দুনিয়াতে চলার পথে অনেকসময় বাহ্যত আমরা দেখি, বিপদে পড়তে পড়তেও যেন আমরা বেঁচে গেলাম, অল্প একটুর জন্যে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, নানারকম বিপদ থেকে এভাবে আমাদের বেঁচে যাওয়াটাও আল্লাহ তাআলার অদৃশ্য এক বাহিনীর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। মানুষের জন্যে তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে, তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। (সূরা রা‘দ : ১১)।
আসলে এ জগতের কোনোকিছুই আপন শক্তিতে ঘটে না। ছোট-বড় যত বিষয়, সবই মহান রাব্বুল আলামীনের হুকুমেরই প্রতিফলন। তাঁর আদেশেই সবকিছুর সৃষ্টি। তাঁর অনুমতিক্রমেই সবকিছুর গতি ও স্থিতি। অনেক কিছুকে বাহ্যত আমরা আকস্মিক মনে করি। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নিকট কোনোকিছুই অপরিকল্পিত নয়। তাঁর নিকট সবকিছুই পূর্ব নির্ধারিত, পূর্ব পরিকল্পিত। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন : অদৃশ্যের চাবিসমূহ তাঁর কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া তা আর কেউ জানে না। জলে-স্থলে যা রয়েছে তা তিনি জানেন। আর এমন কোনো পাতা ঝরে পড়ে না এবং মাটির অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণা কিংবা আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কিছু নেই, যা তিনি জানেন না, যা এক সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আনআম : ৫৯)।
ভাবা যায়, বাতাসের ঝাপটায় কিংবা কারো ঝাঁকুনিতে শীতকালে গাছের যে পাতাগুলো শুকিয়ে ঝরে পড়ে, সেগুলোর সংবাদও তিনি রাখেন, সেসবের কথা তিনি জানেন! এরপর আর বিষয়টি এড়িয়ে যাবার সুযোগ কোথায় জগতের ভালোমন্দ ছোটবড় কোনোকিছুই আল্লাহর হুকুম ছাড়া সংঘটিত হতে পারে না? আসলে বিষয়টি আমরাও অস্বীকার করি না কখনোই। তবে আমাদের তা বুঝে আসে তখন, যখন আমাদের শত চেষ্টা একের পর এক ব্যর্থ হতে থাকে। তখন অবচেতন মনেই আমরা স্বীকার করি, সবই আল্লাহর ইচ্ছা!
দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে বিপদ দেন। এটা এ দুনিয়ার একটি স্বাভাবিকতা। বিপদ নানা রকমের হতে পারে। জান-মাল, সহায়-সম্পদ, সন্তানাদি, পরিবার-পরিজন, সম্মান-সম্ভ্রম ইত্যাদি নানান বিষয়ে মানুষ বিপদাক্রান্ত হয়। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে বিপদে ফেলেন এ কথা পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে। বিপদ কেন দেন, বিপদে পড়লে কী করতে হবে এসবও তিনি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
কয়েকটি আয়াত লক্ষ করুন : আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যারা কোনো বিপদাক্রান্ত হলে বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬)। মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, যেন তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম : ৪১)। গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা : ২১)।
এমন আয়াত আরো আছে। এগুলো থেকে আমরা যে নির্দেশনা পাই তা সংক্ষেপে এমন। ১. দুনিয়াতে নানারকম বিপদ দিয়ে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করতে পারেন। ২. সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সবর ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। ৩. বিপদে মুমিনের সান্ত¡না ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহর, তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব।
৪. জগতের যত বিপর্যয়, যত ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা, তা মানুষেরই কৃতকর্মের ফল। ৫. আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষকে শাস্তি দেন তাকে সতর্ক করার জন্যে, যেন সে ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরে আসে সে জন্যে। ৬. দুনিয়ার বিপদ যত বড়ই হোক, আখেরাতের শাস্তির তুলনায় তা খুবই সামান্য। আর এ সামান্য বিপদে পড়ে যদি কেউ বড় বিপদ ও শাস্তির বিষয়ে সতর্ক হয়ে যায়, নিজের কৃত ভুলগুলো শুধরে নিতে পারে, তবে তার জন্যে এ প্রাপ্তি অসামান্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন