রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইসিকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায় মানুষ

মোহাম্মদ আবু নোমান | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সংবিধান অনুসারে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ। শান্তিপ্রিয় সর্বসাধারণ ইসির নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতা ও রণকৌশল দেখতে চায়। ব্যর্থ, অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায় না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী সব দলই এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আনন্দের। কিন্তু এখনো সব ব্যাপারে পুরোপুরি নিঃসন্দেহ ও নিরুদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এখনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও সাধারণ ভোটারদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা নিয়ে বিরাজমান দ্বিধাদ্ব›দ্ব কাটেনি। মনে রাখতে হবে, ইসি তথা রাজনীতিকদের কোনো অবিবেচক সিদ্ধান্ত বা ভুলের কারণে যদি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে, নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে যায়, তাহলে দেশ অগণতান্ত্রিক অপশক্তির কবলে পড়তে পারে, নেমে আসতে পারে ভয়ংকর বিপর্যয়।
বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো কিছুদিন আগেও ঘোষণা দিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের আস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এ শর্তও ছিল। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নই আসে না- এটিও তারা বলেছিল। নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে বিএনপির যে দাবিদাওয়া ছিল, সরকার বা নির্বাচন কমিশন কেউ তা পূরণ করেনি। কোনো দাবি না মানা সত্তে¡ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকে বিএনপিসহ মহাজোটের বা সরকারের বাইরের সব দলের একধরনের পরাজয় হিসেবে দেখা ভুল হবে। খালেদা জিয়া জেলে, পুত্র নির্বাসনে। হাজার হাজার মামলায় দলটির নেতাকর্মীরা কেউ আটক, পলাতক বা দৌড়ের ওপর। এমতাবস্থায় অবশিষ্ট কর্মীদের ভোটের লড়াইয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার জেদ থাকাই স্বাভাবিক। এছাড়াও নির্বাচন নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের নানা কৌশল থাকবে। কিন্তু এখন থেকে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ রিটার্নিং, প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, এসব নিয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থার বিষয়ে দিক নির্দেশনা জরুরি। একমুখী প্ল্যানিং ও অ্যারেঞ্জমেন্টের নামে নির্বাচনকে যদি বাধ্যবাধকতার আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয় তাহলে হয়তো সংবিধান রক্ষা হবে, নিয়ম রক্ষা হবে, ক্ষমতা রক্ষা হবে, কিন্তু গণতন্ত্র কি রক্ষা হবে? জনগণের ভোট দেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার কি রক্ষা হবে? নির্বাচন হয়তো শুধু অংশগ্রহণমূলক হবে, অবাধ হবে কি? এসব প্রশ্নে সর্বসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
দেশের প্রায় সব জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহিংসতার লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দল। এসব হামলার পাশাপাশি বাড়ছে হুমকি ও উস্কানির ঘটনা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরেও এসব হুমকির বিবরণ ছাপা হচ্ছে। বিরোধীদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকলে তারা যদি আত্মরক্ষার জন্যও তা প্রতিরোধের চেষ্টা করে, তাহলে যে রক্তপাত বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। দেশবাসী আর ধ্বংসাত্মক আন্দোলন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য বা অগণতান্ত্রিক শাসন দেখতে চায় না।
বাঙালি হুজুগে জাতি! আমাদের দেশের মানুষ মার্কা দেখে ভোট দেয়। লোক মুখে আছে- হুজুগ উঠলে কলাগাছকেও জেতায়। এটা ঠিক নয়। সর্বসাধারণকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাল দিয়ে হুজুগে না মেতে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। শুধু মার্কা নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা, আচরণ ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই ভোট দিতে হবে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সুশীল ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা রাখা জরুরি নয়। আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর কোনো দেশে এমন পরিবারতন্ত্র নেই। পরিবারতন্ত্র ছাড়া আমাদের দেশে দলের অস্তিত্ব চিন্তা করা মুশকিল। গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলে যারা গলা ফাঁটান, অথচ তাদের দলে গণতন্ত্র থাকবে না এটা কি হতে পারে? সারাবছর জনগণের সুখে-দুঃখে, বিপদ-আপদে যাদের খবর থাকে না, তারা যেন এখন পলিটিক্স পাগল হয়ে গেছেন! বিনোদন তারকা, সংগীতশিল্পী, খেলোয়াড়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ছাত্র, উকিল, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, চাকুরীজীবী, শিল্পপতি, বেকার এখন সবাই নেতা হতে চান, এমপি হতে চান! আর সব খানেই দলের রঙে বিভাজন। চরিত্র-আদর্শের বাইরে ক্ষমতায় যেতে দলতন্ত্র, ক্ষমতায় গেলে দলকানা পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কী?
এমপি নির্বাচিত হওয়া কোনো ব্যবসা বা মতলব হাসিল নয়, যাতে শত কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। যারা টাকা খাটাবে, নির্বাচিত হলে সেই টাকা তারা বহুগুণে তুলে নেবে। যাদের কাছে মতলব হাসিলটাই মুখ্য, মতাদর্শ তুচ্ছ; তাদের বর্জন করতে হবে। যেকোনো নিয়ম ও আইন মানতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। যারা জনপ্রতিনিধি হবেন, সংসদে জনগণ ও দেশ নিয়ে কথা বলবেন তারা যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তাহলে নির্বাচনে জয় বা পরাজয়ের পরও তারা আইন লঙ্ঘন করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। পরবর্তীতেও সব ক্ষেত্রে তারা বিধি লঙ্ঘন করবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, অশান্তি সৃষ্টি হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীরা দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনক। ভোটারদের এসব প্রার্থীদের বয়কট করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা যা-যা বলবে সে কথা শুনে জনগণকে নাচলে চলবে না। রাজনীতিকরা চাইলেও যেন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। মাদক সম্রাট, দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতাদের জনগণ ভোট দেবে না। দলগতভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে জ্ঞানী-গুণী, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচিত হতে পারেন সেব্যাপারে জনগণকেই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। যাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ আছে, যারা মানুষের জন্য কাজ করবে এবং মানবিক হবে তারাই যেন সরকারে আসতে পারে সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাবতে হবে, রাজনীতি হবে জনগণের জন্য; ক্ষমতা, মোহ বা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নয়। এভাবে জনগণ সচেতন হলে রাজনীতিকরাও ইতিবাচক রাজনীতির পথে ফিরে আসতে বাধ্য হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, জনগণ এ রাষ্ট্রটির মালিক। ক্ষমতাসীন দল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আরও দশবার সরকার গড়লেও কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। নির্বাচন-প্রক্রিয়ার একাধিক ধাপ এরই মধ্যে পার হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সব রাজনৈতিক দল ও জোট। সুতরাং বর্তমান পর্যায়ে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে আশা করা যায়, কিন্তু অবাধ হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন? অন্যায় যে করে, অন্যায়ের জায়গা থেকে অন্যায়কে ন্যায়ের পাল্লা দিয়ে মাপাটা অনেক কঠিন। কারণ অন্যায়কারীর কাছে অন্যায়টা বৈধ বলেই বিবেচিত হয়। নির্বাচনকালে অপরিবর্তিত দলীয় সরকার; বহাল থাকা সংসদ; দশ বছর ধরে ক্ষমতাসীন একটি দলের ছায়ায় কমিশনকে কাজ করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় ক্ষমতাহীনরা স্বাভাবিকভাবেই জিততে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তেমনি জিততে চাইবে যারা ক্ষমতায় নেই। আজ্ঞাবহ কোনো কর্মকর্তা যেন অন্য মেকানিজম প্রয়োগ করতে না পারে। নির্বাচনী উত্তেজনা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। একটি বিষয় সরকার ও বিরোধী দলকে বিবেচনায় রাখতে হবে। দুই পক্ষ যদি মরিয়া হয়ে ওঠে এবং অপপ্রচার ও সংঘাত মাত্রা ছাড়ায়, তাহলে বড় রকমের আশঙ্কা থেকেই যায়।
ক্ষমতাসীন থেকে নির্বাচনে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন তাদের লক্ষ্য হবে অতিরিক্ত সুবিধা নেয়া এবং ক্ষমতাহীনদের নাজুক অবস্থায় রাখা। এই লক্ষ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী পক্ষগুলোর জন্য সমসুবিধা ও লেভেল প্লেয়িং নিশ্চিত হওয়ার প্রতিবন্ধক। ইসিকে সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা, ইচ্ছা ও প্রমাণ দেখাতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা ভেবে থাকেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তাদের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হবেন, জ্বালাও-পোড়াও হবে, ঘরছাড়া হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির আশঙ্কা হয়, তারা ক্ষমতায় যেতে না পারলে দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনকে বুঝতে হবে, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করায় স্থানীয় প্রভাববলয় সক্রিয় থাকবে। তীব্র আতঙ্ক ও চাপের মুখে থাকবেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সব ভোটকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরকারি দলের প্রার্থীর পাশাপাশি বিরোধী দলের কোনো কোনো প্রার্থীও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পেশিশক্তির আশ্রয় নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মীদের তৎপরতা যত বেশি হবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে। প্রকৃতপক্ষে পর্যবেক্ষকরা হতে পারেন কমিশনের সহায়ক শক্তি। পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বপালনে স্বাধীনতা কামনা; কোনো বড় চাওয়া নয়। এতে লাভবান হতো নির্বাচন কমিশনই। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, স্বাধীন গণমাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বিচার বিভাগীয় টিম, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের যথাযথ ভূমিকা পালন বাধাগ্রস্ত হলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে অকারণ বা তুচ্ছ কারণে মামলা, গ্রেপ্তার ও এলাকা ছাড়া করে থাকে। অথচ একই কর্মকান্ড ক্ষমতাসীনরা করলে মামলা নেয়া হয় না। সেনাবাহিনীর প্রতীকী ব্যবহার বা প্রতীকী উপস্থিতি কাম্য নয়। জনগণ সেনাবাহিনীর কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চাই।
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের অবাধ ও সুষম অংশগ্রহণ ও পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে। মামলা, ঢালাও গ্রেপ্তার আর তল্লাশির আতঙ্কে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী-কর্মীদের এলাকা ছাড়া করার পর কীভাবে তাদের সমর্থকেরা বিশ্বাস করতে পারবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? নির্বাচন কমিশনকে শক্ত অবস্থানে থেকে সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সহিংসতামুক্ত, পেশিচর্চার প্রবণতামুক্ত, সন্দেহহীন একটি নির্বাচন জাতি আশা করে। নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকায় সৎ ও যোগ্য মানুষ নির্বাচিত হয়ে আসবে, এটাই শান্তিপ্রিয় সর্বসাধারণের আশা।
এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনের জন্য আবশ্যিক শর্ত, সবার জন্য মাঠ সমতল করা। নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকেই কঠোর কর্মপরিকল্পনা করে, সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণ পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু নির্বাচন কমিশনেরই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে যা যা করণীয় তাই করতে হবে। এরকম যেন মনে না হয়, তার হাত-পা ‘অন্য কোথাও বা অন্য কোনোখানে’ বাঁধা রয়েছে। ইতিহাসেরও ইতিহাস আছে, যুক্তির পাল্টা যুক্তি থাকে, কথার পিঠে কথা থাকে, কিন্তু সত্যের বিকল্প নেই! সত্য-মিথ্যা অক্ষরজ্ঞানহীনও বুঝে থাকে। সার্থক নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন