বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতদের ৯০ শতাংশই আহলে হাদিস’

উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩০ এএম, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী অভিবেশনে বক্তারা বলেছেন, দেশে উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ৯০ শতাংশ আহলে হাদিস স¤প্রদায়ের লোকজন। চিন্তা চেতনায় তারা (আহলে হাদিস) এতো উগ্র যে দেশের অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম-ওলামাকে ‘কাফের’ মনে করেন। তারা নিজেদের স¤প্রদায়ের ‘বড় হুজুরের’ কথার বাইরে যান না বিশ্বাস করেন না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদরাসা থেকে জঙ্গী সৃষ্টি হয় এমন ধারণা ঠিক নয়। কোনো মাদরাসা জঙ্গী তৈরি করে না। কারণ ইসলামে জঙ্গীদের কোনো স্থান নেই। শুধু তাই নয় বিশ্বের কোনো ধর্মই মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি আমাদের দেশের উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশ আহলে হাদিস স¤প্রদায়ের। অধিকাংশ বক্তাই উগ্রবাদ দমনে সফলতার চিত্র তুলে ধরেন এবং আহলে হাদিসের দিকেই আঙ্গুল তোলেন। 

জঙ্গিবাদ বিরোধী সরকারের অলআউট প্রচেষ্টায় আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। এ দেশে হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ করে একের পর এক টার্গেট কিলিং শুরু হলো। সবগুলো ঘটনা পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এগুলো আমাদের দেশীয় সন্ত্রাসীদেরই কর্মকান্ড। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এ ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়েছে। এর মধ্যেই ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঘন্যতম জঙ্গি হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশিসহ ২২ জন নাগরিককে হত্যা করা হয়। এর পরপরই একটি ওয়েবসাইট থেকে দাবি করা হলো, এটি অন্য একটি দেশের জঙ্গিদের কাজ। অথচ সে দেশের সঙ্গে আমাদের বর্ডারসহ কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, এ ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের ডাক দিলেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে সর্বস্তরের মানুষ ঘুরে দাঁড়ালেন। এরপর এমন ঘটনাও ঘটেছে মা তার নিজের সন্তানকে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। আমরা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করলাম কেন এ সন্ত্রাস? বাংলাদেশ কখনোই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি, দিচ্ছে না, দেবেও না।
দেশের শিক্ষত তরুণদের প্রতি আহŸান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তরুণরা যারা ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ভার্চুয়াল জগতে সারাক্ষণ থাকেন, তারা কোনকিছু দেখলে বিশ্বাস করার আগে যেন বিষয়টি যাচাই করে নেন।
আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জঙ্গিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে যতটা কাজ হচ্ছে; কিন্তু তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাব রয়েছে। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সমানতালে কারাগারে ‘ডি-রেডিকালাইজড’ (জঙ্গিবাদ থেকে বের হয়ে আসা) প্রোগ্রামের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলা পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে জঙ্গী বিরোধী বেশকিছু অভিযান হয়েছে। আমরা জঙ্গিদের এনকাউন্টার করেছি, ধ্বংস করেছি বলেই এখন আপনারা (সাধারণ মানুষ) এর সুফল ভোগ করছেন। কিন্তু এর বাইরে আমরা যেসব উগ্রবাদীদের ধরে কারাগারে পাঠিয়েছি, সেই জায়গাটিতে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কারাগারে যেসব জঙ্গি বা উগ্রবাদীরা রয়েছেন, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘ডি রেডিকালাইজড’ প্রোগ্রাম জোরদার করা উচিত।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের যদি আরেকটি হলি আর্টিজানের মতো ঘটনা ঘটতো তাহলে আমাদের সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতো। রাজধানীর মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুর, রূপপুরের প্রজেক্টের বিদেশি এক্সপার্টদের ধরে রাখা যেতো না। তবে আমরা এ ধরণের কোনো ঘটনা হতে দেইনি। তিনি আরো বলেন, আমি যখন অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ছিলাম তখন দেখেছি উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশ আহলে হাদিস স¤প্রদায়ের। এই ভয়াবহ চিত্র পাওয়ার পর আমরা এদের সঙ্গে কথা বলেছি, এদের অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা বলেছে, তারা শুধুমাত্র তাদের স¤প্রদায়ের বড় হুজুরের কথা শুনবে ও মানবে। আলেমদের একাংশকেও তারা ‘কাফের’ বলে মনে করেন। তাই উগ্রবাদ রুখতে দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় নেতাদের বড় একটি ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা একটা জায়গায় পিছিয়ে রয়েছি। যেসব জঙ্গিদের ধরে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে তাদের ডি-রেডিকালাইজেশন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে। তারা কারাগারে গিয়েও সংশোধন হতে পারছে না। তাদের সংশোধনের দিকে জোর দিতে হবে। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বাংলাদেশে সবচাইতে বড় ফিতনা হচ্ছে আহলে হাদিস, যে মাযহাবের অনুসরন করা ওয়াজিব,এই আহলে হাদিসের দল সেই মাযহাবের ইমামদের ব্যাপারে কুরুচিপূর্ণ মন্হব্য করে,এই ফিতনাবাজ আহলে হাদিসের খপ্পর থেকে সাধারন মুসলমানদেরকে রক্ষা করার জন্য বিজ্ঞ আলেম সমাজকে এগিয়ে আসা উচিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন