শয়তান মুমিনের প্রধান শত্রু। কুরআনের অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ শয়তান সম্পর্কে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। তাকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
‘আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৬৮) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
‘হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)
মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে কুমন্ত্রণা দিয়ে পথভ্রষ্ট করাই শয়তানের একমাত্র কাজ। আদম (আ.) কে সিজদা করার আদেশ অমান্য করার অপরাধে আল্লাহ তায়ালা যখন শয়তানকে তাঁর মহান দরবার থেকে বিতাড়িত ঘোষণা করলেন, তখন থেকেই মানুষের প্রতি তার চরম বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই সে মানুষকে বিপথগামী করার দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করেছিল। সে আল্লাহর উদ্দেশে বলেছিল,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لأغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
‘আপনার ইজ্জতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। তবে আপনার মুখলেস বান্দাদের ব্যতীত।’ (সূরা সোয়াদ-৮২-৮৩)।
শয়তান কীভাবে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে তা-ও সে সেদিন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিল। সে বলেছিল,
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
‘আপনি আমাকে যেমন পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরলপথে ওতপেতে বসে থাকব। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আল-আরাফ১৬-১৭)।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ আয়াতের তাফসিরে বর্ণিত হয়েছে, শয়তানের ‘সামনের দিক থেকে আসব’ কথাটির অর্থ আমি তাদের আখেরাতের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করব। ‘পেছন দিক থেকে আসব’ অর্থ আমি তাদের অন্তরে দুনিয়ার মোহ সৃষ্টি করব। ‘ডান দিক থেকে আসব’ অর্থ আমি তাদের ধর্মের বিধিনিষেধের প্রতি সন্দিহান করে তুলব। ‘বাম দিক থেকে আসব’ অর্থ আমি পাপ কাজকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরব।(তাফসিরে মাজহারী)।
শয়তানকে কাদের সঙ্গী করে দেয়া হবে ?
শয়তান মানুষকে পথভ্রান্ত করার জন্য চতর্মুখী চক্রান্ত ও হামলা চালাবে। এ হামলায় শয়তান সকলকে আয়ত্ব করতে পারবেনা এটি তার বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়। সে বলেছিল,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لأغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
‘আপনার ইজ্জতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। তবে আপনার মুখলেস বান্দাদের ব্যতীত।’ (সূরা সোয়াদ-৮২-৮৩)।
আয়াতদ্বারা প্রমানিত আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ঈমানেদারদের সে পথভ্রষ্ট করতে পারবেনা। এর পরও কিছু মানুষকে তাদের বিভিন্নমুখী কর্মকান্ডের কারনে মহান আল্লাহ শয়তানকে তাদের নিত্যসঙ্গী বানিয়ে দেবেন। শয়তানকে যাদের সঙ্গী বানিয়ে দেয়া হবে অথবা শয়তান যাদের সঙ্গী হবে নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলোঃ
১. আল্লাহর যিকির থেকে যারা গাফেল বা অমনোযোগী থাকবেঃ
মহান আল্লাহ সর্বাবস্থায় তাঁর যিকির করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। যিকির শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয। শুধুমাত্র মুখে মুখে আল্লাহর নাম স্মরন করাই যিকির শব্দটির অর্থে পরিপূর্ণতা আসেনা। বরং জীবনের সকল পর্যায়ে সকল কাজে আল্লাহকে স্মরণে রেখে তাঁর বিধান মতো জীবন পরিচালনাই যিকির। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ আল্লাহর যিকির বিমুখ হয় শয়তানকে তাদের সঙ্গী হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ یَّعۡشُ عَنۡ ذِکۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَیِّضۡ لَہٗ شَیۡطٰنًا فَہُوَ لَہٗ قَرِیۡنٌ ﴿۳۶﴾
আর যে রহমানের যিকর থেকে বিমুখ হয় আমরা তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান, অতঃপর সে হয় তার সহচর। ( সূরা যুখরুফ- ৩৬)
কারীন ((قرين)) আরবি শব্দ। এর অর্থ হল: সঙ্গী, সাথী ও সহচর। কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রতিটি মানুষের নিকট একজন করে জিন-শয়তান নিযুক্ত করা আছে। তার কাজ মানুষকে পথভ্রষ্ট করা, অন্যায়, অশ্লীল ও কুকর্মে প্ররোচিত করা এবং ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করা বা বাধা দেয়া। একেই কারীন বা সহচর শয়তান বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,“(তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে) তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেয়া হয় নি।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮২৪]
আলোচ্য আয়াতে মুফাস্সিরগণ যিকর-এর কয়েকটি অর্থ উল্লেখ করেছেন।
১.কুরআন
২.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ´আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেমন- অন্য আয়াতে ذِكْرًا رَّسُولًا বলা হয়েছে। [কুরতুবী] তবে অধিকাংশের নিকট এখানে কুরআন বোঝানো হয়েছে। মুল বক্তব্য হলো যে ব্যক্তি কুরআনের বিধি-বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, কুরআনের নির্দেশের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; আল্লাহ ব্যতিত অন্যদের থেকে হিদায়াত গ্ৰহণ করে। শয়তান তাদের সবসময়ের সঙ্গী হয়ে যায়। সে তাদের কুমন্ত্রণা দিয়ে সৎকর্ম থেকে বিরত রাখে এবং অসৎকর্ম তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে।
২. আল্লাহ ও আখিরাতকে যারা অবিশ্বাস করেঃ
আল্লাহ ও আখিরাতের উপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস করা ঈমানের অন্যতম প্রধানতম ভিত্তি। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ ও আখিরাতের উপর যারা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেনা তাদের জন্যও শয়তান সঙ্গী হিসেবে পরিনত হয়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَنْ يَكُنِ الشَّيْطَانُ لَهُ قَرِينًا فَسَاءَ قَرِينًا (38)
যারা মানুষকে দেখানোর জন্য দান করে এবং পরকাল ও আল্লাহর প্রতি যাদের ঈমান নেই,আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না এবং যাদের সহচর শয়তান সে কতই না নিকৃষ্ট সঙ্গী । ( সূরা আন-নিছা-৩৮)
৩.যারা লোক দেখানোর জন্য নিজেদের ধন-সম্পদ খরচ করেঃ
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ তাঁর পথে ব্যয় করার জন্য নির্দেশণা প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে যারা একান্তভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে, শয়তান তাদের সঙ্গী হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَنْ يَكُنِ الشَّيْطَانُ لَهُ قَرِينًا فَسَاءَ قَرِينًا
যারা মানুষকে দেখানোর জন্য দান করে এবং পরকাল ও আল্লাহর প্রতি যাদের ঈমান নেই,আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না এবং যাদের সহচর শয়তান সে কতই না নিকৃষ্ট সঙ্গী । ( সূরা আন-নিছা-৩৮)
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করাকে হাদীসে শির্ক বলেও অভিহিত করা হয়েছে। শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করল সে শির্ক করল। যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করল সে শির্ক করল এবং যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দানসদকা করল সে শির্ক করল’। [মুসনাদে ত্বায়ালেসীঃ ১১২০, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪/৩৬৫]
মুল কথা হলো যে ব্যক্তি কুরআনের বিধি-বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, কুরআনের নির্দেশের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; আল্লাহ ব্যতিত অন্যদের থেকে হিদায়াত গ্ৰহণ করে। শয়তান তাদের সবসময়ের সঙ্গী হয়ে যায়। সে তাদের কুমন্ত্রণা দিয়ে সৎকর্ম থেকে বিরত রাখে এবং অসৎকর্ম তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে।
শয়তানের সঙ্গীদের পরিণিতিঃ
মহান আল্লাহ শয়তানকে যাদের সঙ্গী বানিয়ে দেবেন তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের পরিনতি খুব সুখকর নয় বরং তাদের জন্য রয়েছে এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতি। তাদের জন্য মহান আল্লাহ যেসব পরিণতি উল্লেখ করেছেন তা নিম্নরুপঃ
১, জীবনকে সংকুচিত করে দেয়া হবেঃ
যারা আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ থাকবে মহান আল্লাহ তাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনকে সংকুচিত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِکۡرِیۡ فَاِنَّ لَہٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡکًا
আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত (সূরা ত্বাহা-১২৪ )
কোথায় তাদের সে সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবন হবে তা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি মত রয়েছেঃ
এক) তাদের দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হবে। তাদের কাছ থেকে অল্পে তুষ্টির গুণ ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সাংসারিক লোভ-লালসা বাড়িয়ে দেয়া হবে। যা তাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে। ফলে তাদের কাছে যত অর্থ-সম্পদই সঞ্চিত হোক না কেন, আন্তরিক শান্তি তাদের ভাগ্যে জুটবে না। সদা-সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার চিন্তা এবং ক্ষতির আশঙ্কা তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। কেননা, সুখ-শান্তি অন্তরের স্থিরতা ও নিশ্চিন্ততার মাধ্যমেই অর্জিত হয়; শুধু প্রাচুর্য্যে নয়। [ ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
দুই) অনেক মুফাসসিরের মতে এখানে সংকীর্ণ জীবন বলতে কবরের জীবনকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাদের কবর তাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে যাবে বিভিন্ন প্রকার শাস্তির মাধ্যমে। এতে করে কবরে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে দেয়া হবে। তাদের বাসস্থান কবর তাদেরকে এমনভাবে চাপ দেবে যে, তাদের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং (مَعِيشَةً ضَنْكًا) এর তাফসীরে বলেছেন যে, এখানে কবর জগত ও সেখানকার আযাব বোঝানো হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৮১ নং- ৩৪৩৯, ইবনে হিব্বানঃ ৭/৩৮৮, ৩৮৯ নং- ৩১১৯] তাছাড়া বিভিন্ন সহীহ হাদীসে কবরের যিন্দেগীর বিভিন্ন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে, তা থেকে বুঝা যায় যে, যারা আল্লাহ, কুরআন ও রাসূলের প্রদর্শিত দ্বীন থেকে বিমুখ হবে, কবরে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ´আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “মুমিন তার কবরে সবুজ প্রশস্ত উদ্যানে অবস্থান করবে। আর তার কবরকে ৭০ গজ প্রশস্ত করা হবে। পূর্নিমার চাঁদের আলোর মত তার কবরকে আলোকিত করা হবে। তোমরা কি জান আল্লাহর আয়াত (তাদের জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন) কাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে? তোমরা কি জানো সংকীর্ণ জীবন কি? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ´আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তা হল কবরে কাফেরের শাস্তি। যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ করে বলছি- তাকে ন্যস্ত করা হবে ৯৯টি বিষাক্ত তিন্নিন সাপের কাছে। তোমরা কি জানো তিন্নিন কি? তিন্নিন হল ৯৯টি সাপ। প্ৰত্যেকটি সাপের রয়েছে ৭টি মাথা। যেগুলো দিয়ে সে কাফেরের শরীরে ছোবল মারতে থাকবে, কামড়াতে ও ছিড়তে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। [ইবনে হিব্বানঃ ৩১২২, দারেমীঃ ২৭১১, আহমাদঃ ৩/৩৮, আবু ইয়া´লাঃ ৬৬৪৪, আব্বাদ ইবনে হুমাইদঃ ৯২৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৩/৫৫]
২. কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবেঃ
আল্লাহর যিকির থেকে যারা বিমুখ থাকবে তারা দুনিয়াতে চক্ষুস্মান হওয়া সত্বেও হাশরের মাঠে তাদের অন্ধ করে উঠানো হবে। এ ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন,
وَّ نَحۡشُرُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَعۡمٰی قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِیۡۤ اَعۡمٰی وَ قَدۡ کُنۡتُ بَصِیۡرًا ﴿۱۲۵﴾
এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় জমায়েত করলেন? অথচ আমি তো ছিলাম। চক্ষুষ্মান।((সূরা ত্বাহা-১২৫)
অর্থাৎ তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় হাশার করা হবে। এখানে অন্ধ অবস্থার কয়েকটি অর্থ হতে পারে- (এক) বাস্তবিকই সে অন্ধ হয়ে উঠবে। (দুই) সে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। (তিন) সে তার পক্ষে পেশ করার মত কোন যুক্তি থেকে অন্ধ হয়ে যাবে। কোন প্রকার প্রমাণাদি পেশ করা থেকে অন্ধ হয়ে থাকবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
৩.হাশরের মাঠে আল্লাহ তাদেরকে ভুলে থাকবেন/ জাহান্নামের জন্য ছেড়ে দেবেনঃ
দুনিয়াতে শয়তান যাদের সঙ্গী হবে মহান আল্লাহ হাশরের মাঠে তাদের দিকে নজর দিবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামের জন্য ছেড়ে দেবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ کَذٰلِکَ اَتَتۡکَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیۡتَہَا ۚ وَکَذٰلِکَ الۡیَوۡمَ تُنۡسٰی ﴿۱۲۶﴾
তিনি বলবেন, এরূপই আমাদের নিদর্শনাবলী তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে। ( সূরা ত্বাহা-১২৬)
نسيان শব্দটির অর্থ বিস্মৃত হওয়া ছাড়াও আরেকটি অর্থ ছেড়ে রাখা। অর্থাৎ যেভাবে আমার হেদায়াতকে দুনিয়াতে ছেড়ে রেখেছিলে তেমনি আজ তোমাদেরকে জাহান্নামে ছেড়ে রাখা হবে। [ফাতহুল কাদীর] তখন আয়াতের অর্থ হবে- সে বলবেঃ হে আমার রব! আমাকে কেন আমার যাবতীয় যুক্তিহীন অবস্থায় হাশর করেছেন? আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ অনুরূপভাবে তোমার কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলো ত্যাগ করে ভুলে বসেছিলে, তাই আজকের দিনেও তোমাকে যুক্তি-প্রমাণহীন অবস্থায় অন্ধ করে ত্যাগ করা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। কারণ এটা তো তোমারই কাজের যথোপযুক্ত ফল। [ইবন কাসীর]
৪.চূড়ান্ত পরিণতি হলো জাহান্নামঃ
শয়তান ও তার অনুসারীদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো জাহান্নাম। আল্লাহ শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ
‘বের হয়ে যাও এখান থেকে অপমানিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। যারাই তোমার অনুসরণ করবে তাদের এবং তোমাদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করে দেবো।’ (সূরা আল-আ‘রাফ:১৮)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
‘তোমার প্রভুর শপথ! আমি এদের অবশ্যই একত্রিত করবো, একত্রিত করবো শয়তানদেরও। অতঃপর এদের সবাইকে হাঁটু গাড়া অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে এনে জড়ো করবো।’(সূরা মারইয়াম:৬৮)
শয়তানের ধ্বংসাত্মক আক্রমণ ও প্রতারণা থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। পারে শুধু সত্যিকার মুমিন, যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করে,প্রকৃত অর্থে আল্লাহর উপর নির্ভর করে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং নিজেদের রবের ওপর নির্ভর করে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো আধিপত্য নেই।’ (সূরা আন-নাহ্ল:১০০) যে আল্লাহর সাখে বন্ধুত্ব করবে, তাকে অবশ্যই শয়তানের সাথে দুশমনী করতে হবে। আর যে আল্লাহ থেকে বিমুখ হবে, শয়তান তার বন্ধু হবে।
আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করা। তাঁর সকল আদেশের অনুসরণ করা। তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করা। সকল সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহর আদেশ মানার মধ্যে। আর অপমান ও লাঞ্ছনা শয়তানের অনুসরনে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন