জ আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

গত সোমবার বিকেলে সিলেট-৬ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগ উত্থাপন করেন। রাতে আবার সিলেট জেলার সবকটি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নিন্দনীয় আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয় সিলেট জেলা বিএনপির বিশেষ বর্ধিত সভায়। ওই সভায় এমন দাবি করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা শাখার সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। এদিকে সিলেট-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারে সাংবাদিকদের সাথে প্রেসব্রিফিংকালেও এমন দাবি করেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির প্রেসব্রিফিংয়ে জানান, তাদের সাথে প্রশাসন নির্লজ্জ আচরণ করছে। মামলা ছাড়াই নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে পুরনো মামলায় আসামি দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠাচ্ছে। সিলেটে কোনভাবেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তারপরও আমরা জনগণের কাছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তিনি বলেন, সিলেটে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেছেন, নির্বাচনে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিতে অনেক ষড়যন্ত্র করা হবে। মনে রাখতে হবে আমরা দীর্ঘ ১০টি বছর ধরে বাকশালী সরকারের হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন উপেক্ষা করে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের পরিচালনায় নগরীতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা বিএনপির কার্যকরী সদস্য, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জেলার সকল উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল মালেকের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সুচীত সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সিলেট-১ আসনের বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেট-৩ আসনের বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী।

এছাড়া সভায় ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারান্তরীণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুফিয়ানুল করিম চৌধুরী চেয়ারম্যান ও ফখরুল ইসলাম ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বাচ্চু, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, ওসমানীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গয়াস মিয়া, জেলা ধর্ম সম্পাদক আল মামুন খান, গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী, বিশ্বনাথ অলংকরী ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হোসেন রুহেল, দেওকলস ইউপি চেয়ারম্যান তাহিদ মিয়া, জৈন্তাপুর দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, বিএনপি নেতা আকবর আলী, বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানীর অভিযোগ করেছেন সিলেট-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করবে আমার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডতো দূরে থাক বরং এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।

ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রচারণার প্রথম দিনে সন্ধ্যায় ফুলবাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফয়সলের উদ্যোগে ধানের শীষের সমর্থনে উঠান বৈঠক ছিল। কিন্তু দুপুরে তাকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এছাড়া উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিনকে স্থানীয় রাউকার বাজার ফাঁড়ি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। বুধবারীবাজার ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। স্থানীয় প্রশাসনের এমন ন্যাক্কারজনক আচরণ প্রমাণ করে তফসীল ঘোষণার পরও পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নয়, আওয়ামী লীগের অধীনে। প্রশাসনের আচরণের পরিবর্তন হয়নি। বিরোধী মত ও দল দমানোতে সরকার বরাবর পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে আসছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ রাত বিরাতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে তল্লাশীর নামে হয়রানী করছে। অনেককে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে যেতে শাসিয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে পুলিশকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতির দায় স্থানীয় প্রশাসনকে নিতে হবে। ধানের শীষের প্রার্থীর অভিযোগ, এখন আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী নয়, পুলিশ প্রশাসন। নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষকে ভোটের অধিকার রক্ষায় আগামি ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বহুল প্রতীক্ষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ৬টি আসনে মোট ৪০ জন প্রার্থী শেষ অবধি ভোটের মাঠে রয়েছেন। এই ৪০ প্রার্থীকে ইতোমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ জন প্রার্থী সিলেট-১ আসনে। আর সবচেয়ে কমসংখ্যক মাত্র ৪ জন প্রার্থী সিলেট-৬ আসনে।

সিলেট জেলা নির্বাচন অফিস থেকে দেয়া তথ্যানুযায়ী বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা হচ্ছেন সিলেট-১ আসনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির (ধানের শীষ), সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা (ধানের শীষ), সিলেট-৩ আসনে শফি আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ), সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম, সিলেট-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উবায়দুল্লাহ ফারুক (ধানের শীষ) ও সিলেট-৬ আসনে বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ)।

এদের সকলেই নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগকালে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। ধানের শীষের নেতাকর্মীদের মামলা ছাড়াই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের নেতাকর্মীরা রাতে ঘরে ঘুমোতে পারছেন না। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা শুরু থেকেই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাদের দাবি বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তারা অকারণেই এমন অভিযোগ তুলছেন। সিলেটের সবকটি এলাকাতে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে দাবি করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন