বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : ইসলামে জন্মভূমি ভালোবাসার দিক-নির্দেশনা আছে কি?

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

উত্তর: মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি জন্ম ভুমি ও মাটি। কর্মময় জীবনে জন্ম ভুমি ও দেশের কথা কখনো ভুলতে পারি না।মাতৃভুমির ভালোবাসা কাকে বলে? মানুষের ভালোবাসা,গভীর আবেক,অনুভুতি ও মমতাবোধকে জন্মভুমির ভালোবাসা বলে। ইসলাম ধর্মে দেশের স্বাধীন-সাবভৌমত্ব সর্ম্পকে এরশাদ হচ্ছে-‘যেখানে তাদের পাবে হত্যা করবে এবং যে স্থান থেকে তারা তোমাদের বের করে দিয়েছে তাদেরও সে স্থান থেকে বের করে দেবে’(বাকারা-১৯১)। মাতৃ ভুমির প্রতি বিশ্ব নবী (দ) এর ভালোবাসা। একাধিক নবী ও রাসুল (দ) কে দেশ থেকে বহিস্কারের হুমকি দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে বুঝা যায় নবী-রাসুলগণ দেশকে ভালোবাসতেন। এরশাদ হচ্ছে-‘তাদের সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতারা বলল,হে শোয়াইব! আমরা তোমাকে এবং তোমার সঙ্গে যারা ইমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বহিস্কার করবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল,যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও’ (আরাফ-৮৮)।

ইসলামে মাতৃভুমির ভালোবাসা কথাটি খুবেই গুরুত্ব পুর্ণ। এ ব্যাপারে বিশ্ব নবী (দ) বলেন,‘প্রত্যেক মানুষের উচিৎ দেশকে ভালোবাসা। যে লোক দেশকে ভালোবাসে না,সে প্রকৃত ইমানদার নয়’। বিশ্ব নবী (দ) এর স্বভাব চরিত্রে স্বদেশ প্রেমের উজ্জল নজির রয়েছে। তিনি জন্ম ভুমির ভালোবাসাকে সবার উর্ধে্ব ও প্রাণের চেয়েও বেশী পছন্দ করতেন। তিনি জন্ম ভুমি মক্কা থেকে মদিনায় আল্লাহর নির্দেশে হিজরত করেন। তিনি মদিনা যাবার পথে বার বার পিছনে ফিরে তাকান। কাতর কন্ঠে উচ্চারন করেন,‘হে আমার স্বদেশ! তুমি কতই না সুন্দর! আমি তোমাকে কতই না ভালোবাসি।আমার আপন গোত্রের লোকেরা যদি ষড়যন্ত্র না করত,আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না’।মদিনায় হিজরতের পর বিশিষ্ট সাহাবী আবু বক্কর ছিদ্দিক ও বিলাল (রা) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তারা মক্কার স্মৃতি স্মরনে কবিতা আবৃতি করেন। বিশ্ব নবী (দ)আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন,‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি-তেমনি তার চেয়ে বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন’(বুখারী)। তিনি (দ) বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় এক দেশ প্রেমিক হিসাবে মহান উদারতা স্থাপন করেন। একজন দেশ প্রেমিক মানুষ কর্তব্য পরায়ন, দায়ীত্ব সচেতন, স্বদেশ প্রেমে উৎসাহী। প্রেমের অভাবে মানুষ্যত্বের মৃত্যু ঘটে।যারা দেশকে ভালোবাসে না, তারা অকৃতজ্ঞ,রাষ্ট্রদ্রোহী,জঘন্য ও প্রকৃত ইমানদার নয়। একটি দেশের চারি দিকে রাষ্ট্রীয় সীমা রেখা থাকে। সীমান্ত রক্ষায় রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। দেশের সীমানা রক্ষী বাহিনী, অতন্দ্র প্রহরী। বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘একদিন ও এক রাতের সীমান্ত পাহারা ক্রমাগত এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারা রাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম’(মুসলিম)। দেশ প্রেম জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। বিশ্ব নবী বলেন,‘দুটো চোখ জাহান্নামের আগুন র্স্পশ করবে না। একটি চোখ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর একটি চোখ যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে’(তিরমিযি)। ‘যে ব্যক্তি স্বদেশ প্রেম রক্ষার বিনিদ্র রজনী যাপন করে, তাদের জন্য জান্নাত’।হযরত আনাস (রা) বলেন, আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসাবে রাসুল (দ) এর সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (দ) যখন ফিরে এলেন,উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টি গোচর হলো। তিনি বলেন,এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে,আমরাও পাহাড়কে ভালোবাসি’(বুখারী)। হিজরত করে মদিনায় এসে রাসুল (দ) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। এরশাদ হচ্ছে-‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে জীবন বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্ম ভুমিতে ফিরিয়ে আনবেন’(কাসাস-৮৫)
উত্তর দিচ্ছেন : মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ, গ্রন্থকার, প্রভাষক, সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন