চিত্তবাবু ও একুশের বইমেলা
চিত্ররঞ্জন সাহা ছিলেন অসাধারণ বইপ্রেমী একজন মানুষ। প্রথম বইমেলার সূচনায় ছিল তার একটি বইয়ের দোকান। এটা মুক্তিযুদ্ধের পরের ঘটনা। সেদিন চিত্তবাবুর সেই বইয়ের দোকান আজ বহুজনের বহু দোকানের জন্ম দিয়েছে। সাথে একুশের মেলাও ডানা মেলেছেন একাডেমি চত্বর থেকে পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এই মহান মানুষটি আজ বেঁচে নেই; কিন্তু ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন কাল-কালন্তর।
পা ব্যথা করছে
একুশের বইমেলা স্বল্প সময়ে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। বিশাল মেলা ভালো করে দেখতে হলে একটা বেলাই যেন শেষ হয়ে যায়। কথা হচ্ছিল নাসিম নামের এক দর্শকের সাথে। বলেন, এত বড় মেলা হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা করছে।
আশির দশকের বইমেলা, আজকের বইমেলায়
আশির দশকের বইমেলার যে চিত্র দেখেছি, আজকের সেই চিত্রের অনেক পার্থক্য। একাডেমি চত্বরে সেই মেলা ছিল ছোট পরিসরের। স্টল সংখ্যাও ছিল তখন কম। লোকজনের চলাচলের সমস্যা হতো। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল কম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ধিত হলে এর সৌন্দর্য বেড়ে যায়। বিক্রিও বেড়ে যায়। স্টল সংখ্যা বেড়ে যায়। বলতে গেলে সবদিক দিয়ে মেলাস্পট তরুণীর মতো রূপ নিয়েছে।
হাজির বিরিয়ানি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলায় অনেক খাবার দোকান। ঐতিহ্যবাহী হাজির বিরিয়ানি ৩টি দোকান দেখা গেছে সেখানে। দেখা গেছে খাদকদের ভিড়ও।
বুকলিস্ট ও গোলক ধাঁ-ধাঁ
সব বই এখনো মেলায় আসেনি। বুকলিস্ট কেউ কেউ দিতে পারছেন না। বলছে, আসবে বা শেষ হয়ে গেছে। একটা গোলক ধাঁ ধাঁ যেন। এটা মূলত করোনার জন্যই হয়েছে বলা যায়। কারণ, প্রকাশকরা বই প্রকাশ করতে সাহস পাননি।
বই পোকাদের ভিড়
একুশের বইমেলায় বই পোকাদের ভিড় দারুণ। এরা বই পড়তে মরিয়া। টাকা জমিয়ে বা টাকা ধার করে এরা মেলায় বই কিনে থাকেন। যাদের টাকা নেই তারা স্টলে দাঁড়িয়ে বই উল্টে পাল্টে যতটুকু পাচ্ছে, বইয়ের ভেতরের অংশটুকুর স্বাদ নেন। যাদের টাকা আছে, বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, সাইমদিক মনের বইগুলো কিনেন।
পাগলদের পাগলামী
মেলায় কিছু পাগল না থাকলে কি বইমেলা জমে? এরা সংসার বৈরাগী। এরা অসংলগ্ন কথা বলে। কেউ নিজেকেই রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দাবি করে। অন্যরা এদের পাগলামী কথাবার্তা শুনে মজা পায়। বিগত দিনের মেলাগুলোতে এদের উপস্থিত ছিল। এদের ছাড়া যেন মেলাশূন্য। এবারো তারা হয়তো আছে।
নারী লেখক
বরাবরই নারী লেখকদের একটা দাপট থাকে বইমেলায়। তারা বেশ সেজেগুজে মেলায় আসেন। স্টল নেন, বই প্রকাশ করেন। বই কিনেন। নারীর ক্ষমতায়ন এখন দেখার মতো।
শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে বেশি
চিলড্রেন বুক সেন্টার থেকে যোগল সরকার জানান, বিক্রি মোটামুটি। শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন স্টলে শিশুদের ভিড়। মূলত শিশুদের পছন্দের বই ক্রয় করতে অভিভাবকরা পিছপা হচ্ছেন না। আগামী দিনগুলোতে শিশুদের বই আরো বিপুলভাবে মেলায় আসবে এবং বিক্রি হবে। গ্রন্থণা : ফাহিম ফিরোজ
বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ
অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট কলামিস্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উপদেষ্টা আর, কে চৌধুরীর বই ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের ২৪ নম্বর প্যাভিলিয়নে। বইটি সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সংগ্রামী আর, কে চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও দেশের শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা ‘কলাম সমগ্র’ বইটি পড়ে পাঠকরা দেশকে ভালোবাসতে শিখবেন। কারো বিপক্ষে না লিখেও যে সমাজের নানা অসঙ্গতি ফুটিয়ে তুলে এর সমাধান করা যায়, বইটি সে কথাই বলে দিবে।’
উল্লেখ্য, আর, কে চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কলাম লিখে আসছেন।
কিছু বইয়ের তালিকা
অন্বেষনা বের করেছে ব্রেইন গেইম। শোভা প্রকাশনী বের করেছে- কিমোনো কন্যা, চুড়িহাট্টার মোড়। ঐতিহ্য বের করেছে- পাখিরোষ, হিস্ট্রি অব দ্য রিলিজিয়ন্স। মাওনা ব্রাদার্স বের করেছে- ক্র্যাচের কর্নেল, ইতিহাস হত্যা এবং পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবই- মুনতাসীর মামুন, বঙ্গবন্ধুর আইনি লড়াই, মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও সময়- ড. ইয়াসির কাদি। পার্ল পাবলিকেশন বের করেছে-ে করোনাকালের কৌতুক- আনিসুল হক। শিশু একাডেমি থেকে বের হয়েছে তাদের সম্পাদনায়, এশিয়ার লোককাহিনী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বের হয়েছে- বোখারি শরীফ (১ খন্ড) দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম। পুলিশ কর্মকর্তা আইনুল হকের লেখা রোমাঞ্চকর অপরেশন বইটি প্রকাশ করেছে অন্বয় প্রকাশন। ধূসর খাতায় স্বপ্ন আঁকি শাহ মুহাম্মাদ মাসউদ। প্রকাশ : অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২। প্রকাশক : ঐতিহ্য (৩৫ নং প্যাভিলিয়ন) । প্রচ্ছদ: ধ্রæব এষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন