বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈদ সংখ্যা

দ্রুতযান

নি র্বা চি ত গ ল্প

তাহমিনা কোরাইশী | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ভালোবাসা ইদানীং পদার্থ যার আকার আছে, ওজন আছে। সেও জায়গা দখল করে। মানুষের মনের ওপর রাজ্যত্ব বিস্তার করে চলেছে। কখনও উদাসীন রাজা কখনও রূঢ় রাজা নীল চাষীদের পিঠে চাবুকের দগদগে ঘা। জটিল অংকের মতো ভালোবাসা। মন থেকে মাথায় করে মাকড়সার জল বিস্তার। নীরিহ পতঙ্গ যায় ফেসে যখন তখন। একটি নির্দিষ্ট গন্ডি গতি বা ধারাপাত কোনো কিছুই মেনে চলে না। দিক পরিবর্তনে দিক ভ্রম হয়ে ওঠে কখনও। 

এমনই এক জটিল জীবনে তিন্নি পা পিছলিয়ে পড়ে যায়। ইচ্ছাকৃত নাকি বিধিবাম ঠিক বুঝতে পারে না। মামুন তিথির কত দিনের ভালোবাসা পরিণতি বিয়ের বন্ধনে গড়িয়ে ছিল। দু’জনেই চাকরিজীবী। ব্যস্ত জীবন। আজকাল কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। সবে একটি বছর বিবাহিত জীবনের সর্ম্পকের উত্তরণ। বেসুরো কাঁসার ঘণ্টা বেজেই চলেছে। এক বছরের মাথায় আলাদা হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে আসে। সংসারের গূঢ়তত্ত¡টুকু বুঝবার আগেই ভাসমান কচুরিপানায় আটকে যায় পায়। ব্যস্ত সময়ের ব্যস্ততায় সবই উপরি উপরি ভেতরে ঢোকার সময় যেনো কারো নেই। মানব মনের মনতত্তে¡র গভীরতা মাপার যন্ত্রটি পড়ে আছে সমাজের চিলে কোঠায়। হাই অ্যামবিশন তাড়া করে ফেরে ঘরে ঘরে।
তিন্নি এখন মামুনের কাছ থেকে, তার আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বপ্নে অধির। কাছে পিঠে নয় অন্য কোথাও দূরে বহু দূরে। পাসপোর্ট ভিসা স্থান সবই ঠিক হয়ে যায়। বিয়ে বিচ্ছেদও যথারীতি। স্বপ্নের রাজ্য আমেরিকায় উড়াল ডানায় একদিন উড়ে যায়। আশ্রয় পেয়ে যায় কুইনসে এক বান্ধবীর বাসায়। কপাল ভালো সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করেছে। চাকরিও জুটে যায়। জীবন আর ঘোড়ার গাড়িতে নেই। দ্রæতগতির যানে। ভুলে যেতে চায় অতীত। অতীত এক কল্প রাজ্য। তিন্নি কারো সাথেই সর্ম্পক রাখতে চায় না। যারা তার অতীতের সাথে ছিল জড়িয়ে। নতুন আশালতা লকলক করে বেড়ে উঠে। যে ফার্মে ওর চাকরি হয়েছে। সেখানে এক ভিন দেশি ভিন ধর্মী মানুষের সাথে দেখা। সে ঐ ফার্মে বেশ কয় বছর কাজ করছে। দেবাশীষ তিন্নির প্রতি বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তিন্নি ভেবে পায় না। মোহঘোর কাটিয়ে দেশান্তরি হয়েছে সবে, এখনই কোনো জালে জড়াবে তা কী করে হয়। সময় নেয় তিন্নি। এই বয়সটাতো আর কৈশোর যৌবনের রোমান্টিকতায় পূর্ণ আধার নয়। দেবাশীষও সময় দেয়। কোনো কিছুতেই কারো বাড়াবাড়ি নেই। নেই অদিখ্যাতা। দেবাশীষের বিশ্বস্ততা নির্ভরশীলতা তিন্নিকে আকৃষ্ট করে। হাতে হাত ধরে চলবার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে সময় লাগে না। ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। দেবাশীষ রশি ডিঙ্গিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়। অতীত নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা নেই। চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ নেই। কেবল দুটি আত্মার মেলবন্ধন।
মামুনকে ছাড়তে তেমন কষ্ট হয়নি তিন্নির তবে কি দেবাশীষ ওর অপেক্ষায় বসে ছিল সাতসমুদ্দুর তের নদীর পাড়? এই বন্ধনটি তিন্নির মনোপুত হয়েছে! ওর মন সায় দিয়েছে। দেবাশীষ কেবল ওরই। টেলিপ্যাথি তিন্নির অপেক্ষায় দেবাশীষ। দেবাশীষের জীবনে এর আগে কেউ কি আসেনি। নিজেকে নিজে গড়তে গড়তে কখন যে সময় পাড় হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। যখন তিন্নি সামনে এসে দাঁড়ায়। সেও ভেবেছে তিন্নি দেবাশীষের জন্য আজ ওর সামনে। বিয়ের পর কুইনসেই এপার্টমেন্ট নিয়ে নেয় ওরা। ঐ বান্ধবীর পাশেই। যোগাযোগ কেবল বন্ধু বান্ধব কলিগম। সময় গড়িয়ে যায় পাঁচ বছর। এর মাঝে দু’বছরে মাথায় অয়ন এলো ঘরে। দুর্লভ মুহুর্তগুলো স্বাচ্ছন্দে কেটে যায়। কখনও তিন্নির মাথায় উঁকি দেয় দেবাশীষের অতীত। কী ছিল তার অতীত। তবে কি সে একলাই। শর্ত যখন নিজেই দিয়েছে নিজে ভাঙ্গবে কী করে? কেউ কারো অতীত সামনে আনবে না। অসর্তক মুহুর্তে কত কিছুই ভাবনায় ডুবিয়ে দেয় তিন্নিকে। দেবাশীষকে জিজ্ঞাস করতে পারে না।
মন রাজ্যে দখল তো নিজের হাতে। ইদানীং কত কিছুই দোলা দিয়ে যায়। এখনও মামুন একটি আসন গেড়ে বসে আছে ঠায় মনের কোণে। অজান্তেই চোখের জলে ভিজে যায় মনের আঙ্গিনা-উঠোন। ফিরে যেতে চায় এক পলক দেখে আসতে চায় রক্ত বুননে সমষ্টির সংসার। পরক্ষণে নিয়মনীতির বেড়াজালে থমকে যায়। মাড়ায় না ঐ পথে আর।
কানায় কানায় উপচ্ছে পড়া সম্ভার। ভালোবাসার টইটম্বুর জীবনে উঁকি দেয় পরজীবি কীট। বাসা বাঁধে সৌম্যকান্তি দেবাশীষের দেহে। দিন দিন নিজের অবস্থান দৃঢ় করে চলে। ক্যান্সার তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির।
তিন্নির এতো শ্রম সাধনা ভালোবাসা চেষ্টা সবই বিফলে যায়।
নিজেই জয়ী হতে চায়। বিধির বিধান না কি অভিশাপ তিন্নির দেবালয়ে আঘাত করে তিন্নি মূর্ছা যায়।
তিন্নি দেখে ওর বাড়ি সামনে বিশাল লন সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে, সেখানে দাঁড়িয়ে মামুন। তিন্নি আর দেবাশীষের ঠিকানা খোঁজে। তিন্নি চোখ মেলে মামুনকে দেখে। চেয়ে দেখে এ কি ওর গায়ে সাদা চাদরে ঢাকা কেনো? দু’হাত বাড়িয়ে মামুন তিন্নি দেবাশীষকে ধরার চেষ্টা করে। ছুঁতে পারে না মামুন।
হঠাৎ পিছন থেকে কারো স্পর্শে তিন্নি ঘাড় ফিরিয়ে বলেÑ কে দেবাশীষ? আনন্দ উল্লাসে উথলে ওঠে তিন্নি। দেবাশীষকে জড়িয়ে ধরে বলেÑ তুমি কোথায় ছিলে? এই তো আমি তোমার কাছেই। তোমার পাশেই। তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি?
তিন্নি পিছন ফিরে চায় সবুজ লনের দিকে। সন্ধ্যার আলো আঁধারির মাঝে শ্বেত বসনায় মামুন। দুটো ডানায় ভর করে উড়াল দিল শূন্যে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন