২৫০ শয্যার পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত ৫৮ জনের চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২১ জন চিকিৎসক। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনে ১৭ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত নদীমাতৃক এ জেলার ৬টি উপজেলার হাসপাতালগুলির অবস্থা সবদিক থেকে অত্যন্ত নাজুক বিধায় জেলার অসহায় জনসাধারনের একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, চিকিৎসা সংক্রান্ত আধুনিক যন্ত্রপাতীর অভাবে, জনসাধারনকে চিকৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক ভর্তি রোগীর সেবা দিতে হয়। বর্তমানে পটুয়াখালী জেনারের হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে বিভিন্ন বিভাগে ১০জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। গাইনী, মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, ও অর্থোপেডিক বিভাগে পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ সব বিভাগে কোন চিকিৎসক কর্মরত নেই। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১১ টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৭ জন। চক্ষু, এ্যানেসন্থেশিয়া, প্যাথেলজি, সার্জারি বিভাগে জুনিয়র কনসালটেন্ট, পদে দীর্ঘদিন কোন চিকিৎসক নেই। আবাসিক ফিজিসিয়ান ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার পদ শূন্য। মেডিক্যাল অফিসারের ৩২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে এ্যানেসন্থেটিষ্টর ৩টির মধ্যে ২টি, মেডিক্যাল অফিসার ১০ টির মধ্যে ৬টি সহকারী রেজিস্টার ১১ টির মধ্যে ৮টি ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ৪টির মধ্যে ৩টিসহ প্যাথেলজি, রেডিওলজিস্ট ওডেন্টাল সার্জন পদে কোন চিকিৎসক কর্মরত নেই।
সূত্রে আরো জানা যায়, অদ্যাবধি পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়নি কোন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, বর্তমানে হাসপাতালে ৫টি মেশিন রয়েছে, যার সব কটি এনালগ মেশিন। সার্জারি ও গাইনি ওয়ার্ডের ওটি টেবিলসহ লাইটগুলি খুবই পুরাতন। যার ফলে প্রতিদিনকার অপারেশনগুলি করতে ডাক্তারদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালে সেল কাউন্টার মেশিনটি পুরাতন, এ ধরনের মেশিন দিয়ে বর্তমানে কোন প্যাথলোজি পরীক্ষা চলে না। কর্তৃপক্ষ একাধিক বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও তার কোন সমাধান হয়নি। বায়োকেমিস্টি এনালাইজার এপ্রিল মাসে সরবরাহ করা হলেও অদ্যাবধি তা চালু করা সম্ভব হয়নি, সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ ইনস্টল না করে দেয়ার ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি ব্যবহার করতে পরছেন না এটি। যার ফলে হাসপাতালের প্যাথেলজি পরীক্ষাগুলি ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে মাত্র ১৭টি কেবিন থাকলেও তার অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এগুলি দিনদিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে গণপূর্ত বিভাগ এগুলি যেনতেনভাবে মেরামত করে তদের দায়িত্ব সেড়ে থাকেন। রোগীরা এ খাতে অর্থ খরচ করেও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেনা।
হাসপাতালের প্রতিদিন রুগীর চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে, বাধ্য হয়ে পুরাতন বেড, ফ্লোরে মেট বিছিয়ে রুগী রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হাসপাতালের শিশু ও গাইনী বিভাগে বরাদ্দকৃত বেডের তুলনায় ডাবল রুগী প্রায়ই থাকে এ দুটি বিভাগে। ওয়ার্ডের বেড ব্যাতীত ফ্লোর, করিডোরে অধিকাংশ সময় রুগী রাখতে হয় ভর্তি রুগীর চাপ সামলাতে। হাসপাতালে হ্রদ রোগ বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, বেডের সমস্যা মারাতœক, পেয়িং বেডের মধ্যে জোড়াতালী দিয়ে চলছে। হ্রদরোগ বিভাগের কার্যক্রম ১ জন মাত্র জুনিয়র কনসালটেন্ট দিয়ে।
পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে জন্য পৃথক সিসিইউ ভবন নির্মান করা হলেও জনবলসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতী সরবরাহ না করায় দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকায় পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে ঐ ভবনটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে সাময়িকভাবে ২০১৪ সালে হস্তান্তর করা হয়। যার ফলে হ্রদরোগে আক্রান্ত পটুয়াখালী ওপাশ্ববর্তী জেলা বরগুনার রোগীদের সিসিইউসহ উন্নত চিকিৎসা নিতে সড়ক পথে বরিশাল যেতে হয়। যেখানে হ্রদরোগে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসা নিতে হয়, সেখানে সিসিইউর অভাবে বরিশাল যেতে পথিমধ্যে অনেক রোগীকে এম্বুলেন্সে প্রান হারাতে হয়।
পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাডভোকেট আনোয়ার পারভেজ ও তৌফিক হোসেন মুন্না জানান, হ্রদরোগে আক্রান্ত পরিবারের লোকদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে নাম মাত্র চিকিৎসা দেয়া হয়, নেই কোন পৃথক ওয়ার্ড, প্রয়োজনীয় ডাক্তার যন্ত্রাদী। অসুস্থ রোগীকে বরিশাল নিয়ে যেতে যেতে পথেই একাধিক রোগী প্রান হারায়। আমাদের দাবি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির একমাত্র ভরসা স্থল পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট সমাধানসহ অবিলম্বে পূর্নাঙ্গ সিসিইউ ভবন চালু করা হোক।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মো. সাইদুজ্জামান বলেন, সরকারের ৩৯ তম বিসিএসর নিয়োগ চুড়ান্ত হলে চিকিৎসক সংকটের অনেকটা সমাধান হবে। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতীর রক্ষনাবেক্ষনসহ চাহিদা মাফিক যন্ত্রাদির জন্য প্রতিমাসেই চাহিদাপত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন সিসিইউ ভবনের নিচতলা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে খালী করেছেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদিপ্রাপ্তি সাপেক্ষে সিসিইউ ভবন চালু করা গেলে হ্রদরোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাদি প্রদান করা সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন