শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

অন্যরকম লড়াই

তিন ভিআইপি আসন

মো. শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে ভোট করে চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এর মধ্যে বিএনপি দলীয় প্রয়াত হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীকে দুইবার হারিয়েছেন। আবার দলীয় কোন্দলে একবার সামান্যভোটে হেরেছেনও তার কাছে। এবার প্রবীণ এই রাজনীতিকের প্রতিদ্ব›দ্বী জাহেদ আলী’র ছেলে প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী।
আবার ঠিক উল্টো চিত্র ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ এবং ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে। এই দুই আসনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।
তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী নিজেদের পিতার কাছে পরাজিত দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান ও শরীফুল আলম। ফলে এই তিনটি সংসদীয় আসনের ভোটযুদ্ধ নিয়েই সবার দৃষ্টি। ভিআইপি ও সৌভাগ্যের এসব আসনসমূহকে ঘিরে উত্তেজনা ও কৌত‚হল রয়েছে সাধারণ মানুষের মনেও।
জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন থেকে চার বার বিজয়ী হয়ে আসনটিকে আওয়ামী লীগের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত করে তোলেন মতিয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য অবশ্য ২০০১ সালের নির্বাচনে মাত্র ২ হাজার ৫০০ ভোটে প্রয়াত হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।
২০০৮ সালে জীবনের শেষ নির্বাচনেও জাহেদ আলী মতিয়া চৌধুরীর কাছে রেকর্ড ভোটে হেরে যান। এবার পিতার হারের বদলা নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী। বৈরী পরিস্থিতিতে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়া একা একা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে হচ্ছে বলেও দাবি তার।
ইনকিলাবের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে আমার পিতা সংসদ সদস্য হয়ে রেকর্ড উন্নয়ন কর্মকান্ড উপহার দিয়েছিলেন। এই আসনে আমার পিতার একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। আমার পিতা পারেন নি বলে আমি পারবা না এই তত্তে¡ আমি বিশ্বাসী না। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হবো।’
তবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তার পক্ষে কোমরবেঁধে মাঠে রয়েছে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এই দুই উপজেলায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬ টি করে পথসভা করছেন তিনি। দেশের কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি উন্নয়নযজ্ঞে দুই উপজেলার চেহারাও বদলে দিয়েছেন মতিয়া, এমন দাবি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় মতিয়া চৌধুরী বিকল্পহীন।
তার সততা দলমত নির্বিশেষে প্রশংসিত। এই আসনে নৌকার চেয়েও ব্যক্তি মতিয়া চৌধুরীর ভোট বেশি। জনপ্রিয়তায় প্রতিদ্ব›দ্বী নবীন প্রার্থী তার সামনে টিকতে পারবে না। ভোট রাজনীতিতে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়ে এবার সংসদে যাবেন তিনি।’
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিরল কীর্তির জন্ম দিয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। কিংবদন্তি এই রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি হবার পর উপ-নির্বাচনে প্রথমবার ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জ্যেষ্ঠ ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক। মানবিক ও জনকল্যাণমূলক নানা কাজের মধ্যে দিয়ে ভোটারদের ‘আস্থা’ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
এবার তৌফিককে লড়তে হচ্ছে পিতার সঙ্গে বার বার প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে পরাজিত প্রার্থী এক সময়কার ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে। বার বার দল বদল করা ফজলুর এখন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ভোটযুদ্ধে নিজের রাজনৈতিক সহকর্মীর সন্তানকে হারাতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি এই নেতা।
যদিও তৌফিকের বিশ্বাস, নিজের পিতার সঙ্গে যিনি পারেন নি তিনি তার সঙ্গেও ভোটে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। নিজের এমন আত্মবিশ্বাসের কারণ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্টের এই সন্তান বলেন, আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পরের দিন থেকেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন এলাকার মানুষের সঙ্গে সময় দিয়েছি। হাওরের ব্যাপক উন্নয়নে অবদান রেখেছি। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি এর মূল্যায়ন পাচ্ছি। চারিদিকে নৌকার জোয়ার উঠেছে।’
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপি’র শরীফুল আলমকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন জিল্লুর রহমান। ৬ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে তার ছেড়ে দেওয়া এই আসনে সংসদ সদস্য হন ছেলে নাজমুল হাসান পাপন। এবার পাপন লড়বেন পিতার সঙ্গে হেরে যাওয়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি শরীফুল আলমের সঙ্গে। স্থানীয় কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুসা জানান, এই আসনটি নৌকার শক্ত ঘাঁটি। এখানে এবারো নৌকার জয় সুনিশ্চিত।
তবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শরীফুল আলম বলেন, এখানে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়তই হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন