শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

কবিতা প্রসঙ্গে রাসূল (সা:)

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪১ এএম

* “কবিতা সুসমঞ্জস কথা মালা, যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ সে কবিতাই সুন্দর। আর যে কবিতায় সত্যের আপলাপ হয়েছে সে কবিতায় মঙ্গল নেই।” (রাসূল সাঃ)

* “কবিতা কথার মতোই। ভালো কথা যেমন সুন্দর, ভালো কবিতাও তেমনি সুন্দর এবং মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতোই মন্দ।” (রাসূল সাঃ)

* “কোনো-কোনো কবিতায় রয়েছে প্রকৃষ্ঠ জ্ঞানের কথা।” (রাসূল সাঃ)

* “যে দুটো মনোরম আভরণে বিশ্বাসীকে আল্লাহ সাজিয়ে থাকেন, কবিতা তার একটি।” (রাসূল সাঃ)
রাসূলে করীম (সাঃ) কবি ও কবিতার পৃষ্ঠপোষকই ছিলেন না, নবুয়তের মতো আসমানী গুরু দায়িত্ব পালনের মধ্যে ও তিনি কবি ও কবিতাকে উৎসাহিত করতেন।

কবি ও কবিতা নিয়ে ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের মধ্যে নানা কুসংস্কার ও এর অপব্যবহার প্রচলিত ছিল। আরব দেশ কবিতার দেশ। কবি ও কবিতার জন্য বিখ্যাত। প্রাক-ইসলাম যুগে গোত্র বিভক্ত আরব কবিরা স্বগোত্রের প্রশংসা কীর্তন এবং অপর গোত্রের নিন্দাবাদে ছিলেন তৎপর। ইসলাম কায়েম হবার পর জাহিলী যুগের এই কবিরা বিপন্ন বোধ করেন। কবিদের কবিতায় ইসলামি ভাবাদর্শ ফুটে উঠতে থাকে। কবি ও কবিতার বিরুদ্ধে কিছু সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূল (সঃ) এর কাছে ছুটে গেলেন তৎকালীন প্রধান কবিগণ আব্দুল্লাহ ইব্নে রাওয়াহ, কাব ইব্নে মালিক; হাসান ইব্নে সাবিত (রাঃ) প্রমুখ। কাঁদতে কাঁদতে তারা বললেন ঃ এ আয়াত (সূরা-‘আশ্- শোয়ারা’ (কবিগণ) নাযিল হয়েছে এবং আমরা কবি আমাদের কি উপায় হবে? রাসূল (সাঃ) তখন তাদের বললেন ঃ সম্পূর্ণ সূরাটি পড়; ঈমানদার নেককারদের বলা হয় নি। তারা তখন নিশ্চিত হয়ে চলে গেলেন। আয়াতটিতে স্পষ্ট দু’টি ভাগ আছে এক ভাগে আছে বিভ্রান্ত ও মোনাফেক অর্থাৎ পথভ্রষ্ট কাবীদের কথা, আরেক ভাগে আছে বিশ্বাসী কাবীদের কথা। বিভ্রান্ত মোনাফেক কবীদের সম্বন্ধেই হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে, অভয় দেয়া হয়েছে বিশ্বাসী কবিদের।

শত্রুপক্ষ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ‘কবি’ আখ্যায়িত করে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে পবিত্র কোরআনে বলা হয় ঃ ‘আমরা তাকে (রাসূল সাঃ) কবিতা রচনা শিক্ষা দেইনি এবং এরূপ কাজ তার পক্ষে শোভনও নয়।” রাসূল (সাঃ) কবি ছিলেন না। কিন্তু কবিতার সমঝাদার ও গুনগ্রাহী ছিলেন। সে সময় কবিতা যুদ্ধাস্ত্রের মতোই শক্তিশালী ছিলো। সে সময় প্রতিপক্ষ কবিরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করছিলো, রাসূল (সাঃ) তখন বলে, ‘যারা হাতিয়ার নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলকে সাহায্য করছে, কথার (কবিতা) দ্বারা আল্লাহর সাহায্য করতে কে তাঁদের বাধা দিয়েছে? তখন কয়েকজন সাহাবী কবি এই কাজে এগিয়ে আসেন। তারা হলেন হরযত হাস্সান ইব্নে সাবিত, কা’ব ইব্নে মালিক, আব্দুল্লাহ্ ইব্নে রাওয়াহা; হযরত লবিদ ইব্নে রবিতা (রাঃ) প্রমুখ।

রাসূল (সাঃ) কবিদের উৎসাহিত করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তাদের পরিচর্যাও করতেন। তিনি কবিদের যে অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা দিতেন তা ছিল উপমারহিত। তিনি তাদের পুরষ্কৃত করতেন। তিনি মসজিদে নববীর ভেতরে শুধুমাত্র কবিতা পাঠ করার জন্য একটা আলাদা মিম্বার (মঞ্চ) তৈরী করে দেন। সেখান থেকে কবি হাস্সান বিন্ সাবিত (রাঃ) সাহাবীদের কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। কবি হাস্নান কবিতা আবৃত্তি শুরু করলে রাসূলে খোদা (সাঃ) তার জন্যে এ বলে দোয়া করতেন ঃ ‘হে আল্লাহ, রুহুল কুদ্দসকে দিয়ে তুমি তাকে সাহায্য করো।”

অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, ‘মহানবী (সাঃ) মসজিদে হাসানের জন্য উঁচু মিম্বার তৈরী করিয়ে নেন। তাঁর ওপরে চড়ে হাসান নবীজীর গৌরব গাঁথা এবং মুশারিকদের নিন্দা কাব্য আবৃত্তি করতেন। কখনো মহানবী (সাঃ) বলতেন, হাস্সানের জিভ যতদিন রাসূলের পক্ষ হয়ে কবিতার বাণী শুনিয়ে যাবে, ততদিন তার সাথে জিব্রীল থাকবেন।’

কবিতার জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সাহাবী কবিদের প্রতি ছিল মহানবীর কঠোর নির্দেশ।

হযরত আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, ‘মহানবী (সাঃ) বললেন, তোমরা কাফির মুশরিকদের নিন্দা করে কাব্য লড়াইয়ে নেমে পড়। তীরের ফলার চেয়ে তা আরো বেশী আহত করবে তাদের। ইব্নু রওয়াহা কে পাঠানো হলো। সম্পূর্ণ মুগ্ধ হতে পারলেন না রাসূল (সাঃ)। কা’আব বিন মালিক ও এলেন। অবশেষে যখন হাস্সান এলেন বললেন, সবশেষে তোমরা পাঠালে ওকে? ওতো লেজের আঘাতে সংহারকারী তেজোদৃপ্ত সিংহ শাবক। কথা শুনে আনন্দে জিভ নাড়তে লাগলেন হাস্সান। বললেন, যিনি আপনাকে সত্যবানী দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ। এ জিভ দিয়ে ওদের মধ্যে চামড়া ছুলে ফেলার মত গাত্রদাহ সৃষ্টি করেই ছাড়ব।’ আর এভাবেই হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ) ‘রাসূলের কবি’ অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

কবি সাহাবী হাস্সান বিন সাবিতের প্রতি রাসূল (সাঃ) এর ভালোবাসা এতোটাই প্রবল ছিল যে, একবার মিশরের রোমক সম্রাট দুই অপরূপা সুন্দরীকে রাসূল (সাঃ) এর কাছে উপঢৌকন হিসেবে পাঠালে, এর মধ্য থেকে শিরী নামের একজনকে তিনি হাস্সান (রাঃ) এর সংগে বিয়ে দিয়ে দেন। যুদ্ধে অংশ না নিলে গণীমতের মালের অংশ প্রদান করা হতো না। কিন্তু হাস্সান, রাসূলের নির্দেশে গণীমতের মালের অংশ পেতেন। তার কবিতা ছিল ‘উন্মুক্ত এবং উত্তোলিত তরবারির মতো।’

মহানবী (সাঃ) অনেককেই জীবিতাবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। কবিতা লেখার পুরস্কার হিসাবে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন-হাস্মান বিন্ সাবিত (রাঃ)। কবিদের ওপর রাসূল (সাঃ) এর গভীর আস্থাও ছিল। একবার আব্দুল্লাহ ইব্নে রাওয়াহন (রাঃ) এর ওপর অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব অর্পন করেন। এই কবি যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতির দায়িত্বও লাভ করেছিলেন। এবং যুদ্ধরত অবস্থায় ‘শহীদ’ হওয়ার মর্যাদাও লাভ করেন। (চলবে)
লেখক : অবসর প্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
‌বিদ‌ু‌্যত ৬ মার্চ, ২০২২, ২:৩০ এএম says : 0
আ‌মি জান‌তে চাই নবী সাঃ এর বানীসমূহ প‌রিবর্তন না ক‌রে ক‌বিতা আকা‌রে লিখা যা‌বে কিনা? লিখ‌লে এ ব‌্যাপা‌রে হা‌দিস কি ব‌লে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন