বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত নোয়াখালী জেলা পর্যটকদের জন্যে এক অনন্য গন্তব্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ভরপুর মেঘনা বিধৌত এ জেলার ভাঙা-গড়ার ইতিহাস বহু পুরোন হলেও হালে এসে নদী ভাঙন রোধ করা যায় বলে মনে করেন, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী সোলেমান বাজারের আব্দুল আলিম, রাজ্জাকসহ অনেকেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙন রোধে বিগত কয়েক বছর পর্যন্ত নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ তারা পাননি। এমপি-মন্ত্রীর নিয়মিত প্রতিশ্রুতি দিনদিন হতাশ করে দিচ্ছে তাদের। তারা জানান, নদী ভাঙনের কারণে আশ্রয়ের তেমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। দ্রুত এ ভাঙন বন্ধ করতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে সুবর্ণচর-হাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে সিডিএসপি প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার শংকর চন্দ্র সাহা থেকে জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৮খ্রি: পর্যন্ত প্রায় ৭০০০ হেক্টর ভুমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তার মতে প্রতি বছর ১০০মি. থেকে ৫০০মি.পর্যন্ত ভুমি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর মেঘনা তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও জেলার হাতিয়া উপজেলার নদীর এপারে বয়ারচর, নলেরচর, নাঙ্গলিয়া, কেরিংচর বিস্তৃত এলাকা নিয়মিত ভাঙনের শিকার। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নদী ভাঙনে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি আরিফুল ইসলামের মতে, এ পর্যন্ত সুইস গেট ৩টি, ভেড়ি প্রায় ৩৫ কি.মি., ক্লোজার ৪টি, পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির ঘর ২টি, সাইক্লোন শেল্টার ৭টি, কাঁচা ও পাকা রাস্তা ৫০কি.মি., কালভার্ট ৯টি, ইউড্রেন ১০টি, উন্নয়নকৃত বাজার ১টি, অন্যান্য বাজার ৫টি, মাটির কিল্লা ৭টি, গভীর নলকূপ ৩১১টি, পিট লেট্রিন ৫০৫০টি, বনায়নকৃত অঞ্চল ৪০০০ হেক্টর, বাঁধ ও রাস্তা (বনায়ন) ৬৩ কি.মি., এ ছাড়াও অসংখ্য বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙন কবলিত ইউনিয়ন চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুরের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাশার ও আবুল কালাম আজাদের মতে, উত্তরে সমিতির চর থেকে দক্ষিণে মামুর খাল পর্যন্ত নদীকূলে ১০কি.মি. পথ জিওব্যাগ এবং ব্লক দিয়ে ভেতরে বাঁধ নির্মাণ করলে নদী ভাঙা বন্ধ হবে এবং নদী কূলের মনোরম পরিবেশ দেখতে প্রতিদিন শতশত লোকজন এখানে আসা যাওয়া করবে। এলাকার মানউন্নয়ন হবে এবং পর্যটন এরিয়া হিসেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হবে এটি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, ১২ কি.মি. এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সার্ভে এবং সুপারিশের ভিত্তিতে অবিলম্বে ডিপিপি সাবমিট করা হবে।
সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম জানান, নদী ভাঙন রোধ করা অতীব জরুরি। পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী প্রকল্পটি গ্রহণ করলে, উপজেলার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন