সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যে কাউকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মৃত্যু অবধারিত। আল্লাহপাক মৃত্যুর যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেই সময়েই মৃত্যু হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের মৃত্যুর সময় ঠিক করে দিয়েছি। আর নির্ধারিত সময়ের পূর্বে মৃত্যু হবে না। (সূরা ওয়াকিয়া : ৬০)। তিনি আরও বলেছেন, জীবিত মাত্রেরই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। (সূরা আনকাবুত : ৫৭)।

জীবনের মালিক যেমন আল্লাহ, তেমনি মৃত্যুর মালিকও। উপযুক্ত কারণ ছাড়া কারো মৃত্যু ঘটানোর বা হত্যা করার কোনো এখতিয়ার আল্লাহ কাউকে দেননি। এমনকি আত্মহত্যা করার অধিকারও কারো নেই। জীবন ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী- যাই হোক না কেন, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা অত্যন্ত মূল্যবান। জীবনের অপরিসীম গুরুত্ব ও মূল্যের কথা তিনি বলেছেন এভাবে- নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার জন্য কেউ কাউকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়েদা : ৩২)।

মহান আল্লাহর কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ হত্যা করাকে অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি হত্যার দায়ে হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : হে বিশ্বাসীগণ, নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের (বদলা) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী। কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে সম্মানজনক ব্যবস্থার অনুসরণ ও সদয়ভাবে তার দেয় পরিশোধ করা উচিত। (সূরা বাকারা : ১৭৮)। এ ছাড়াও হত্যাযোগ্য অপরাধে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির হত্যা কার্যকর করার অনুমোদনও রয়েছে আল্লাহর তরফ থেকে। এর বাইরে কাউকে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ এবং আল্লাহ এ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন : আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথাযথ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করো না। (সূরা বনী ইসরাইল : ৩৩)। কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে আল্লাহপাক বলেছেন : তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে চিরকাল থাকবে। (সূরা নিসা : ৯৩)।

দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে অন্যায় ও ইচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। অতি সা¤প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলোর মাঝে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম-নৃশংস হত্যাকান্ড দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কী অপরাধ ছিল তার? দৃশ্যত কোনো অপরাধ ছিল না। আবরার ফাহাদ তার একটি স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে মন্তব্য করেছিল। সেই মন্তব্যে কারো প্রতি বিদ্বেষ ও আক্রমণ ছিল না। সেটা ছিল তার হৃদয়ের একান্ত অনুভূতি ও তার সহজ উচ্চারণ। এই অপরাধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলবেঁধে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা এতটাই সীমার যে, তাকে পানি পর্যন্ত দেয়নি। মানুষ যে মানুষকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, তা বিরল না হলেও বর্ববতার চ‚ড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করি। উল্লেখ করা যেতে পারে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনে ১৫১টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের অধিকাংশের কোনো বিচার হয়নি।

শুধু শিক্ষাঙ্গনে নয়, সারাদেশে এখন খুন-গুম ও অপহরণের রীতিমতো সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের ঘটনাও বাড়ছে। বিশেষভাবে শিশুরা হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে। ক’দিন আগে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর গ্রামে সংঘটিত হয়েছে এক লোমহর্ষক শিশু হত্যার ঘটনা। প্রতিপক্ষকে জব্দ করার জন্য শিশুটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে গিয়ে পিতা ও চাচা মিলে হত্যা করেছে। হত্যার সঙ্গে সঙ্গে তার লিঙ্গ ও কান কাটা হয়েছে। এত বড় নিষ্ঠুরতা কোনো পিতা-চাচা করতে পারে, এটা কল্পনাও করা যায় না। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৫ বছরে মা-বাবার হাতে অন্তত ৩৩৫ জন শিশু নিহত হয়েছে। সন্তানের প্রতি মা-বাবার স্নেহ-মমতার কোনো তুলনা হয় না। সন্তানের জন্য মা-বাবা জীবন পর্যন্ত দিতে পারে, এমন নজির কম নেই। অথচ এমনই কাল পড়েছে, সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ নয়। শিশু হত্যা আরো নানাভাবে বাড়ছে। পরিসংখ্যান মতে, গত ৫ বছরে ১ হাজার ৬৩৪ জন শিশু নিহত হয়েছে। গত ৯ মাসে নিহত হয়েছে ৩২০ জন। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে।

খুনখারাবি বস্তুতপক্ষে অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মা-বাবার হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে মা-বাবা, স্ত্রীর হাতে স্বামী, স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই, বন্ধুর হাতে বন্ধু, প্রতিপক্ষের হাতে প্রতিপক্ষ হরহামেশাই খুন হচ্ছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ড এবং গুমের অভিযোগও পুরনো। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাবে, গত ৯ মাসে দেশে বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড হয়েছে ৩১৫টি। এর মধ্যে ৩০৬ জন তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। ১ জনকে পিটিয়ে, ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে নির্যাতনে। এই সময়ে গুমের ঘটনা ঘটেছে ২৪টি আর কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের।

নানাভাবেই মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। অথচ একটা হাত্যারও যথাযথ বিচার হচ্ছে না। বিচার হচ্ছে না বলে হত্যাকান্ডও থামছে না। এই অস্বাভাবিক ও অবাঞ্ছিত হত্যাকান্ডের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তি তার নিহত হওয়ার কারণ জানে না, ঘাতক বা ঘাতকরাও জানে না কেন সে বা তারা হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। এ অবস্থা কিয়ামতের পূর্ব লক্ষণ হিসাবে গণ্য। মহানবী সা. একটি দীর্ঘ হাদিসে কিয়ামতের আলামত বর্ণনা করেছেন। সেই হাদিসে আছে : এমন একটা সময় আসবে, যখন হত্যাকান্ড ব্যাপক আকার ধারণ করবে। নিহত ব্যক্তি জানবে না, কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকারী বুঝবে না, কেন সে হত্যা করছে।
আমরা কি তাহলে সেই সময়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি? জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও সচেতন ব্যক্তিরা এমতাবস্থায় উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। এখনই হত্যাকান্ডের রাশ টেনে ধরা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। আল্লাহর রোষানলে পড়াও অসম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
জোহেব শাহরিয়ার ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে উক্ত হত্যা আরও ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হবে, যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয় যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
প্রাক-ইসলামি যুগে আরব সমাজে যখন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির প্রচলন ছিল তখন পেশিশক্তির জোরে খুনখারাবি, হত্যাকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ঘুষ-দুর্নীতি—সবকিছুই অবাধে চলত। শান্তির ধর্ম ইসলামের আবির্ভাবে সব রকম হত্যা, রক্তপাত, অরাজকতা, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
উসামাহ ইবন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে এক জিহাদে পাঠালেন। আমরা প্রত্যুষে ‘জুহাইনার’ (একটি শাখা গোত্র) ‘আল-হুরাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময়ে আমি এক ব্যক্তির পশ্চাদ্ধাবন করে তাকে ধরে ফেলি। অবস্থা বেগতিক দেখে সে বললঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু আমি তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললাম। কালেমা পড়ার পর আমি তাকে হত্যা করেছি বিধায়, আমার মনে সংশয়ের উদ্রেক হল। তাই ঘটনাটি আমি নাবী (সাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ ‘’তুমি তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর হত্যা করেছে! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে অস্ত্রের ভয়ে জান বাঁচানোর জন্যই এরুপ বলেছে। তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ ‘তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছ, যাতে তুমি জানতে পারলে যে, সে এ কথাটি ভয়ে বলেছিল?’’ বুখারী ৬৮৭২; মুসলিম ১৭৮-(১৫৮/৯৬)
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার মর্মবাণী ঘোষণা দিয়ে বিদায় হজের ভাষণে বললেন, ‘তোমাদের রক্ত তথা জীবন ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম; যেমন আজকের এই দিনে, এই মাসে ও এই শহরে অন্যের জানমালের ক্ষতিসাধন করা তোমাদের ওপর হারাম।’
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ভেসে ওঠে এসব হত্যাকাণ্ডের বীভৎস চিত্র। অথচ হত্যা এমন একটি জঘন্য অপরাধ, যা আল্লাহর কাছে কঠিন ও মারাত্মক গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। হাদিসের কথায়, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি)
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
একজন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করারই নামান্তর। আর কোনো ব্যক্তি যদি কারও প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।
Total Reply(0)
বাহলুল ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড কোনো বিবেকবান ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাম্য নয়।
Total Reply(0)
Fahana ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:১৬ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক
Total Reply(0)
Hamza muhamad Ranju ১ জুন, ২০২০, ৯:৪০ এএম says : 0
Alhahmdulilah, الحمد لله،ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে কোন সন্ত্রাসী এর সুযোগ নেই। এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।এটা আমি বলবো না।আমি বলবো সচেতন করতে হবে সরকারিভাবে,।। ইসলাম সম্পর্কে অবচেতন এর কারণে মানুষ কে সন্ত্রাসী চক্র সুযোগ নিচ্ছে বিপাকে ফেলছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)
Hamza muhamad ১ জুন, ২০২০, ৯:৪১ এএম says : 0
Alhahmdulilah, الحمد لله،ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে কোন সন্ত্রাসী এর সুযোগ নেই। এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।এটা আমি বলবো না।আমি বলবো সচেতন করতে হবে সরকারিভাবে,।। ইসলাম সম্পর্কে অবচেতন এর কারণে মানুষ কে সন্ত্রাসী চক্র সুযোগ নিচ্ছে বিপাকে ফেলছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন