ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ সমাপ্তির সময়সীমা এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ করতে পারেনি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে এই সড়কে যান চলাচল ও পথচারীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এমন অভিযোগ এ সড়কের যাত্রী ও সচেতন মহলের।
জানা যায়, সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত সকল কাঁচামালের গুণগত মান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বিলম্বের কারণ হিসেবে বৃষ্টি ও বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা অংশের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সড়কে চলাচল করা যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে পানি জমে যায়। কাদা মাটিতে একাকার হয়ে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জেলার পূর্বধলার হিরনপুর এলাকার বাসিন্দা মোজাহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজটি সময় মতো শেষ হচ্ছে না। এতে এলাকাবাসী ও সড়ক ব্যবহারকারী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শ্যামগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী কেরামত আলী বলেন, এই সড়কের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কেনো যে কাজ শেষ হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার কান্দুলিয়া পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। প্রায় ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এই কাজ সমাপ্তির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। দুটি প্যাকেজে এই কাজ ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগে পেট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং ও তানভির কনস্ট্রাকশন নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে কাজ পায় এমএম বির্ল্ডাস, ইনফ্লাটেক ও তানভির কনস্ট্রাকশন নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। কিছুটা বিলম্বে কাজ শুরু করে তারা। সড়কের কিছু কিছু জায়গায় কাজ করলেও বেশিরভাগ কাজ এখনও বাকি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজে পেট্রোবাংলার বিটুমিনের পরিবর্তে নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন দিয়ে ওভারলে সিলকোর্টের কাজ করা হয়। সড়কে ৬০ মিলি ওভারলে থিকনেসের কথা থাকলেও স্থানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ মিলি পর্যন্ত ওভারলে কার্পেটিং করা হয়। এছাড়াও বেস্ট অব ওয়ানে (পাথরের মেকাডম) ৭০ ভাগ পাথরের সঙ্গে ৩০ ভাগ বালি সংমিশ্রণের স্থলে প্রায় ৬০ ভাগ বালির সঙ্গে ৪০ ভাগ পাথর মিশ্রণেরও অভিযোগ উঠেছে। এমন কি সড়কের প্রাইমকোড করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল এবং বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়েছে বলেও দাবি তার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজারের পূর্ব ও পশ্চিমপাশ, ইসবপুর মোড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে ভবেরবাজার, নারান্দিয়া, হিরনপুর, কুতুবপুর, হাটবারেঙ্গা, বাগড়া, চলিশাসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার বেহালদশা। ছোট বড় অসংখ্য গর্ত, ইট বালি উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ওই সমস্ত গর্তে পানি জমে রয়েছে। অন্তত ১০টি পয়েন্ট মারাত্মক দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। এতে আটকা পড়ছে যানবাহন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে পরিবহন যাত্রীদের।
বাসচালক মামুন জানান, এমনিতেই যানবাহন বেশি। এমন অবস্থায় বছরের পর বছর রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি সড়কে দুর্ভোগের অন্যতম কারণ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভির কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের কাজে ব্যবহৃত সকল মালামাল বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে তারপর কাজে লাগানো হয়। সুতরাং খারাপ মাল ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও গত বছরে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের কয়েক লাখ ফুট বালি পানিতে ভেসে যায়। পরে করোনার কারণে কাজ করা যায়নি। তবে যে কাজ বাকি আছে তা আগামী ৩ মাসের মধ্যেই শেষ হবে।
নেত্রকোনার পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার কান্দুলিয়া পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহ নেত্রকোনা সড়কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মেরামতের নামে ঠিকাদার এবং ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই চরম দুর্ভোগ। নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, সড়কটির সংস্কার কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। করোনা ও বৃষ্টির কারণে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। ঠিকাদারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন