শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ইসলামের দৃষ্টিতে কতিপয় পাঠদান পদ্ধতি

মাহফুজ আল মাদানী | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এই শিক্ষা তখনই সফল হবে, যখন একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদেরকে ভালভাবে শিক্ষা প্রদান করে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তৈরী করতে পারবেন। আর সে সকল আদর্শবান মানুষদের মাধ্যমে সমাজ দেশ জাতি মাথা উচুঁ করে দাড়াবে। যেভাবে মেরুদন্ডের কারণে মানুষ সোজা হয়ে দাড়াঁতে পারে।
পাঠদান পদ্ধতি। ‘একজন শিক্ষক শিক্ষার যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক রীতি-নীতি, পন্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাকে পাঠদান পদ্ধতি বলে’। এই পাঠদানে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত করা যায়। পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি পাই তা যদি আমাদের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের শিক্ষাদান আরো ফলপ্রসু হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আরো বেশি শিখতে পারবে, উপকৃত হবে। কিছু পদ্ধতি আলোকপাত করা হলো।
উপমা বা উদাহরণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাদান। শিক্ষার্থীদেরকে কোন বিষয়ে আকর্ষিত করতে চাইলে সহজ এবং সুন্দর উপমার মাধ্যমে বিষয়টি আলোকপাত করা যেতে পারে। তখন শিক্ষার্থী সহজে বিষয়টি গ্রহণ করতে পারবে, রপ্ত করে নিতে পারবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কোরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে’ -(সুরা আয যুমার ঃ ২৭)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘এ সকল উদাহরণ আমি মানুষের জন্যে দেই; কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে’ -(সুরা আল আনকাবুত ঃ ৪৩)। অনুরূপভাবে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামগণকে বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণ করেছেন। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ‹উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কুরআন হিফ্যকারীর দৃষ্টান্ত হল পা বাঁধা উট এর মত। যদি এর মালিক এটির প্রতি লক্ষ্য রাখে তাহলে ধরে রাখতে পারবে। আর যদি তার বাঁধন খুলে দেয় তাহলে সেটি ছাড়া পেয়ে চলে যাবে -(সহিহ বোখারীঃ ৫০৩১, সহিহ মুসলিমঃ ১৭২৪, সুনানে আন নাসায়ীঃ ৯৪২, মুয়াত্তা ইমাম মালিকঃ ৪৬০)।
স্থরভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতি। যেমন, প্রথমে সহজ কোন বিষয় দিয়ে শুরু করা, তারপর তারচেয়ে একটু কঠিন, তারপর তারচেয়ে জটিল। এরকম পদ্ধতি মহান আল্লাহপাক ও রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এর উপস্থাপনা সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। আমরা যদি মদপান নিষিদ্ধের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করি, তখন দেখতে পাই আল্লাহপাক চারটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে মদপানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। একবারেই মদপান হারাম করেন নি। প্রথম পর্যায়ে কোরআনের বাণী, ‘এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাকো’ -(সুরা আন নাহলঃ ৬৭)। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘোষণা করা হয় যে, ‘তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়’ -(সুরা আল বাক্বারাঃ ২১৯)। তৃতীয় ধাপে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্থ থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ’ -(সুরা আন নিসাঃ ৪৩)। শেষপর্যায়ে রাব্বুল আলামীন মদপানকে হারাম করে দেন। যার পরে আর মদ পান করার অবকাশ থাকে না। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও’ -(সুরা আল মায়িদাঃ ৯০)। এথেকে বোধগম্য হয় যে, স্টেপ বাই স্টেপ বা স্থরভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে শিখিয়েছেন। যাতে করে আমরা কঠিন বিষয়কে সহজ করে শিখে নিতে পারি। তেমনিভাবে প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী থেকে আমরা স্থরভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতি খোঁজে পাই। হাদীসের ভাষ্যমতে, হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মু’আয রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামান পাঠাবার সময়ে (তাঁর উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘তাদের (ইয়ামানবাসীদেরকে সর্বপ্রথম) এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর রাতদিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। অতঃপর যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা তাদের মধ্যে যারা (নিসাব পরিমাণ) মালের অধিকারী তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মাঝে তা বন্টন করে দেওয়া হবে’ -(সহিহ বোখারীঃ ১৩৯৫ ও ১৪৯৬, সহিহ মুসলিমঃ ১৩০)। অত্র হাদীসের আলোকে বোঝা যায় যে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এরকম পদ্ধতি গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা তা সহজে গ্রহণ করতে পারবে, শিখতে পারবে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন