বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন নানা বয়সী শিশু, নারী-পুরুষ এবং অধূমপায়ী জনগনের ব্যাপক সমাগম ঘটে। জনসমাগমস্থল হিসাবে যে কোন মেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত স্থানের অর্ন্তগত। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নয় বইমেলার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে এ স্থানটি শভভাগ ধূমপানমুক্ত হওয়া জরুরী। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখার দাবীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচী ও লিফলেট ক্যাম্পেইন থেকে বক্তরা এই দাবী করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদের সভাপত্বিতে সভায় বক্তব রাখেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির প্রকল্প সমন্বয়কারী একেএম খলিল উল্লাহ, ওয়াক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, ট্যোবাকো কন্ট্রোল রিসাচ সেলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা লিজা।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষনা। কারণ, একজন ধূমপায়ীর ধোঁয়া শুধু নিজের নয় আশেপাশের অবস্থানকারীদেরও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার। বিগত কয়েক বছরে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি মেলার নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলা একাডেমীর সমন্বিত উদ্যোগে মেলা প্রাঙ্গনে লাইটার এবং সিগারেট নিয়ে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। এ বছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অত্যন্ত প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ কে এম খলিল উল্লাহ বলেন, বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন নানা বয়সী শিশু, নারী-পুরুষ এবং অধূমপায়ী জনগনের ব্যাপক সমাগম ঘটে। জনসমাগমস্থল হিসাবে যে কোন মেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত স্থানের অর্ন্তগত। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নয় বইমেলার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে এ স্থানটি শভভাগ ধূমপানমুক্ত হওয়া জরুরী। ২০১৩ সালেও বইমেলায় আগুন লেগে ব্যপক ক্ষতির বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গনে লাইটার এবং সিগারেট নিয়ে প্রবেশ নিষেধের মাধ্যমে এত সাবধানতা অবলম্বনের পরও ২০২০ সালে পূণরায় বইমেলা প্রাঙ্গনে আগুন লাগার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে মেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে।
ফারহানা লিজা বলেন, জনকল্যাণে রাষ্ট্রীয় আইন যেখানে জনসমাগম স্থান হিসাবে মেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছে সেখানে শুধুমাত্র কিছু মানুষ এর অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে অব্যহত রাখবার জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষর আগামী বছর থেকে মেলার মূল প্রাঙ্গণের বাইরে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে ‘স্মোকিং জোন’ রাখার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দু:খজনক।
শারমিন আক্তার বলেন, বইমেলা থেকে বই কিনে মানুষ নিজেদের জ্ঞানার্জনের পথ প্রসারিত করে। দেশী বিদেশী অনেক পর্যটকের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরা পিতামাতার সাথে মেলা প্রাঙ্গনে এসে শুধু বই সংগ্রহ করে না, মেলার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশও তাদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এ ধরনের একটি জনসমাগমস্থলে ধূমপানের স্থান কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বইমেলা প্রাঙ্গনে ধূমপানের স্থান রাখা হলে পক্ষান্তরে জনগনকে ধূমপানে আরো উৎসাহী করে তোলা হবে।
বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত নিয়মাবলী মেনেই প্রকাশক এবং অন্যান্যরা মেলায় অংশগ্রহণ করে। বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রতিবছর বইমেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত ঘোষনার পাশাপাশি দৃষ্টগোচর একাধিক স্থানে নো-স্মোকিং সাইন স্থাপন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
অবস্থান কর্মসূচীতে বাঁচতে শিখ নারী, বিইআর, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠ, নাটাব, টিসিআরসিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন