আখলাক শব্দের বাংলা হচ্ছে চরিত্র। আখলাক আরবি শব্দ খুলুকুন এর বহুবচন। যার অর্থ হচ্ছে চরিত্র বা স্বভাব। ইসলামি ভাষ্যমতে আখলাক দু’প্রকার।
যথাঃ ১। আখলাকে হামিদাহ বা উত্তম চরিত্র।
২। আখলাকে যামিমা বা নিকৃষ্ট চরিত্র।
আখলাকে হামিদাহ মানবজীবনে উত্তম গুণাবলিকে বুঝায়।যেমন-ধৈর্য,সততা,সহনশীলতা, বিনয়, সমাজসেবা,দেশপ্রেম,উপকারিতা প্রভৃতি। আখেরাতের তুলনায় এ ধরা খুব ক্ষণস্থায়ী। মানুষ সামাজিক জীব, আর মানুষের সামাজিক পরিচয়টা গড়ে ওঠে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে। চরিত্র মানুষকে অনাবিল সুখের পথে পরিচালনা করে। সৎ চরিত্র ঈমানকে দৃঢ় করে আর অসৎ চরিত্র ঈমানকে ধ্বংস করে। মানব চরিত্র ভালো এবং গঠনমূলক না হলে অন্যসব সহায় সম্পদ অর্থহীন হয়ে পড়ে। মানব চরিত্রই উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতির প্রধান জীবনী শক্তি। যে জাতির চরিত্র যত দৃঢ় হবে সে জাতি তত উন্নত এবং সভ্য হবে। চরিত্রবান ব্যক্তি সদা আনন্দে থাকেন। দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করতে পারে না। কারণ তার মধ্যে অবৈধ সম্পদ উপার্জন করে উচ্চভিলাষের মন মানুষিকতা নাই। সৎ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি যা আয় করেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। আজ সমাজে বিশৃংখলা এবং অরাজকতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে যার যা আছে তাতে সন্তুষ্ট না থেকে পরধনে মত্ত হওয়া। এতে অনেক সময় এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা সৃষ্টি হয়। পরশ্রীকাতরতাও অশান্তির অন্যতম একটি কারণ। পৃথিবীর জ্ঞানী ব্যক্তিরা চরিত্রকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করায় যুগ যুগ ধরে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। তাদেরকে শত শত বছর পরও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আজ স্মরণ করছেন, করছেন অনুকরণ। এর কারণ হচ্ছে সৎ চরিত্র ধারণ করে জীবন-যাপন এবং নশ্বর ধরণীর প্রতি বিমুখতা। ধরণীর প্রতি বিমুখতা মানে এই না ঘর-সংসার ত্যাগ করে সন্যাসী/ বৈরাগি হওয়া। ছেলে- মেয়ের ভরণ-পোষণ মেটাতে যতটুকু অর্থ বিত্ত আবশ্যক তা হক্ব-হালাল ভাবে করতে শরীয়তে কোন বাধা নাই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,“ ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালো দ্বারা, তোমার সঙ্গে শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো (সুরা হা-মীম সেজদা, আয়াত নং- ৩৪)। হযরত উসামা ইবনে শারিক ( রা.) একটি হাদিসে বর্ণনা করেছেন, তিনি জিজ্ঞাসা করেন হে আল্লাহর রাসূল ( সা.), মানুষকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কোনটি? হযরত মুহম্মদ ( সা.) বলেন, উত্তম চরিত্র (মুসনাদে আবুদাউদঃ ১৩২৯)।
‘হযরত ওয়াহাব (রহ.) বলেন, মানবজীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো অসৎ চরিত্র’। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- Money is lost Nothing is lost, Health is lost Something is lost, Charecter is lost All is lost অর্থাৎ- টাকা হারিয়েছো কিছুই হারিয়ে যায়নি, স্বাস্থ হারিয়েছো তো সামান্য কিছু হারিয়েছো,চরিত্র হারিয়েছো তো সব কিছুই হারিয়েছো। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় মানবজীবনে সৎ চরিত্র কত মূল্যবান বস্তু। মানুষ যদি লোভকে সংবরণ করতে পারে তাহলে সৎ- চরিত্রবান হতে পারবে। লোভ থেকেই পাপ-পংকিলতায় নিমজ্জিত হয় মানুষ। কেউ যদি লোভে পড়ে যায় তখন সে যা ইচ্ছা তা করতে দ্বিধা করে না। লোভকে সংবরণ এবং অল্পেতুষ্ট হতে পারলে অন্যান্য গর্হিত কাজ এমনিতেই কমে যায়। কারণ তার মধ্যে সুষ্টু বিবেকবোধ দিব্যি জাগ্রত থাকে। আর বিবেকবোধ জাগ্রত থাকলে প্রতিটি কাজের ভাল-মন্দ সঠিক ভাবে পরিমাপ করতে পারবে। তাতে অনায়াসে মন্দ কাজ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
আজ চাওয়া-পাওয়ায় পেয়ে বসেছে সৃষ্ঠির শ্রেষ্ঠজীব মানুষকে। ক্ষণিকের এ জীবনকে সুখ এবং সুন্দরের পসরায় সাজাতে চরম ব্যাকুল! ঐশ্বর্য আহরণ করতে গিয়ে স্বীয় সন্তানাদির প্রতি বে-খবর। সন্তান-সন্তদি উপযুক্ত বয়সে কাদের সাথে চলছে, সময় কিভাবে ব্যয় করছে তাও বে-খবর! চাই শুধু সম্পদ আর সম্পদ। এ সম্পদ গড়তে গিয়ে কতজনের, কত মানুষের যে অধিকার খর্ব করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। সম্পদ হয়েছে ঠিক, তবে সময়ের বিবর্তনে প্রাণের সন্তানাদি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে সময় দেওয়া এবং দেখভাল করার মতো সময় যে তাদের হাতে নাই! তখন আফসোস করে কোন লাভ হবে না! ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- Time and tied wait for none অর্থাৎ- সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সমষ্টিই হচ্ছে হায়াত বা আয়ু। সুন্দর ও সাবলীল ভাবে জীবনকে পরিচালনা করতে হলে সততার বিকল্প নাই। সৎ জীবন-যাপনে বাহ্যিক দিক থেকে ঐশ্বর্য মন্ডিত এতটা না হলেও হৃদয়ের দিক থেকে প্রশান্তি অবধারিত। ন্যায় পরায়ণ মানুষরা হন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এবং সাহসী। অসৎ চরিত্র মানুষের মর্যাদাকে খেয়ে ফেলে। তারা হন ভীত! হৃদয়ে প্রশান্তির বদলে না পাওয়ার বেদনা অনলের ন্যায় সব সময় জ্বলতে থাকে। অবৈধ পন্থায় আহরণ করা সম্পদ পুরোপুরি ভোগ করা যায় না! সেই সম্পদ এক সময় অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়! যতই শিক্ষিত এবং ধন সম্পত্তির মালিক হোন না কেন যদি সৎ চরিত্রবান না হন তাহলে কাজের ক্ষেত্রে ফলাফল শূন্য। আমরা যদি একটু পেছনে তাকাই দেখতে পাব, যারা সুদ-ঘুষ, দূর্নীতি, ব্যভিচার, দূর্বলের প্রতি অত্যাচার, অশ্লীল বেহায়াপনা প্রভৃতিতে মত্ত ছিলেন তারা আজ কোথায়? কেউ ধুকে ধুকে মারা গেছেন, কেউ সংশোধন হয়েছেন, আবার কেউবা ছেলে-সন্তানের অত্যাচার- নির্যাতন সহ্য করে কাপুরুষের মতো বেঁচে আছেন। আর পরকালে তো রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর যারা চরিত্রকে ধারণ করে জীবন-যাপন করেছেন তারা ক্ষণিকের জন্য একটু কষ্ট হলেও জীবদ্দশাই সুখ এবং সম্মান পেয়েছেন। আর পরকালেতো এর প্রতিদান আছেই।
আসুন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই, সত্য ও সুন্দরকে ধারণ করি, মিথ্যা থেকে দূরে থাকি। ন্যায়-নীতি ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়তে স্ব- স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন