শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রচারণা

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কিছুদিন আগেও ভোটারদের আকর্ষণে দ্বারে দ্বারে ঘোরা, পোস্টার-ব্যানার, মিছিল-স্লোগান, মাইকে প্রচারণা ও সভা-সমাবেশ এই ছিল নির্বাচনী প্রচারণার স্বাভাবিক কৌশল। যদিও সময়ের পরিবর্তনে এখন অনেক নতুন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ছোয়ায় অনলাইনের কল্যাণে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রচার প্রচারণাতেও। নির্বাচনী মিছিল-পথসভা, উঠান বৈঠকে মধ্যবয়সী ও প্রবীণ নাগরিকরা উপস্থিত থাকলেও দেখা মেলেনা তরুণ-তরুণীদের। তাদের কাছে এখন আর রাজপথে গলি বন্ধ রেখে মানুষকে কষ্ট প্রদান করে রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা প্রচার প্রচারণা খুব বেশি কার্যকরী পন্থা না। তরুণ-তরুণীদের কাছে পৌছানোর জন্য এখন সবচেয়ে সময়োপযোগী মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন বা ডিজিটাল মিডিয়া।

তরুণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিরাচরিত প্রচারণার পরিবর্তে তাদের কাছে এখন সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক মাধ্যমগুলো। অনলাইন দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম এবং ফেসবুকেই তাদের সার্বক্ষণিক চোখ থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা এই মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন সব খবর। ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। কিংবা অন্য কেউ জানলে তাদের মাধ্যমেই জেনে যাচ্ছেন তারা। কেবল সত্য খবরই যে তারা অনলাইন মাধ্যমে পাচ্ছেন তা নয়, বরং অনেক ভূয়া ও মিথ্যা খবরও অনলাইন জগতে অনেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে ফেসবুকে পাওয়া সংবাদ, ভিডিওসহ সবকিছুই তরুণরা গ্রহণ করেন না, যাচাই-বাছাই করে তবেই সেগুলো তারা বিশ্বাস করেন।

প্রার্থীরাও এবার তাই তরুণদের আকৃষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছেন এই মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা এখন আর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে না গেলেও ঠিকই তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রার্থীদের বার্তা। খুব দ্রুত এবং কম খরচে সোশ্যাল মিডিয়া- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব কিংবা ব্লগের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্যকে পৌঁছে দিচ্ছে প্রার্থীরা। ভোটাররাও যা ঘরে বসেই দেখতে পাচ্ছেন। অনলাইন যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম থাকলেও প্রার্থীদের প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক। বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও ভোটের মাঠের প্রার্থীরা সরব রয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায়। এসব প্রচারণায় অংশ নেওয়াদের বেশিরভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। প্রার্থীদের পক্ষে তরুণ-তরুণীরা প্রচারণা চালানোয় ভোটাররাও আকৃষ্ট হয়ে ফেসবুক পেজে চোখ রাখছেন কখন, কোথায়, কোন প্রার্থী কি করছেন। একই সঙ্গে প্রার্থীদের উন্নয়নের চিত্র ও প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই মাধ্যম বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও কানাডাভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই কোটি। সংখ্যার দিক দিয়ে যা পৃথিবীর ফেসবুক ব্যবহারকারী শহরের মধ্যে দ্বিতীয়।

সূত্র মতে, এবারের নির্বাচনে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনে প্রায় দেড় শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। অধিকাংশ আসনেই প্রার্থীদের দেখা পাচ্ছেন না ভোটাররা। মিছিল- স্লোগান, মাইকে প্রচারণা ও সভা-সমাবেশতো নেই বললেই চলে। কিন্তু অধিকাংশ প্রার্থীই সরব রয়েছেন অনলাইনে। প্রার্থী নিজে ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ভোটার টানতে চালাচ্ছেন নিজ দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা। আবার বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অনেক প্রার্থীর এই প্রচারণার দায়িত্ব নিয়েছেন অনেক আইটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর উন্নয়নের চিত্র, এলাকার নির্বাচনী ইশতেহারসহ ভোট চাওয়ার কাজটি করছেন তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রার্থীদের বার্তা বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিচ্ছেন বা ‘বুস্ট’ও করছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে এমন পেজের বাইরে প্রার্থীদেরও নিজস্ব ফেসবুক পেজ দেখা গেছে। যেখানে প্রার্থীরা তাদের বিভিন্ন এলাকায় করা নির্বাচনী গণসংযোগ, মতবিনিময়, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিসহ তথ্য দিচ্ছেন।
অনলাইনের বিভিন্ন পেজ খুজে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব বড় দলেরই ফেসবুক পেজ আছে। এসব পেজে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ‘নৌকায় ভোট দিন’, ‘ধানের শীষে ভোট দিন-এমন নামের একাধিক ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। এসব পেজে বিভিন্ন ভিডিও বার্তাও, ভোট চেয়ে বিভিন্ন শিল্পীদের গাওয়া নির্বাচনী গান দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের।

আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-১২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাঁর ব্যক্তিগত একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। যেখানে এ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় করা তাঁর নির্বাচনী গণসংযোগ, মতবিনিময়, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিসহ তথ্য দেওয়া আছে। একই আসনে কোদাল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী জোনায়েদ সাকি। সাকির নির্বাচনী প্রচারণায় ‘গণসংহতি আন্দোলন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে চালানো হচ্ছে প্রচারণা। এখানে গণসংযোগের স্থির চিত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও বার্তাও তুলে ধরা হচ্ছে। একইভাবে ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালাম তাঁর ফেসবুক পেজে নির্বাচনী কর্মকান্ড ও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। এদিকে অনলাইনের পাশাপাশি মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও প্রার্থীরা ভোট চাচ্ছেন। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তরুণ ভোটার তওসিফ আহমেদ বলেন, অনলাইনে প্রার্থীদের প্রচারণা অত্যন্ত ভালো চিন্তা। এর মাধ্যমে কর্মীদের দিনভর মিছিল সভা-সমাবেশে যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই প্রচারণার কাজ করতে পারছে কর্মীরা। এর মাধ্যমে সময় ও অর্থ ব্যয় কমার পাশাপাশি রাজধানীতে যানজটসহ অযাচিত ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। তবে তওসিফের মতে, এই প্রচার যুক্তিসংগত ও তথ্যবহুল হওয়া উচিত।
একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে প্রচারণার কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়া শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ। তিনি জানান, অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ধরনের ঝুট-ঝামেলা ছাড়া, কম খরচে ভোটারদের কাছে পৌঁছানো যায়। দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেয়েও এটি সহজ। তাই প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীরা অনলাইন বিশেষ করে ফেসবুক প্রচারণায় জোর দিচ্ছেন। এছাড়াও ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ প্রচারণা কার্যক্রমে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তরুণ-তরুনীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শাকিল।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্নতা আসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ, এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। ব্যবহারকারী বাড়ায় নির্বাচনে অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন