মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাস আসলে আল্লাহ্পাক শয়তানকে শৃংখলিত করেন বা শিকল দ্বারা বেঁধে রাখেন। প্রশ্ন আসতে পারে কেন? অর্থাৎ আল্লাহ্পাক হলেন, “সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী” তাঁর ক্ষমতা নিঙ্কুষ, তিনি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়েও কারো প্রতি নির্ভরশীল হন না। তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ এক ও অদ্বিতীয় সত্তা। তাহলে তাঁর বান্দাদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা শয়তান কোথা থেকে পেল? নিঃসন্দেহে আল্লাহ্পাকের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আমি যে বিষয়টির উপর আলোকপাত করতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে , মহান আল্লাহ্পাক পবিত্র রমজান মাসে শয়তানকে কেন শৃংখলিত করেন? না কি মহানবী আমাদেরকে রুপক অর্থে এই তথ্যটি দিয়েছেন। কেননা বর্তমানে আমাদের মধ্যে শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মুসলমানের ঈমান-আকিদা এতটাই দূর্বল যে, আল্লাহ্র শক্তিকে আমরা যত না ভয় পাই, কার্যক্ষেত্রে শয়তানের শক্তিকে তার তুলনায় বেশি ভয় পাই (নায়ুজুবিল্লাহ্) অথচ আমাদের আদি পিতা শয়তানের প্ররোচনায় ভূল করে জমিনে পতিত হয়ে ৩৫০-৩৬০ বছর এই বলে কান্না-কাটি করেন, হে আমার রব, আমি আমার নফ্সের উপর যুলুম করেছি। দীর্ঘ সাড়ে তিনশত বছর যাবৎ হযরত আদম (আঃ) নিজের কৃত কর্মের জন্য নিজেকে দোষারোপ করেছেন। এক মূহুর্তের জন্য তিনি শয়তানকে অভিযুক্ত করে একটিও বক্তব্য দেন নি। প্রশ্ন হলো কেন? এর সহজ উত্তর হলো হযরত আদম আলাইহিস সালাম হলেন আল্লাহ্র খলিফা আর শয়তান হলো আল্লাহ্র অভিশপ্ত বান্দা, সুতরাং আল্লাহ্র খলিফার দ্বারা কোন অবস্থাতেই শোভনিয় নয় যে, তাঁর ভূল-ভ্রান্তির দায়-দায়িত্ব তিনি শয়তানের কাঁধে চাপিয়ে দিবেন। অনুরূপভাবে হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালামও মাছের পেটে থেকে যেই দোয়া করেছেন সেখানেও তিনি নিজের নফ্সের প্রতি জুলুমের কথা উল্লেখ করেছেন, আর এটাই স্বাভাবিক। আমরা কি আসলেই ঈমানদার? ঈমান মানে কি? আমরা ঈমান বলতে কি বুঝি? প্রথমত ঈমান মানে যদি বুঝায়, আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা তাহলে এই ঈমান শুধুমাত্র হযরত আদম (আঃ) -এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা তিনি সরাসরি আল্লাহ্পাকের সৃষ্টি। অর্র্থাৎ জান্নাতী পরিবেশে স্বয়ং আল্লাহ্পাকের তত্ত্বাবধানে তাঁর জন্ম। ফেরেশতারা তাঁর নিকট কোন অদৃশ্য বিষয় ছিল না, কোন আসমানি কিতাবের প্রয়োজনীয়তা ছিল না, জান্নাতীর ভাগ্যে কখনও মন্দ কিছু থাকতে পারে না, জান্নাতে কখনও কেয়ামত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। অতএব হযরত আদম আলাইহিস সালামের ঈমান মানে শুধুই মহান আল্লাহ্পাকের একক অস্তিত্ব। সম্মানিত সকল নবী রাসূলগণের ঈমান এক এবং অভিন্ন। অর্থাৎ নবী রাসূলগণ এবং ইমাম মাহ্দী আলাইহিস সালাম সরাসরি আল্লাহ্পাকের খলিফা বা প্রতিনিধি। তাঁদের প্রত্যেকের ঈমান এক আল্লাহ্পাকের অস্তিত্বে বিরাজমান। তাঁদের নিকট ফেরেশতা কোন অদৃশ্য বিষয় নয়। তাঁদের ভাগ্যে মন্দ বা অমঙ্গলের লেশমাত্র নেই। তাহলে ঈমানের যেই সাতটি বিষয় এগুলো কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? এগুলো মুলত সাধারণ ঈমানদারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই সাতটি বিষয় আমরা সবাই জানি। আমি এই বিষয় সমূহ নিয়ে পুনঃরায় আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আমি মূলত যে বিষয়টির উপর দৃষ্টি দিতে চাই তা হচ্ছে, শয়তানের শক্তি কতটুকু? এক কথায় উত্তর, মহান আল্লাহ্পাক শয়তানকে যতটুকু দিয়েছেন ততটুকু। “আল্লাহ্পাক হলেন সকল বিষয়ের উপর পূর্ণ ক্ষমতাধর”। সুতরাং শক্তির বিচারে যখন তুলনা মূলক আলোচনা হবে তখন আল্লাহ্পাকের শক্তির বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখতে হবে এই অর্থে, আল্লাহ্পাক হলেন স্রষ্টা আর বাকিরা হলো সৃষ্টি।
যুক্তিসংগত ভাবে সৃষ্টির মধ্যে শক্তি বা ক্ষমতার তুলনামূলক বিশ্লেষন হতে পারে কিন্তু অসুস্থ্য ব্যক্তি ছাড়া কোন সুস্থ্য ব্যক্তি স্রষ্টার ক্ষমতার সাথে সৃষ্টির ক্ষমতা বা শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষন করতে পারে না। শয়তানকে আল্লাহ্পাক কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দিয়েছেন, রিজিকের পূর্ণ বন্দোবস্থ করেছেন, মূর্হুতের মধ্যে গোটা পৃথিবী চষে বেড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছেন, এমনকি প্রতিটি আদম সন্তানের প্রতিটি রক্ত কনিকায় প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন আমরা যদি চিন্তা করি, আল্লাহ্পাক শয়তানকে যত ক্ষমতা দিয়েছেন তার সমপরিমান ক্ষমতা কি তিঁনি অন্য কাউকে দিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমাদের গভীর মনোযোগের সাথে যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো ক্ষমতা বা শক্তি কাকে বলে? যে শক্তি বা ক্ষমতা ঐ ব্যক্তি বা তার অনুসারীদের জাহান্নামে নিয়ে যায়, সেই শক্তি বা ক্ষমতাকে অপশক্তি বা অপক্ষমতা বলাই শ্রেয়। আসুন এবার প্রতিপক্ষের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করি। শয়তান নিজেকে নবী-রাসূলগণের প্রতিপক্ষ মনে করে কিন্তু নবী-রাসূলগণ কখনও নিজেদেরকে শয়তানের প্রতিপক্ষ মনে করেন না। কেননা তাঁরাতো আল্লাহ্র প্রতিনিধি। অর্থাৎ আল্লাহ্র মনোনীত বা নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের কোন প্রতিপক্ষ থাকতে পারে না। তাহলে শয়তান মূলত কাদের প্রতিপক্ষ? এক কথায় উত্তর, পবিত্র কুরানুল কারিমের ঘোষণা অনুযায়ী,
“ নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু ”। অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতীই শয়তানের মূল প্রতিপক্ষ।
আমাদের মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন। “আনা সাইয়্যিদু উলদি আদামা ওলা ফাখার” অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতীর মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ, এ ব্যাপারে আমার কোন অহংকার নেই। মহান আল্লাহ্পাক আমাদের মহানবীকে কি পরিমান ক্ষমতা প্রদান করেছেন? আসুন আমরা এ বিষয়ে একটু ভেবে দেখি, শয়তানের অভিশপ্ত হায়াত কেয়ামত পর্যন্ত। আর মহানবীর হেদায়েতের হায়াত কুরআনুল কারীম উঠে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। শয়তান হলো জাহান্নামীদের সর্দার। আর মহানবী জান্নাতীদের সর্দার। শয়তানকে আল্লাহ্পাক দুনিয়াতে রিজিকের নিরাপত্তা দিয়েছেন। আর মহানবীকে আল্লাহ্পাক পবিত্র সব রিজিকের সাথে দুনিয়াতে জম্ জম্ এবং আখিরাতে হাউযে কাওসার দান করেছেন। শয়তান মূহুর্তে পুরো পৃথিবী চষে বেড়াতে পারে। আর মহানবীর কষ্টকরে পৃথিবী চষে বেড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না, তাঁর পক্ষ থেকে কোটি কোটি ফেরেশতারা গোটা পৃথিবী শুধু নয়, সাত আসমান সাত জমিন এমনকি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়ান। শয়তান মানুষের রক্ত কনিকায় প্রবেশ করে মানুষকে বিপদগামী করার চেষ্টা করে। আর মহানবীর নূরের দৃষ্টি যাঁর উপর পতিত হয়, সে ফারুকে আযম হয়ে যায়! শয়তান তাকে ধোঁকা দিবে তো দূরে থাক, তাঁর মুখোমুখি হতে ভয় পায়! সংগত কারনে শয়তান ঐ ঈমানদারের একটি চুলও স্পর্শ করতে পারে না, যাঁর হৃদয় মহানবীর প্রতি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি।
তর্ক করে কি পেয়েছিস্? হে অবিশ্বাসী,
কি পাওয়া যায়? দেখনা, হযরতকে ভালোবেসে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন