(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
১৩। কাফেরদের কথার উপর ধৈর্য ধারক কর, আর সূর্য উদয়ের পূর্বে স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসাসুলভ তাসবীহ পাঠ কর, এবং দিনের প্রান্ত সীমায় যেন তুমি সন্তুুষ্ট থাক। (সূরা ত্বাহা : রুকু-৮)
১৪। তোমরা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও এবং যখন সকালে উপনীত হও, এবং তাঁর প্রশংসা আকাশসমূহ এবং যমীনের সর্বত্র, এবং তৃতীয় প্রহরে এবং দ্বিপ্রহরে উপনীত হও। (সূরা রূম : রুকু-২)
১৫। তুমি সেই কাফেরদের কথায় ধৈর্য ধারণ কর এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসাসুলভ তাসবীহ পাঠ কর সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বে, এবং কিছু রাতে তাসবীহ পাঠ কর এবং অস্ত যাওয়ার পর। (সূরা ক্কাফ : রুকু-৩)
১৬। ফজরের নামাজের পূর্বে এবং ঠিক দ্বিপ্রহরে যখন গরমের কারণে পরিধেয় বসন খুলে ফেল এবং এশার নামাজের পর। (সূরা নূর : রুকু-৮)
উপরের আয়াতগুলোতে নামাজের বিভিন্ন ওয়াক্তের কথা বলা আছে। এর মাঝে কোনটির কথা বার বার এসেছে এবং কোনটির কথা বারবার আসেনি। বারবার উদ্ধৃত আয়াতগুলোকে মিলিয়ে নিলে ঠিক পাঁচ ওয়াক্তের কথাই পাওয়া যায়। যে সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) সারাজীবন নামাজ আদায় করেছেন। তাঁরপর সাহাবীগণ এবং সে সময় হতে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্বজগতের সকল মুসলমান বংশানুক্রমে আদায় করে যাচ্ছেন। এবং এগুলোর মশহুর নাম হচ্ছে ফযর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং এশা। এর মাঝে শুদুববুন, (গাদাতুত), বুকরাতান, ফজর, কাবলা, তুলুইশ, শামছু, হিনা তুছবিহুন, এর অর্থ হচ্ছে ফযরের নামাজ। আর আছিল, এশা এবং কাবলা গুরুবিশ শামছ এর অর্থ হচ্ছে আসর। আর দুলুকিশ শামছ, হিনা তুজহিরুন এর অর্থ হচ্ছে যোহর। আর তারফুন্নাহার এবং তুমনুনা এর অর্থ হচ্ছে মাগরিব। এবং মিন আনাইল্লাইলি গাছাকিল্লাইলি ও সালাতুল এশা এর অর্থ হচ্ছে এশার নামাজ। নামাজের এই পাঁচটিই ওয়াক্ত, যার মাঝে আল্লাহর স্মরণ এবং তাসবীহ ও তাহমীদের হুকুম আমাদেরকে করা হয়েছে।
নামাজের ওয়াক্তসমূহের পর্যায়ক্রমিক পরিপূর্ণতা :
ইসলামের প্রারম্ভ সম্পর্কে সকলেরই জানা আছে। কত দারিদ্র্য, নিগ্রহ অত্যাচার এবং নি:সম্বল অবস্থা হয়েছিল। এজন্য প্রাথমিক যুগে দিনের বেলা কোন নামাজ ছিল না। লোকজন রাতে এদিক-সেদিক চুপে চুপে দীর্ঘক্ষণ নামাজ আদায় করত। মক্কার প্রাথমিক সূরা মুযযাম্মিলের আয়াতসমূহে বলা হয়েছে, “হে বস্ত্রাবৃতাবস্থায় নিদ্রিত নবী! সামান্য সময় ব্যতীত সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, অর্ধরাত পর্যন্ত কিংবা এরচেয়ে কম, কিংবা এরচেয়ে কিছু বেশী, এসময়ে কুরআর ধীরে-সুস্থে পাঠ কর, আমি সত্বরই তোমার উপর একটি ভারী কথা অর্পণ করব, (অর্থাৎ শরীয়তের বিস্তারিত আহকাম অবতীর্ণ করব) অবশ্যই রাতে নামাজ আদায়ের মাঝে প্রশান্ত চিত্তের অবকাশ বেশী এবং কুরআন পাঠেরও অধিক উপযোগী। অবশ্যই তোমার দিনের বেলা অবসর বিনোদনের অবকাশ আছে।” (সূরা মুযযাম্মিল : রুকু-১)
নামাজ আদায়ের এই তরীকা তিন বছর পর্যন্ত ছিল যখন ইসলামের দাওয়াত খোলাখুলী দেয়ার সুযোগ ছিল না। কেননা, যেখানে “স্বীয় নিকটতম খান্দানের লোকজনদের হুশিয়ার কর।” (সূরা শোয়ারা : রুকু-১১)-এর দ্বারা দাওয়াত করার হুকুম এসেছিল, সে ক্ষেত্রে এই হুকুমও নাযিল হয়েছিল-এবং বিজয়ী দয়ালু সত্তার উপর ভরসা কর, যিনি তোমাকে ঐ সময় প্রত্যক্ষ করেন যখন তুমি (নামাজের জন্য) গাত্রোখান কর, এবং নামাজীদের কাছে তোমার ভ্রমণ করাকে (প্রত্যক্ষ করেন); অবশ্যই তিনি শ্রবণ করেন এবং জানেন। (সূরা শোয়ারা : রুকু-১১)
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, খোলাখুলি দাওয়াতের হুকুম লাভ করার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা:) সেই দুশমনদের মাঝে রাতে উঠে স্বয়ং নামাজ আদায় করতেন। আর মুসলমানগণ পাহারা দিত কে নামাজ পড়ছে এবং কে নিদ্রা যাচ্ছে। এবং কাকে নামাজের জন্য জাগ্রত করতে হবে। এই ভীতিপূর্ণ অবস্থায় তাঁর রাতে একাকী এই ফরজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য বের হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস ও ভরসা ছিল যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর হেফাজত করবেন। তার দেখা-শোনা করবেন। এরপর যখন ক্রমশ: নিরাপত্তার পথ উন্মুক্ত হল এবং প্রকাশ্যে দাওয়াত করার সময় আসল, তখন আস্তে আস্তে ইসলামের কদম পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর হলো এবং রাতের দীর্ঘ নামাজ (তাহাজ্জুদ) ছাড়া রাতের প্রথমাংশ (এশা) এবং তারকা ঝলমল করার সময় এক ওয়াক্তের নামাজ (ফযর) সংযোজিত হল। এরশাদ হচ্ছে, “এবং স্বীয় প্রতিপালকের নির্দেশের এন্তেজার কর, নিশ্চয় তুমি আমার চোখের সামনে রয়েছ এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ পাঠ কর, যখন তুমি (রাতে তাহাজ্জুদের সময়) গাত্রোখান কর এবং কিছু রাতের অংশে তাঁর তাসবীহ পাঠ কর, এবং তারকা ডুবে যাওয়ার সময়।” (সূরা তুর: রুকু-২)
এই আয়াত সূরা তুরের শেষাংশে আছে। সূরা তুরের সম্পর্কে জানা আছে, যে তা’ মক্কায় নাযিল হয়েছিল। (সহীহ বুখারী) : তফসীরে সূরা তুর, যুবায়ের বিন মুতয়িম-এর ঘটনা। এবং সম্ভবত : সে সময় কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে কষ্ট দেয়া শুরু করেছিল। কেননা, এই সূরার এই আয়াতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দু:খ-কষ্ট এবং এগুলোর উপর ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর নির্দেশের এন্তেজার করার হুকুম এবং তাঁর সকল প্রকার হেফাযতের খোশ-খবরী রয়েছে। এখনো পর্যন্ত এই রাতের নামাজসমূহে পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। সূরা দাহার-এ যা জমহুর ওলামাদের মতে মক্কী সূরা এবং সম্ভবত: সূরা তুরের পরে নাযিল হয়েছে, একই অর্থবোধক অপর একটি আয়াত আছে, যাতে এই সময়গুলো ছাড়াও দিনের শেষভাগে নির্দিষ্ট একটি নামাজ আসরের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, “তুমি স্বীয় প্রতিপালকের ফায়সালার এন্তেজার কর এবং সেই বিরুদ্ধবাদীদের মাঝে কোনও গোনাহগার বা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ লোকের কথা মেনো না। এবং সকালে ও তৃতীয় প্রহরে স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং রাতের ক্লিয়দংশে তাঁকে সেজদা কর এবং দীর্ঘরাত পর্যন্ত তাঁর তাসবীহ পাঠ কর।: (সূরা দাহার : রুকু-২)
এখানে রাতের দীর্ঘসময় পর্যন্ত পাঠ করার নামাজ তাহাজ্জুদ ছাড়া তিনটি ওয়াক্তের কথা সুস্পষ্ট পাওয়া যায়। অর্থাৎ সকাল, দিনের শেষে এবং রাতের প্রথম যে নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু আছীল শব্দের মাঝে যোহর এবং আসর এবং মিনাল্লাইল শব্দ দ্বারা মাগরের এবং এশার মাঝে পৃথকীকরণ হয় না। কেননা, নামাজ ছিল তিন ওয়াক্ত। (১) ফজরের (২) তৃতীয় প্রহরের এবং (৩) রাতের। তখনো পর্যন্ত রাতের এই দু’ওয়াক্তের নামাজ রাতে দেরী করে পাঠ করার হুকুম ছিল। যেমন উপরোক্ত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট বুঝা যায়।
এখন এই তিন ওয়াক্তের তাসবীহ ও তাহমীদ, পূর্ণাঙ্গ নামাজের রূপ লাভ করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘দিনের উভয় প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর এবং আসর) এবং রাতের একাংশে নামাজ আদায় কর। (সূরা হুদ : রুকু-১০)
তবে লক্ষ্যযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আছীল দিনের শেষাংশকে বলা হয়। সাধারণ অভিধান গ্রন্থে লেখা আছে যে, আছীল বলতে ঐ সময়কে বুঝায় যা আসরের পর হইতে মাগরিব পর্যন্ত দীর্ঘ। আর নিসানুল আরবে আছীলের অর্থ করা হয়েছে এশা। যা আসরের জন্য সূরা রূমে ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়া ‘তারফাইন্নাহার শব্দটি কুরআনুল কারীমে দুভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (ক) সূর্য্যােদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে, (খ) সন্ধ্যা এবং সকাল। বিল, গুদ্দুবী ওয়াল আছাল। দিনের উভয় প্রান্তের মাঝে প্রথম প্রান্ত হচ্ছে ফযর, বুকরাহ এবং গুদ্দুব্বুন। আর দ্বিতীয় প্রান্ত হচ্ছে আসর, এশা এবং আছিল। সূরা হুদের উপরোক্ত আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর মাঝে অধিকাংশ আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের নিজ নিজ উম্মতকে পরম সত্য আল্লাহর এবাদতের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তা’ বলা আছে। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সা:)-কেও নামাজ কায়েম করার হুকুম দেয়া হয়েছে। সম্ভবত : নামাজের সময় সংক্রান্ত এটাই হচ্ছে প্রথম আয়াত, যার মাঝে তাসবীহ-এর পরিবর্তে সরাসরি একামতে সালাতের হুকুম এসেছে। সে সময়ে মুসলমানদের সংখ্যাও ছিল বেশী। যেমন এর পূর্ববর্তী আয়াত দ্বারা বুঝা যায়। এরশাদ হচ্ছে, “সুতরাং তুমি দৃঢ়ভাবেই চল, যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তারাও, যারা তোমার সাথে তাওবাহ করেছে (তারাও যেন দৃঢ়ভাবে চলে) এবং তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো না। (সূরা হুদ : রুকু-১০) এতে করে রাতে দীর্ঘ নামাজের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে তিন ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হয়। (১) দিনের একপ্রান্তে, অর্থাৎ রাত শেষ হওয়ার প্রাক্কালে, যখন তারকাপুঞ্জ ঝলমল করে জ্বলতে থাকে। (২) দিনের অপর প্রান্তে, দিন শেষ হওয়ার সন্নিকটে এবং (৩) রাতের প্রথমাংশে। এগুলোর মাঝে প্রথমটির দ্বারা ফজরের নামাজ, দ্বিতীয়টি দ্বারা আসরের নামাজ বুঝানো হয়েছে, যাকে পূর্বে আছীল বলা হয়েছে এবং তৃতীয়টি দ্বারা এশার নামাজ বুঝা যায়। তখনো পর্যন্ত দিন এবং রাতের নামাজে ইজমালী ও অনির্দিষ্টভাব ছিল। দ্বিতীয় প্রকারের মাঝে যোহর ও আসর এবং তৃতীয় প্রকারের মাঝে মাগরিব ও এশার নামাজ প্রচ্ছন্ন ছিল। এতে করে রাতের নামাজ সর্বপ্রথম পৃথক হয়ে যায়। মক্কী সূরা ক্কাফ-এ আল্লাহ পাক নিজের নির্ধারিত সৃষ্ট সময়গুলোকে বয়ান করার পর এরশাদ করেনÑ“ হে রাসূল! এই বিরুদ্ধবাদীদের কথায় ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্য্যদেয়ের পূর্বে (ফজর) এবং সূর্যাস্তের পূর্বে (আসর) স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসাসুলভ তাসবীহ পাঠ কর এবং কিছু রাতে (এশা) তাঁর তাসবীহ পাঠ কর এবং সূর্যাস্তের পর (মাগরেব) তাঁর তাসবীহ পাঠ কর।”
এই আয়াতে সূর্য শব্দটি প্রথমে এসেছে বিধায় এদবারাস সুজুদিস সাম-এর মর্মে হচ্ছে এদবারা সুজুদিস শামস যেমন কাবলাল গুরুব দ্বারা মুরাদ হচ্ছে কাবলা গুরুবিশ শামস। এখানে সূর্যের সেজদাহ করার অর্থ হচ্ছে সূর্য অস্ত্র যাওয়া। যেমন সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীসে আছে, অস্ত্র যাওয়ার পর সূর্য আল্লাহকে সেজদাহ করে। যেহেতু সূর্যাস্তের জন্য গুরুব শব্দটি প্রথমেই এসেছে, এজন্য কালামের অলঙ্করণের চাহিদা ছিল এই যে, এরজন্য অন্য শব্দ ব্যবহার করা হোক। একারণেই একই অর্থে সুজুদ শব্দটি তুলনামূলকভাবে চয়ন করা হয়েছে।
সুজুদ মূলত : যমীনে কপাল স্থাপনকে বলা হয়। অস্ত যাওয়ার সময় সূর্যের এই অবস্থাই ঘটে থাকে। এই বর্ণনা বিন্যাসের দ্বারা সূর্য-পূজারীদেরকে রদ করা উদ্দেশ্য। একারণেই আল্লাহপাক নামাজের জন্য সুজুদে শামস এর উল্লেখ করেছেন, যখন সূর্যের মস্তক স্বীয় প্রতিপালকের সামনে সেজদাহরত হয়, তখন তোমরাও স্বীয় মস্তক নিজ প্রতিপালকের সামনে অবনত কর। উপরোক্ত আয়াতে ধৈর্যের তালকীন দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এই হুকুম ঐ সময়ের যখন কাফের কুরাঈশ রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে কষ্ট ও বিব্রত করতে তৎপর ছিল। এই আয়াতে রাতের নামাজের অনির্দিষ্ট অবস্থাকে দূর করে মাগরিব এবং এশাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর একটি সম্পর্কে বলা হয়েছে কিছু রাতে এবং অপরটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর নামাজের সময়সমূহের বিস্তৃত বিবরণের মাঝে রাত দ্বারা এজন্য শুরু করা হয়েছে যে, এসময়টি ছিল কাফেরদের অত্যাচার হতে বিমুক্ত থাকার সময়। সূর্য ঢলে পড়ার পর হতে অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত নামাজকে প্রথমে আছীল পরে দিনের উভয় প্রান্তে এবং এখানে অস্ত্র যাওয়ার পূর্ববর্তী নামাজ বলা হয়েছে। বিস্তৃতভাবে তালাশ করলে, এর মাঝে যোহর এবং আসর উভয় নামাজই শামীল রয়েছে।
সুতরাং সূরায়ে রূম, যা মক্কায় অবতীর্ণ এর মাঝেও বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই সূরা অবতীর্ণের তারিখও প্রমাণিত। তা নাজিল হয়েছিল রোমানদের পরিপূর্ণভাবে পতনের পর। এর সময় ছিল নুবওতের পাঁচ ছয় মাস হতে আট নয় মাস পর্যন্ত প্রলম্বিত। এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর, যখন সন্ধ্যায় (অথবা রাতে) উপনীত হও, এবং সকালে উপনীত হও, এবং তাঁরই প্রশংসা আসমান এবং যমীনে আছে, এবং দিনের শেষে এবং যখন যোহরে উপনীত হও, তাঁর তাসবীহ পাঠ কর। (সূরায়ে রূম : রুকু-২)
এই আয়াতে পাকে সূর্য ঢলে পড়ার পর (যোহর) এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বে (আসর) অনির্দিষ্ট নামাজগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে আসরকে আশিয়্যান এবং দ্বিতীয়টিকে যোহর বলা হয়েছে। নামাজের সময় সংক্রান্ত আয়াতগুলোকে সামনে রাখলে বুঝা যায় যে, (ক) ফজর নামাজের বিস্তৃত বিবরণ সূরা ত্বাহা, তুর, দাহার, ক্কাফ’রূম এবং সূরা নূরে সন্নিবেশিত আছে। (খ) যোহরের নামাজের কথা ইজমালীভাবে সূরা দাহার, ক্কাফ, ত্বাহা এবং বাণী ইসরাঈল এবং বিস্তৃতভাবে বাণী ই¯্রাঈল ও সূরা রূমে আছে। (ঘ) মাগরিব নামাজের কথা ইজমালীভাবে, হুদ, ত্বাহা এবং সূরা রূমে আছে এবং বিস্তৃতভাবে সূরা ক্কাফে আছে। (ঙ) আর এশার নামাজ সালাতুল্লাইল হিসেবে সূরা মুযযাম্মিল, তুর এবং সূরা দাহারে আছে এবং ইজমালীভাবে এশা হিসেবে সূরা ত্বাহা, হুদ এবং সূরা রূমে এবং বিস্তৃতভাবে সূরা ক্কাফ হুদে আছে।
আর ইজমালীভাবে সকল নামাজের কথা সূরা বাক্কারাহ, বাণী ইসরাঈল, এবং সূরা ত্বাহাতে আছে। সূরা তুরে ফজর এবং এশা দূ’ ওয়াক্তের নামাজ, সূরা বাণী ইসরাঈল, হুদ এবং ত্বাহার মাঝে কমসে কম তিন ওয়াক্ত নামাজের সন্ধান পাওয়া যায়। আর সূরা রূমে চার ওয়াক্ত নামাজের সন্ধান পাওয়া যায়। (যদি মাসা এর দ্বারা শুধু মাগরিব মুরাদ লওয়া হয়) আর সূরা ত্বাহা এবং সূরা রূমের মাঝে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেরই প্রমাণ লাভ করা যায়। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন