বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

শাহজাদপুরে নির্মিত হচ্ছে ২১ কিলোমিটার বাঁধ

বিন্না ঘাস আর জুট ম্যাট্রেস ব্যবহার

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশে প্রথমবারের মতো দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব বাঁধ তৈরী হচ্ছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। যমুনা এবং হুড়া সাগর নদী তীরবর্তী প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের স্লোপ সংরক্ষনের জন্য ব্লক-এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব জুট ম্যাট্রেস ও বিন্না ঘাস। জুট ম্যাট্রেস দ্বারা পরীক্ষা মূলকভাবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ্য স্থানে স্লোপ প্রটেকশনের পদ্বতি ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এবং জনসাধারনের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে।

যমুনা এবং হুড়া সাগর নদীর পাড় ঘেসে তৈরী হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার পরিবেশ বান্ধব বাঁধ। এর বিস্তৃতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাঁচিল থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার প্যচাকোলা হয়ে সিরাজগঞ্জের আহমেদপুর পর্যন্ত।

সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বেড়া উপজেলার কৈতলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের ফ্লাড এ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজম্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট প্রেগ্রাম (ট্রান্স-১) এর আওয়াতায় বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ফসলি জমির ক্ষতি পরিহার করে নদীর ড্রেজিংকৃত ম্যাটেরিয়াল দ্বারা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে একদিকে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে অপর দিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে বন্যায় ঝুঁকি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুড়ে দেখা যায়, নদীর ড্রেজিং এর মাধ্যমে তোলা বালু আর মাটি দিয়ে চলছে বাঁধের কাজ। এতে এক দিকে রক্ষা পাবে কৃষি জমি সাশ্রয় হবে জমি অধিগ্রহনের জন্য মাটি বালু ও পরিবহন ব্যয়। অন্য দিকে দুর হবে নাব্য সংকট। এছাড়াও বাঁধ তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে দেশের তৈরী চটের সিমেন্ট ভর্তি ব্যগ এবং জুট ম্যট্রেস। বাঁধের দুপাশে বিন্না ঘাস দিয়ে বাড়ানো হবে মাটির ঘনত্ব। বাঁধের ৪টি পয়েন্টে তৈরী করা হচ্ছে সুইস গেট। এমন দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঁধ তৈরীতে লাগছে ১শ ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে বাঁধের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরে বর্ষার আগেই এই বাধ নির্মান কাজ শেষ হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। বাঁধটি তৈরী হলে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের শতাধিক গ্রামের মানুষ বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। পাল্টে যাবে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা। বাঁধটি হবে ৪০ ফিট চওড়া রাস্তা। অদুর ভবিষৎতে বেড়া এলাকায় মহাসড়ক আর সেতু নির্মান হলে পাবনার সাথে ঢাকার পথ সাশ্রয় হবে প্রায় ৭০ কিলোমিটার।

শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোকসেদ আলম মকিম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো বাঁধ নির্মান। সরকার আমাদের দাবী পূরন করেছেন। বাঁধ হওয়ার কারনে এই অঞ্চলের প্রায় ৮টি ইউনিয়নের লোক সুবিধা ভোগ করবে। বিশাল ফসলি জমি বন্যার হাত থেকে রক্ষা পারে। আগে এসব জমিতে এক ফসলের চাষ হতো। এখন তিন ফসলের চাষাবাদ করা যাবে। ১ বিঘা জমি বিক্রি হত ২০ হাজার টাকায় এখন সেই জমির দাম হয়েছে ১ লাখ টাকা। দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল বাবী বলেন, এখন আর আমাদের ফসল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। বাঁধটির নির্মান কাজ শেষ হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফসলের ন্যয্য দাম পাওয়া যাবে। গো খাদ্যের অভাব পড়বে না। এই বাঁধ দিয়েই হাটপাঁচিল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় কম সময়ে পৌছানো সম্ভব হবে।

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈতলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে প্রথম বারের মত দেশীয় প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব এবং স্বল্প খরচে জুট ম্যাট্রেস দ্বারা পরীক্ষা মূলক ভাবে অধিক ঝুকিপূর্ণ্য স্থানে স্লোপ প্রটেকশনের পদ্বতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাঁধের ¯েøাপ সংরক্ষনের জন্য স¦ল্প খরচে পরিবেশ বান্ধব ও টেকশই বিন্না ঘাসের ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে অন্য প্রকল্পেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Nasir ১৪ জুন, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
প্রকল্পটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং জনসাধারণের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে
Total Reply(0)
হাবিবুর রহমান ১৪ জুন, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
ফসলি জমির ক্ষতি পরিহার করে নদী থেকে ড্রেজিং করে ড্রেজিংকৃত ম্যাটেরিয়াল দ্বারা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে এক দিকে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে; অপর দিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যাপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে বন্যায় ঝুঁকি সহনীয়পর্যায়ে আনা সম্ভাব হবে।
Total Reply(0)
তমাল মুন্সি ১৪ জুন, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
এতে এক দিকে রক্ষা পাবে কৃষি জমি সাশ্রয় হবে জমি অধিগ্রহণের জন্য মাটি বালু ও পরিবহন ব্যয়। অন্য দিকে দূর হবে নাব্যতা সঙ্কট। এ ছাড়াও বাঁধ তৈরিতে দেশের তৈরি চটের সিমেন্ট ভর্তি ব্যাগ এবং জুট ম্যাট্রেস ব্যবহার হচ্ছে।
Total Reply(0)
আলম মকিম খান ১৪ জুন, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল বাঁধ নির্মাণ। সরকার আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। বাঁধ হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের প্রায় আটটি ইউনিয়নের লোক সুবিধা ভোগ করবে। বিশাল ফসলি জমি বন্যার হাত থেকে রক্ষা পারে। আগে এসব জমিতে এক ফসলের চাষ হতো। এখন তিন ফসলের চাষাবাদ করা যাবে। এক বিঘা জমি বিক্রি হতো ২০ হাজার টাকায় আর এখন জমির বিঘাপ্রতি দাম হয়েছে এক লাখ টাকা। দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে।
Total Reply(0)
আব্দুল বারী সরদার ১৪ জুন, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
এখন আর আমাদের ফসল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। বাঁধটি পুরোপুরি নির্মাণকাজ শেষ হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। যমুনা নদীর প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। গো-খাদ্যের অভাব পড়বে না। এই বাঁধ দিয়েই হাটপাচিল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় কম সময়ে পৌঁছানো যাবে।’
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন