শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নৌকা-ধানের শীষ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রতীক বরাদ্দের পর দিনাজপুরে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। গোছানো সংসারের মতই প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পোস্টারে শহর গ্রাম ছেয়ে গেছে। সেই তুলনায় বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের পোস্টার এখনও চোখে পড়ছে না। কারণ হিসেবে তাদের মন্তব্য হলো ঐক্যফ্রন্টের চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কিছুটা ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় তারা পোস্টার লিফলেট ছাপাতে পারেনি। আবার শেষ মুহূর্তের মনোনয়নে প্রার্থিতা পরিবর্তন হওয়ায় নেতা-কর্মীরাও মাঠমুখী হতে পারেনি। এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও আওয়ামী প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

একইভাবে নির্বাচন যে একতরফা হতে পারবে না এবারে সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আর যাই হোক আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, এবার দিনাজপুর জেলায় ৬টি সংসদীয় আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৪ জন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রতিদ্ব›িদ্বতায় দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক প্রদান করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. মাহমুদুল আলম জানান, সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে প্রার্থী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রতীক প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব প্রতীক পেয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।

দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ-কাহারোল)-এ ৬ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের শরীক প্রার্থীর মধ্যে। নৌকা প্রতীক পাওয়া বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জনশীল গোপাল বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা একতাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। মনোনয়নের আগে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ করে বিরোধিতা করায় হাইকমান্ডকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকপ্রাপ্ত পৌর মেয়র জামায়াত নেতা মোহাম্মদ হানিফ অনেকটাই ভাল অবস্থানে রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে কিছুটা হলেও ভাগ বসাবে জাতায় পাটির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকা মো. শাহিনুর ইসলাম। এছাড়া মো. আরিফুল ইসলাম (হুকা), ইসলামী আন্দোলন থেকে মো. আশরাফুল আলম (হাতপাখা) ও মুসলিম লীগ থেকে সৈয়দ মনজুর-উল করিম (হারিকেন) প্রার্থী হয়েছেন।

দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) এই আসনে ৫ জন প্রার্থী চ‚ড়ান্ত ভোটযুদ্ধে থাকবেন। নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি থেকে মো. সাদিক রিয়াজ। ভোটযুদ্ধে থাকা তরুণ নেতা সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক ভরসা করছে ভোটারদের ওপর। এছাড়া যারা ভোটযুদ্ধে আছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টি থেকে মো. জুলফিকার হোসেন (লাঙ্গল), মুসলিম লীগ থেকে মো. এরশাদ হোসেন (হারিকেন) ও ইসলামী আন্দোলন থেকে মো. হাবিবুর রহমান (হাতপাখা)।

দিনাজপুর-৩ (সদর) প্রেস্টিটিয়াআসন হিসাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম ইকবালুর রহিম এর নৌকা প্রতীকের ঘর যেন গোছানো রয়েছে। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসাবে একেবারে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন নেতা-কর্মীদের হতাশা সৃষ্টি করেছে। পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ধানের শীষ প্রতীক পেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও যেতেই পারেনি। অপরদিকে আওয়ামী প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনে এখানেও বিএনপি’র ভরসা ভোটাররাই। অন্যান্য প্রার্থীরা হচ্ছে বিকল্প ধারার মো. আশরাফুল ইসলাম (কুলা), ইসলামী আন্দোলনের মো. খায়রুজ্জামান (হাতপাখা), কমিউনিষ্ট পাটির মো. বদিউজ্জামান (কাস্তে) ও মুসলিম লীগের সৈয়দ মাহমুদ-উল করিম (হারিকেন)।

দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) এ ৭ জন প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্ধিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (নৌকা), ও বিএনপি’র মো. আখতারুজ্জামান মিয়া (ধানের শীষ), জামায়াতের ভোট ব্যাংকের এলাকা হিসেবে পরিচিত এই আসনে বিএনপি প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় অনেকটা এগিয়ে রেখেছে বিএনপিকে। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মো. মোনাজাত চৌধুরী (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন থেকে মো. মিজানুর রহমান (হাতপাখা), মুসলিম লীগ থেকে মো. মোজাফ্ফর হোসেন (হারিকেন), কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে মো. রেয়াজুল ইসলাম (কাস্তে) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মো. সাজেদুল আলম চৌধুরী (কোদাল)।

দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী)-এ ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (নৌকা) এর দীর্ঘ ৬ বারের নির্বাচনী জয়ে ভাটা সৃষ্টি হতে পারে। আভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘুরে ফিরে একই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া ও কয়লা কেলেংকারী’র ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী এজেডএম রেজওয়ানুল হক (ধানের শীষ) সদালাপী ও রাজনৈতিক অংগনে সুপরিচিত হওয়ায় এবার তার জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অপরদিক আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। যা প্রকাশ্যমান। অপরদিকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী তরুণ নেতা মো. সোলায়মান সামী (লাঙ্গল) অনেক আগে থেকেই প্রচার প্রচারণায় থাকায় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে বলে স্থানীয় মানুষদের মতামত পাওয়া গেছে। এছাড়া মাঠে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন থেকে মো. মতিউর রহমান (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মো. শওকত আলী (আম) ও মুসলিম লীগ থেকে মো. শফিকুল ইসলাম (হারিকেন)।

দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর) এ আসনে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থিত জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে। পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতায় ধানের শীষ প্রার্থী আনোয়ারূল ইসলাম এগিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শিবলী সাদিক (নৌকা) আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী প্রার্থী তরুণ নেতা শিবলি সাদিককে অনেকটা ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে এবং হবে। এছাড়া অন্যান্য যারা রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন থেকে মো. নুর আলম সিদ্দিক (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে শাহিদা খাতুন (আম) মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন