ভোটের মাঠে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ছয় হেভিওয়েটের মর্যাদার লড়াই চলছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এলডিপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী অলি আহমদ বীরবিক্রম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
এ ছয়জনসহ প্রবীণ রাজনীতিবিদরা মুখোমুখি নতুন মুখ প্রার্থীদের। শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা জুটবে কিনা তা নিয়ে টেনশনের শেষ নেই প্রবীণদের। নবীনরাও আছেন দুশ্চিন্তায়। হেভিওয়েটকে কিভাবে ধরাশায়ী করা যায় তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে নানা কৌশলে চলছে প্রচারণা। আসছে রোববার ভোটগ্রহণ। ঘড়ির কাঁটার সাথে দৌঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারণায় গতি আসছে। ভোটারদের কাছে ছুটছেন প্রার্থীরা।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১৫টিতেই মহাজোটের প্রার্থীরা সংসদ সদস্য। তাদের মধ্যে দুইজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী। কয়েকজন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। হেভিওয়েট এসব প্রার্থীদের প্রতিদ্ব›দ্বীদের বেশিরভাগই সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। তাদের জন্য এবারের নির্বাচন মর্যাদার লড়াই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট আবারও ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতারাও একাট্রা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ফলে লড়াইটা হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ৭০ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। একাধিকবার তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ আসনে এবার তার প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির নতুন মুখ প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। কামিল পাস এ তরুণ বিএনপি নেতা প্রথমবারের মতো ভোটের লড়াইয়ে। শেষ পর্যন্ত কে হাসেন বিজয়ের হাসি তা দেখার অপেক্ষায় ভোটারেরা।
মহাজোটের অপর হেভিওয়েট প্রার্থী বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে তার প্রতিদ্ব›দ্বী ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী একাধিকবার বিজয়ী হয়েছেন। ছোট দলের নেতা হলেও ধানের শীষ মার্কার কারণে ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা। দু’পক্ষই শরিকদের সহযোগিতায় ভোটের লড়াই জমিয়ে তুলেছেন। বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী লড়ছেন চট্টগ্রাম নগরীর দু’টি আসনে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার এম এ লতিফ। ২০০৮ এর নির্বাচনে লতিফের কাছে পরাজিত হন আমীর খসরু। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান লড়ছেন চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়লী) আসনে নৌকার ডা. আফছারুল আমীনের সাথে। ২০০৮ এর নির্বাচনে নোমানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন আফছারুল আমীন। এবারের নির্বাচন দু’জনের জন্যই মর্যাদার লড়াই।
বিএনপি জোটের শরিক এলডিপি চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম ছাতা প্রতীকে লড়ছেন চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে। তার প্রতিদ্ব›দ্বী পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাভোটে নির্বাচিত নৌকার নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ছয়বার এ আসনে বিজয়ী হন অলি আহমদ। নৌকার তরুণ প্রার্থীর কাছে প্রবীণ এ নেতা মর্যাদার লড়াইয়ে এখন মুখোমুখি। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী পাঁচবারের নির্বাচিত জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবারও প্রার্থী। এ আসনে এবার তার প্রতিদ্ব›দ্বী তিনজন।
তাদের একজন জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। লাঙ্গল প্রতীকে এ আসনে লড়ছেন তিনি। এখানে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী আপেল মার্কা নিয়ে মাঠে আছেন জামায়াতের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। এখনও পর্যন্ত মাঠের হিসাব চতুর্মুখী লড়াইয়ের ইঙ্গিত। শেষ পর্যন্ত কে জিতেন তা দেখার অপেক্ষায় ভোটারেরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন