সেনা বাহিনী মোতায়েনের অপেক্ষায় আছে কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ।মামলা-হামলা, গ্রেফতার, হুমকি-ধমকির কারণে এখনো পুরোপুরিভাবে মাঠে নামতে পারেনি ঐক্যফ্রন্টের এসব প্রার্থী। তাদের ধারনা মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে নির্বানের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে সে সময় সরকার দলীয় প্রার্থীরা তাদের উপর হামলা করতে পারবে না।অপরদিকে আ’লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীরা নির্বিঘ্নেœ প্রচারণা চালালেও আমরা মাঠে নামলেই শুরু হয় হামলা ও মামলা। নির্বাচনী এলাকাতে আমাদের কর্মীরা পোস্টার ও ব্যানার টাঙাতে গেলেই তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। ছিড়ে ও পুড়ে ফেলাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার। ভাংচুর করা হচ্ছে প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইক ও নির্বাচনী অফিস। তবে ব্যতিক্রম সংসদীয় এলাকা কুমিল্লা-৬ (সদর) ও কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসন।
এ বিষয়ে গতকাল কথা হয়-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, জাকারিয়া তাহের সুমন, অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুছসহ একাধিক প্রার্থীর সাথে। কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আমি আজ পর্যন্ত মাঠে নামতে পারিনি। সরকার দলীয় প্রার্থী তাজুল ইসলাম তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমার উপর একাধিক বার হামলা করেছে। রাতে ছাত্র-যুবলীগের ক্যাডাররা আমার কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং বিনা কারণে আমার কর্মীদেরকে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। একই অভিযোগ করলেন বরুড়া আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাকারিয়া তাহের সুমন। তিনি বলেন, আমরা কোথাও প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে গেলে সেখানেই সরকার দলের লোকজন আমাদের উপর হামলা করছে। ভাংচুর করা হচ্ছে আমার প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইক। রাতের আঁধারে পোস্টার ব্যানার পুড়ে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো নির্বাচনী এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসকল বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। বুড়িচং আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুছ জানান, পুরো নির্বাচনী এলাকায় সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী মহড়া দিচ্ছে। কোথাও আমার কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হলে সেখানে হামলা করা হচ্ছে। তাদের অত্যাচারে আমরা নির্বাচনী মাঠে নামতে পারছি না। কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্টের সাথে ফোনালাপের বিষয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দাউদকান্দি থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুমোদন না পাওয়ায় গতকাল সোমবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযোগটি এফআইআর ভুক্ত হয়নি। ফলে তিনিও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যদি ও ড. মোশারফ হোসেন দাবি করেছেন-তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি বানোয়াট। যা সংবিধানের পরিপন্থি। শুক্রবার মুরাদনগর সংসদীয় আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মজিবুর রহমানের নির্বাচনীয় প্রচারনায় হামলা চালিয়েছে সরকার দলের নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা-১০ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বর্তমানে জেলে থেকেই নির্বাচন করছেন। তার হয়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গফুর ভুঁইয়া মাঠে নামার চেষ্টা করলেও শনিবার একটি মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরআগে ওই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোবাশ্বেরকে ঢাকায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ফলে এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করার মতো কোন নেতা রইল না। তবে ব্যতিক্রম কুমিল্লা-৬ সদর সংসদীয় আসনটি। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন রাতে আ’লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত এখানে আর কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনী এলাকা থেকে সরকারদলীয় প্রার্থী আ ক ম বাহার ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিনের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। প্রচার কাজের সময় দুই প্রার্থীর দেখা হয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকে কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনটি নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল। কারণ এখানে রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থী রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক এমপি ডাঃ তাহের। প্রতীক বরাদ্দের দিন বিকেলে হাইস্কুল মাঠে নির্বাচনী সমাবেশের মাধ্যমে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তার নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এখনো মাঠে নামতে পারেনি ডাঃ তাহের ও তার কর্মী-সমর্থকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখানে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন