শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

উত্তপ্ত খুলনার মাঠ

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সেনাবাহিনী মাঠে থাকা সত্তে¡ও গত দু’তিন দিনে যেন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খুলনার নির্বাচনীর মাঠ। আসন্ন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য সারা দেশের ন্যায় খুলনায় মোতায়ন করা হয় সেনাবাহিনী। নির্বাচনের মাঠে কোনঠাসা, হামলা-মামলার শিকার বিএনপি প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় ছিল সেনাবাহিনীর মোতায়েনের। কিন্তু সেনাবাহিনী নামার পরও তারা কোন আশার আলো দেখছে না বরং হামলা মামলা গ্রেফতার যেন বেড়েই চলেছে। 

ভোটের দিন যতই কাছে আসছে ততই যেন খুলনার নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। জেলা প্রশাসককে হুমকি দিয়ে চিঠি প্রদান, ঐক্যফ্রন্টের দুইজন প্রার্থীর গণসংযোগে কর্মীদের ওপর হামলা। নারীকর্মীদের মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপরদিকে পুলিশের হয়রানি ও গ্রেফতার সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। যাতে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে।
ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে আওয়ামী ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। গত সোমবার বিকেলে নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের বেলায়েত হোসেন সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় সাবেক মহিলা কাউন্সিলর হাসনা হেনা, রোকেয়া ফারুকসহ ৮/১০ জন আহত হন। ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলেন নির্বিকার। মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ গতকাল এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বকুলের কর্মীদের ওপর হামলা খুলনা-৩ আসনের রকিবুল ইসলাম বকুলের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। খালিশপুরে হামলায় ১০-১৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংসদ সদস্য প্রার্থী বকুল। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর খালিশপুর এলাকায় বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের কর্মীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনের বিএনপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করার সময় জোহরের নামায আদায় করতে আল আরাবিয়া মসজিদে প্রবেশ করেন। এ সময় তার প্রচার কর্মীরা মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ আওয়ামী লীগের ৫০-৬০ জনের একটি দল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বিএনপি কর্মী মিলন, রবিউল ইসলাম খান, হাসান মাহমুদ রুবেল, দোলন, এনামুল হোসেন, পারভেজ, ডা. কাজী আবু তালহা, ডা. শওকত তাওহীদসহ ১০-১৫ জন আহত হয়।
পুলিশ-ডিবি ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করছে বলে দাবি করেছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ায় জনগণের মনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে নির্বাচনকালীন সময়ের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-২ আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
পুলিশ ও ডিবি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতানোর মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ধানের শীষের কর্মীদের গণ গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে ভাঙচুর-তান্ডব চালানো, হুমকি ভয়ভীতি প্রদান, গায়েবি মামলায় তাড়াহুড়া করে চার্জশিট দিয়ে শত শত নেতাকর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আসা বিজিবিকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে সাথে নিয়ে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
সালাম মুর্শেদীর সংবাদ সম্মেলনে : গত সোমবার খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিএনপি জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তেরখাদা উপজেলার হাড়িখালি, ২২ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তেরখাদা উপজেলার চর কুশলাতে আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে, অফিসে রক্ষিত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর এবং আমার ছবি সম্বলিত প্যানাপ্লেক্স কুপিয়ে কেটে ফেলে। এ সময় কার্যালয়ের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং কার্যালয়ের চেয়ারগুলো ভেঙ্গে ফেলে।
খুলনা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে হুমকি : খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনকে চিঠি দিয়ে হুমকি প্রদান করা হয়েছে। গত সোমবার সকালে ডাকযোগে ওই চিঠিটি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছায়। চিঠির শেষাংশে সাধারণত প্রেরকের নাম থাকে, তবে এ চিঠিতে কারও নাম উল্লেখ নেই। হুমকি দিয়ে জেলা প্রশাসকে পাঠানো হাতে লেখা ওই চিঠির প্রথম প্যারায় লেখা রয়েছে, ‘যদি দেশকে বাঁচাতে চান, মানুষকে বাঁচাতে চান তাহলে কোন রূপ চালাকি বা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করবেন না। আর এর যদি কোন ব্যতিক্রম হয় বা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করেন, খোদার কসম করে বলছি দেশ শ্মশানে পরিণত হবে। আপনাদের কেউ বাঁচাতে পারবেন না। জনগণই আপনাদের তুলাধুনা করবে। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। দেশে কোন বেঈমান মীরজাফর থাকতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আরও একটি মুক্তিযুদ্ধ হবে, মাইন্ড ইট।’ এদিকে, গত রোববার দিনগত মধ্যরাত থেকেই খুলনায় মাঠে নেমেছে ৯ প্লাটুন সেনাবাহিনী। এর মধ্যে মহানগরে রয়েছে ২ প্লাটুন ও জেলার ৯ উপজেলায় ৭ প্লাটুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন