শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাংলাপানে লাভবান কুষ্টিয়ার কৃষক

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিনা চাষে বরজের মাধ্যমে বিষমুক্ত উপায়ে ‘বাংলাপান’ জাতের পান চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার কৃষকরা। পানের বরজ আধুনিক উপায়ে এ জাতের পান চাষ করে বিঘা প্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করছেন তারা লাভ ছাড়াও ভেষজ গুণের কারণে পানের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া বাংলার ঐতিহ্যে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে ও পূজা পার্বনেও রয়েছে পানের কদর।

কুষ্টিয়ার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ও পানের বাজার দর ভালো থাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পানে লাভও বেশি হয়। বাজারের চাহিদার কথা চিন্তা করে, মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর দিয়ে নিরাপদ পান উৎপাদনে কৃষি অফিস সহায়তা করছে কৃষকদের।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ১শ ৪০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়েছিল ভেড়ামারা উপজেলায়।

ভেড়ামারা উপজেলায় ৭শ ২০ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় ৫শ ৩৬ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৬শ ২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ১শ ৬০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৮২ হেক্টর এবং কুমারখালী উপজেলায় ২২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে পান চাষ বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয় ২ হাজার ১শ ৬৫ হেক্টর। এর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৭শ ৫০ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় ৫শ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৬শ ২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ২শ ১০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৭০ হেক্টর এবং কুমারখালী উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল।

বাংলা পান, মিঠা পান, দেশি পান, ঝালি পান, সাচি পান, কর্পূরী পান, গ্যাচ পান, মাঘি পান, উজানী পান, নাতিয়াবাসুত পান, বরিশাল পান, উচ্চ ফলনশীল ও বিভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বারিপান-১, বারিপান-২ এবং বারিপান-৩ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পান বাংলাদেশে চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলা পান ও মিঠা পান জনপ্রিয়। কুষ্টিয়া অঞ্চলে এ বাংলা পান চাষে আগ্রহ বেশি কৃষকদের।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর ও মিরপুরে এ বাংলা পানের চাষ বেশি হয়ে থাকে। স্বাদ ও সুগন্ধিযুক্ত এ জাতের পানের বাজারে রয়েছে বেশ চাহিদা। এছাড়া বাংলাপান পাতা পঁচা, পাতা পোড়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক্ষম হওয়ায় কৃষকরা এ পান চাষে বেশি ঝুঁকছে।

ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার পান চাষী আব্দুর রহমান জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করি। তবে পানের বিভিন্ন রোগের কারণে খুব একটা লাভ হত না। পরে আমি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিরাপদ উপায়ে পান চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে “বাংলাপান” জাতের পানের চাষ করছি। দুই বিঘা জমিতে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।
মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ফকিরাবাদ এলাকার পান চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, আমি আগে তামাক চাষ করতাম। তবে এখন আর তামাক চাষ করি না। বর্তমানে আমি পান চাষ করি। আমি গত বছর এক বিঘা জমিতে বাংলাপানের চাষ করেছিলাম। সেখানে আমার প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। প্রথমবার পানের বরজ করতে একটু বেশি খরচ হয়। কিন্তু পরের বার চাষ করতে খরচ কম। এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে বাংলাপানের চাষ করেছি। প্রায় দুই লাখ টাকার ওপরে পান বিক্রি করেছি। এখনো ২-৩ লাখ টাকার বিক্রি হবে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় বাজার, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বাংলাপানের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা সেখানে রপ্তানি করি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, অর্থকারী ফসলের মধ্যে পান একটি লাভজনক ফসল। কুষ্টিয়ার পান সারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। তবে গত কয়েক বছর আগে পানের বিভিন্ন রোগের কারণে পান চাষীদের লোকসান হয়। এতে পান চাষ অনেকটা কমে যায়। পরবর্তীতের আমরা পান উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচির আওতায় পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। সেই সঙ্গে নিরাপদ উপায়ে পান চাষের ওপরে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেই। এতে কৃষকরা পান চাষে লাভবান হয়। ফলে এই এলাকায় এ বছর আরও ৩০টি পানের বরজ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, এ উপজেলা থেকে আশা করছি এ বছর দেশের বাইরেও পান রপ্তানি করা হবে।
কুষ্টিয়া জেলা কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ রঞ্জন জানান, পান চাষ অধিক লাভজনক। এছাড়া বাজারে বাংলা পানের চাহিদাও বেশি। তাই কুষ্টিয়ার কৃষকরা এ বাংলা পানের চাষ করছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন