আরবি ভাষায় অপবিত্রতাকে ‘হদছ’ এবং পবিত্রতাকে ‘তাহারাত’ বলা হয়। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুত তাউয়্যাবীনা ওয়া ইউহিব্বুল মূতা-ত্বাহ্যিরীনা।’ অর্থাৎ আল্লাহপাক তাওবাহকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘আত্তাহুরু শাতরুল ঈমান।’ অর্থাৎ পবিত্রতা ঈমানের অংশ। সুতরাং আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার জন্য পবিত্রতা সুলভ ঈমান অব্যাহত থাকা একান্ত জরুরি। ইসলামি শরীয়তে হদছ বা অপবিত্রতাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা: (ক) হদছে আকবার বা বড় অপবিত্রতা এবং (খ) হদছে আসগার বা ছোট অপবিত্রতা। অনুরূপভাবে তাহারাত বা পবিত্রতাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয়েছে। যথা: (ক) অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করা, (খ) দেহের সাথে সম্পর্কিত বস্তু বা কাপড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্তু অথবা স্থানের সাথে সম্পর্কিত অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করা এবং (গ) দেহ হতে উৎপন্ন অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করা।
যেমন: (১) নখ, (২) দেহের নিম্নাঙ্গে উৎপন্ন পশম এবং (৩) ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি। সুতরাং অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন সৎ কাজের ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ভিত্তি বলে পরিগণিত। তাই, স্মরণ রাখা দরকার যে, ভিত্তি যদি মজবুত ও সুদৃঢ় হয়, তাহলে তার উপর নির্মিত ইমারত বা স্থাপনার দীর্ঘস্থায়ীত্ব অবিসংবাদিত হয়ে থাকে। অন্যথায় তা’ দিন দিন নড়বড়ে হতে থাকে এবং কোনো এক সময় তা ধ্বসে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
এমনটি যেন না হয় তৎপ্রতি খেয়াল রেখে ইসলামি শরীয়ত অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জনের সীমাকে চিহ্নিত করে দিয়েছে। কেননা এটি এমন রুচিসম্পন্ন ও চয়নকৃত ব্যক্তিগণের রুচির ওপর নির্ভরশীল, যাদের মধ্যে মালাকুতী নূরের ঝর্ণা ধারা বিস্তার লাভ করেছে। ফলে, তারা যেই সমস্ত বিষয়সমূকে হদছ বা অপবিত্রতা বলা হয়, তা নিজেদের জন্য যেমন অপছন্দনীয় মনে করেছেন, তেমনি স্বীয় অনুসারীদের জন্যও অপছন্দনীয়বলে সাব্যস্ত করেছেন। একইভাবে যাকে তাহারাত বা পবিত্রতা বলা হয়, তা নিজেদের জন্য আনন্দদায়ক ও প্রশান্তিময় বলে মনে করেছেন এবং তাকে নিজেদের অনুসারীদের জন্যও অপরিহার্য কল্যাণকর বলে বিবেচনা করেছেন।
আমরা যদি সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর আগমন পূর্ববর্তী মিল্লাতগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে, ইহুদি, নাসারা, অগ্নি উপাসক ও মিল্লাতে ইসমাঈল (আ.)-এর অবশিষ্টাংশ সকলেই হদছ তথা অপবিত্রতাকে দুভাগে ভাগ করত, যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।
অন্ধকার যুগের আরবদের মাঝেও জানাবাতের পর (স্ত্রী সঙ্গমের পর দেহ শুদ্ধির জন্য) গোসল আমভাবে প্রচলিত ছিল। বিশ^নবী মোহাম্মদাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)ও হদছের তথা অপবিত্রতার উল্লিখিত দু’প্রকারের ন্যায় পবিত্রতা অর্জনেরও দুটি প্রকারের কথা ঘোষণা করলেন। হদছে আকবরের বিপরীতে তাহারাতে কোবরাকে অর্থাৎ গোসলকে (বড় অপবিত্রতার বিপরীত বড় পবিত্রতাকে) অপরিহার্য ঘোষণা করলেন। তা এজন্য যে, এ জাতীয় অপবিত্রতা স্বল্প সংখ্যক সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু তালবীছ বা কুমন্ত্রণার দিক থেকে অধিক হয়।
সুতরাং কঠিন কাজে আত্মাকে পবিত্র ও সতর্ক করার জন্য বড় পবিত্রতাকে অবলম্বন করার প্রয়োজনীযতা দেখা দেয়। অপরদিকে বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) হদছে ছোগরাকে তাহারাতে ছোগরার (ছোট অপবিত্রতাকে ছোট পবিত্রতার) অর্থাৎ, অজুর বিপরীত ঘোষণা করলেন। এর কারণ হলো, এ জাতীয় হদছে ছোগরা অধিক পরিমাণে সংঘটিত হয়। আর তালবীছ তথা কুমন্ত্রণার দিক থেকে অল্প সংখ্যক হয়ে থাকে। এতদ সম্পর্কে বেশি একটা সতর্কতা প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়ে না। যে সব বস্তুত হদছে আসগর বা ছোট অপবিত্রতার অর্থ বা চিহ্ন পাওয়া যায়, সেগুলো অসংখ্য। সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিরা তা জানে এবং বুঝে। অবস্থা, অবস্থান, পরিবেশ ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সকল মানুষকে তা অবহিত করা হয়ে থাকে।
আর এ কথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের তৃতীয় প্রকারটি পরিপূর্ণ শান্তিও তৃপ্তিদানের পরিচায়ক। কেননা, ঐ সকল বস্তু যার মধ্যে তাহারাত বা পবিত্রতার অর্থ, চিহ্ন এবং আনন্দ ও মনের প্রশান্তি বিদ্যমান, সেগুলো অসংখ্য। যেমন সুগন্ধি লাগানো, বিভিন্ন দোয়া-কালাম পাঠ করা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। বর্তমানে করোনাভাইরাসের উৎপাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা ফলাও করে বলা হলেও অজু-এর কথা মুখেও আনা হয় না। এটা প্রকৃত অর্থেই দুঃখজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন