শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ওদের চোখেও আগামীর স্বপ্ন

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

এক সময় কয়রা থেকে কেউ শহরে গেলেই তাদের কাছেই আবদার ছিল কাজের মেয়ে নিয়ে এসো। তবে ছেলে হলেও চলবে। একজন কাজের লোক শহরবাসীর খুব দরকার। কিন্তু কয়রায় সে ধারণা পাল্টেছে। এখন গ্রামের ছেলে-মেয়ে মানেই শহরের বাসায় কাজ করতে যাওয়া কাজের লোক নয়। ওরা সবাই এখন স্কুলে যায়। চোখে আগামীর স্বপ্ন। ওরা বেড়ে উঠছে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। শত অভাব আর হতাশা থাকুক না কেন সব পরিবার এখন মনে করে তাদের সন্তান লেখাপড়া শিখে মানুষ হোক।
উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, সকাল হলেই দলবেঁধে স্কুলে যায় ছেলে-মেয়েরা। স্থানীয় প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে জমজমাট। শিক্ষক শিক্ষিকারা ব্যস্ত নানা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সামলাতে। মাদরাসা শিক্ষায়ও আলোকিত হচ্ছে এ সকল শিশুরা। উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের মিজানুর রহমান, আজিবার মোল্যা নিরপেন মুন্ডা বলেন, উপবৃত্তি চালুসহ সরকারের নানা চেষ্টায় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। আগে বাড়তি আয়ের জন্য অনেকে ছেলে-মেয়েকে কাজে পাঠাতেন। কিন্তু সেদিন বদলেছে। শিক্ষার্থী প্রতি সরকারের আর্থিক সহায়তা বেড়েছে। অভিভাবকরাও হয়েছেন সচেতন। যে কারণে কষ্ট করে হলেও তারা সন্তানদের শিক্ষিত করতে চান। পরবর্তী প্রজন্মকে তারা আর অন্ধকারে রাখতে চান না।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের বেদকাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লস্কর মাহফুজুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষও এখন শিক্ষার মর্ম অনুধাবন করতে পারেন। তারা অশিক্ষিত হলেও সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চান। তাছাড়া সরকার বিনা খরচে পড়ালেখার ব্যবস্থা করছে। তাই গ্রামেই কাজের লোক পাওয়া যায় শহুরেদের এমন ধারণা এখন সত্যিই অমূলক। গড়িয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার থান্দার বলেন, দরিদ্রতার কারণেই এক সময় এসব অঞ্চলের অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েকে স্কুলের বদলে কাজ করতে পাঠাতেন। এখন দেশে অভাবও আগের মতো নেই। আর সরকারের সহায়তাও যথেষ্ট। যে কারণে কাজের মানুষ খুঁজতে গ্রামে আসা এখন বোকামি ছাড়া কিছু নয়। মদিনাবাদ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদ সরোয়ার বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী মাসে একশো টাকা উপবৃত্তি পায়। প্রতি তিনমাস পর পর সে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া কিছু সময় স্কুলে টিফিনও দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
মঠবাড়ি গ্রামের ছালমা নামের এক ছাত্রীর অভিভাবক আঃ রহিম বলেন, গ্রামের গরিব মানুষগুলোর কাছে শিক্ষা এক সময় বিলাসিতা ছিলো। কিন্তু সরকার এখন বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সঙ্গে উপবৃত্তির মতো বিষয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাছাড়া সবাই এখন নিজের সন্তানকে যোগ্য দেখতে চায়। ৬নং কয়রা গ্রামের দিনমজুর আমজাদ হাওলাদার বলেন, সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রথম দুই মেয়েকে শহরে কাজের জন্য পাঠাই ছিলাম। তারা মূর্খই থেকে গেছে। কিন্তু আর সে ভুল করতি রাজি না। এখন বাকি তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। নিজের অনেক কষ্ট হয়, তবুও চাই ওরা পড়ালেখা শিখে মানুষ হোক। তেতুলতলার চর গ্রামের আশরাফ ও জাফর আলী তারা বলেন, দিনমজুর হলেও তাদের চার মেয়ের দু’জন কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে। দু’জন চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
৫নং কয়রা গ্রামের ফাতিমা খাতুন বলেন, অন্যের বাড়িতি দিনমজুরি কইরে মেয়ের খাবার যোগাড় করিছি। সেই খাবার খেইয়ে সে পরীক্ষা দিতে যায়। তবু তাকে অন্যের বাড়িতি কাজে পাঠাইনি। আল্লাহ তাকে মেধা দিয়ে পাঠাইছে। আমার কোনো সঞ্চয় নেই। এই মেয়েই আমার সঞ্চয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল বাশার বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার সব এলাকার ছেলে মেয়েরা যাতে লেখাপড়ার বিঘœ সৃষ্টি না হয় তার জন্য সব সময় খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ে তাদের জন্য বিনোদনের ব্যাবস্থা রয়েছে। বিগত দিনের তুলনায় এখন প্রায় অধিকাংশ ছেলে মেয়ে বিদ্যালয়ে যায় লেখাপড়া শিখতে বলে তিনি জানায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন