কুষ্টিয়ায় চলছে নদী দখলের মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরেই পদ্মা নদীর কিছু অংশ, গড়াই নদীর দু’পাড়, কালীগঙ্গা নদী, সাগরখালী ও হিসনা নদী দখল করে গড়ে উঠছে পাকা-আধাপাকা বসত বাড়ি, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নাব্য সঙ্কটও দেখা দিচ্ছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে শুষ্ক সময়ে নদীগুলো একদিকে চরাণভ‚মিতে পরিণত হয়। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয় নদী এলাকার জনমানব।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫টি নদী। এর মধ্যে পদ্মা নদী দৌলতপুর থেকে শুরু করে খোকসা উপজেলার মাঝপাড়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত। পদ্মা নদীর প্রধান শাখা গড়াই নদী ৫০ কিলোমিটার, গড়াই নদীর শাখা নদী ছেউড়িয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার, সাগরখালী নদী ভেড়ামারা থেকে ১৫ কিলোমিটার, হিসনা নদী ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত। বিস্তৃত এ সকল নদীগুলোর দু’পাড়সহ নদীর ভিতরে বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। যারাই ক্ষমতায় আসে তাদের সহযোগিতায় স্থানীয়রা এসব দখলদারিত্ব করে চলেছে।
দেশ স্বাধীনতার পর থেকে কুষ্টিয়া জেলায় শুরু হয় নদী দখলের প্রতিযোগিতা। নদী দখল হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা ও গড়াই নদীর দু’পাড়ে কুষ্টিয়া তালবাড়ি শহর সংলগ্ন রেইনউক বাঁধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, বড়বাজার ঘোড়ার ঘাট এলাকা, গড়াই নদীর প্রায় ১০০ শ’ বিঘার উপর সীমানা প্রাচীর দেয়া হচ্ছে। শশ্মান ঘাট এলাকা, মীর মশাররফ হোসেন সেতু সংলগ্ন এলাকা, কয়া বাজার ও কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। খোকসা উপজেলাতেও চলছে নদী দখলের মহোৎসব। হুমকির মধ্যে রয়েছে ‘কুমারখালী শহর রক্ষা বাঁধ।’
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনেই চলছে নদী দখল উৎসব। রেইনউক বাঁধ ও জিকে খেয়াঘাট সংলগ্ন এলকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশ পাকা ও আধাপাকা বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খেয়াঘাটের ঠিক পাশেই স্থাপনা নির্মাণের ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে বেশ কিছু নদীর জায়গা।
এদিকে বড় বাজার ঘোড়ার ঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদী দখলের চিত্র এমন যেন পৈত্রিক জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছেন দখলদাররা। ঘোড়ার ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখানকার স্থানীয় কয়েকজন জানান, এখানে একটু ঘর তোলার জায়গার জন্য তাকে গুনতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। টাকা নেওয়া ঐ বিশেষ মহলটি তাকে জমির মালিকানার কাগজও দেবে বলে জানিয়েছে।
সেতু সংলগ্ন এলাকায় নদী তীরবর্তি এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে ঘন-জনবসতি। সেই সাথে কয়া বাজার সংলগ্ন নদী দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। শহরকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত বাঁধটি দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বাঁধ। বাঁধটির দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ঘনবসতি। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বাঁধে দেদারছে বালির ব্যবসা করছে। নির্মাণ করা হয়েছে স্থায়ী দোকানও। গড়াই নদীর ভীতর মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারখালীর যদুবয়রা এলাকায় প্রায় ৫টি ভাটা। খোকসার জানিপুরে ২টি ভাটা তৈরি হয়েছে। এরা নদীর পলিসহ মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
খোকসা উপজেলার নদী দখলের চিত্রও একই। সেখানেও গড়াই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একার উদ্যোগে নদী দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতা দরকার। দখলের হাত থেকে নদীকে রক্ষা করা না গেলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, কুষ্টিয়া জেলার নদী দখলকারীদের সংখ্যা অন্যান্য জেলার চাইতে কম। বসবাস করার ফলে নদীর তেমন কোন সমস্যা হয় না। জিকে সেচ প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যারা অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের তালিকার কাজ চলছে। তালিকা শেষ হলেই অভিযান চলবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন