কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর ঘেষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় একটি ইউনিয়নের দেড়শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে ওই ইউনিয়নের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে। অভিযোগ উঠেছে, হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের ভাই প্রভাবশালী মোন্নাফ আলীর সহযোগিতায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নদী শুকালেই প্রতি মৌসুমে বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করে আসছে।
জানা যায়, অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পাল্টে যাওয়াসহ জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে পাউবোর তীর রক্ষাবাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলা উলিপুর, চিলমারী, রৌমারীর অনেকটা অংশ ব্রহ্মপুত্র নদীকে ঘিরেই অবস্থিত। নদীর পানি কমতে থাকাকালীন সময় নদীর স্রোত কমে যায়। আর এ সময়ে বছর বছর ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করে আসছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকন্ঠ গ্রামে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করার কারণে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাউবোর তীর রক্ষায় যে বস্তা দেয়া হয়েছে সেগুলোও নদীতে ছিটকে পড়ছে।
ওই ইউনিয়নের নীলকন্ঠ, রামখানার গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। আর মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট ভাঙলেই গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে।
নীলকন্ঠ গ্রামের সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ঘরবাড়ি ভাঙনে বাড়িতে লাগানো গাছগুলো তুলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি, বাঁচার জন্য অন্যের ভিটায় একটু ঠাই নিতে যাচ্ছি।
ওই ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেনের ভাই মোন্নাফ আলী কয়েক বছর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। ফলে হাজার হাজার সিএফটি বালু অবৈধভাবে তুলে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে আসছে। এভাবেই বালু উত্তোলন চলতে থাকলে কোনো একদিন হাতিয়া ইউনিয়ন পুরোটাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয়া হলেও পুনরায় আবারো বালু উত্তোলন চলছে। এ বিষয়ে হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি জায়গায় মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। নীলকন্ঠ গ্রামের মানুষেরা লিখিত অভিযোগ দিলেই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন