শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হওয়ার কথা শিক্ষালয়ের প্রাঙ্গণ। যেখানে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ঠরা রাত দিন নিরাপদ থাকবেন। তবে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের বিশাল অংশ জুড়ে স্থায়ী সীমানা প্রাচীর না থাকা, নিরাপত্তা কর্মী এবং সিসি ক্যামেরার অপর্যাপ্তের কারণে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বহিরাগতদের হাতে যৌন হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছেন প্রতি নিয়ত। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত পরিবহন মাঠে বহিরাগত বখাটের হাতে এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও দায়িত্বশীলতার কারণেই নিরাপত্তার এ সঙ্কট বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশাল একটি অংশে স্থায়ী সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত পুরো ক্যাম্পাস। একই সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্কট এবং সিসি ক্যামেরার অপর্যাপ্ততায় এ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ফলে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবাধে প্রবেশ করে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, ছিনতাই, চুরি, মাদকের আড্ডাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ক্যাম্পাসে পেছনের অংশে তাঁরকাটা এবং সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অস্থায়ীভাবে সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়। কিন্তু দেখভালের অভাবে কিছুদিন পরেই সীমানা প্রাচীরের তাঁরকাটা উধাও হয়ে যায়। সীমানা বলতে এখন শুধু খুঁটিই অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনের পেছন থেকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ডান পাশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সীমানা প্রাচীর নেই। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত পরিবহন মাঠে যৌন হয়রানির শিকার হন এক ছাত্রী। তিনি ঐ দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। ক্যাম্পাসে আসার পর তার মুঠোফোনটি বাসে ফেলে যান। পরে তা খুঁজতে বাসে ফিরে আসলে সেখানে বহিরাগত এক বখাটে তাকে ঝাপটে ধরে। টেনেহেঁচড়ে বাসে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং পালিয়ে বাসের পেছনের আশ্রয় নেয় ভুক্তভোগী এ ছাত্রী। পরে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগীকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় বখাটে যুবক। ধাক্কায় নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারান ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এর আগে গত বছরের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় অর্থনীতি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী তার মেয়ে বন্ধুর সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন। বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী অস্ত্র দেখিয়ে ঐ ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় তার মুঠোফোন ও টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় বখাটেরা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই বহিরাগতদের হাতে শিক্ষার্থীদের ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়েছে, আবাসিক হলগুলোতেও বিভিন্ন সময়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন ২৭ জন এবং আনসার সদস্য রয়েছে মাত্র ২৭ জন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সংখ্যা অপর্যাপ্ত। তবে নতুন করে বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যকে যুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আরও নিরাপত্তাকর্মীর প্রয়োজন বলে জানান নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী সঙ্গে কথা বললে তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বহিরাগত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের জন্য সুরক্ষিত কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য অরক্ষিত। প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হলেও তারা হাত গুটিয়ে রয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডির নিরাপত্তার পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
এ ব্যাপারে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘি্নত হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, মেয়েটির সাথে যে ঘটনা হয়েছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক। আমরা উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে ক্যাম্পাসের যে অংশে প্রাচীর নেই ওই অংশে তাঁরকাটা দিয়ে প্রাচীর দেয়ার ব্যবস্থা করবো। আর ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রভোস্ট এবং প্রক্টরিয়াল বডির সাথে আলোচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন