ইসলামপূর্ব যুগকে বলা হয় আইয়ামে জাহিলিয়্যাত বা অন্ধকার যুগ। যে যুগে ন্যায় ও ইনসাফের কোনো বালাই ছিল না। নারীদের বাঁচার কোনো অধিকার ছিল না। মেয়ে সন্তান জন্মানো যেখানে ছিল অপরাধ। তারপরও যেই সমস্ত নারী বেঁচে যেত, তারা হতো ভোগের বস্তু। ভোগপন্য ছাড়া অন্যকোনো পরিচয় তাদের ছিল না। ব্যভিচার ও ধর্ষণ যেখানে ছিল নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার।
ইসলাম একমাত্র ধর্ম যে নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে। ব্যভিচারকে অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ ঘোষণা করেছে। নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে। শালীন ও ভদ্র পোশাক পরিধানের কথা বলেছে। নারী-পুরুষকে চক্ষু অবনত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।
ব্যভিচার ও ধর্ষণ বন্ধে ইসলামে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির বিধান দিয়েছে। ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যুদÐ কার্যকর করার বিধান দিয়েছে। আর ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে ১০০ কশাঘাত করবে...।’ (সুরা : নূর : ২)। মনে রাখতে হবে, এ শাস্তি কার্যকর করবে রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসন।
এ তো গেল ব্যভিচারের শাস্তির কথা। ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য ও ভয়ঙ্কর অপরাধ হচ্ছে ধর্ষণ। হত্যার পর সবচেয়ে বড় গুনাহ ধর্ষণ করা। ধর্ষণের বেলায় একপক্ষ থেকে ব্যভিচার হয়ে থাকে। অন্যপক্ষ হয়ে থাকে নির্যাতিত বা মজলুম। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে তার কোনো পাপ নেই। কেননা ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বল প্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৪৫)। ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি অপরাধ হয়ে থাকে। এক. সম্ভ্রম লুণ্ঠন। দুই, ব্যভিচার। তিন, বল প্রয়োগ। ব্যভিচারের জন্য কোরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তিই সে পাবে। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদÐ দিতে হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। এতে যদি তার মৃত্যুও হয়।
আখেরাতে ব্যভিচারের শাস্তির কথা বলতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা আল্লাহতাআলার পাশাপাশি অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহতাআলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরী‘আত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানেই চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে, তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহতাআলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহতাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আল-ফুরকান : ৬৮-৭০)। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন, তোমরা যিনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সূরা আল-ইসরা : ৩২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন