শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআন-হাদীসে ইসরা ও মিরাজ : বর্ণনা ও শিক্ষা-১

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

ইসরা ও মিরাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। মুমিনের ভক্তি ও বিশ্বাস এবং আবেগ ও অনুভ‚তির শেকড় গভীরভাবে মিশে আছে যার সঙ্গে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদ ও ঈমানের দাওয়াতে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছেন। কাফেরদের নির্মম অত্যাচার ও অবর্ণনীয় বাক্যবাণে তিনি বিধ্বস্ত। মুষ্টিমেয় কিছু মুসলিম জুলুম-অত্যাচারে নিষ্পিষ্ট। তবুও হৃদয়ে তারা ঈমানের আলো জ্বেলে রেখেছেন। এভাবেই এগিয়ে চলছে ইসলামের প্রচার-প্রসার। আশ্রয় ও সান্ত¡নার বিরাট দুটি বৃক্ষ একে একে চলে গেছেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে। খাজা আবু তালিব ও উম্মুল মুমিনীন খাদীজাতুল কুবরা রা.।

আশা ছিল, তায়েফবাসী যদি কথাগুলো একটু মেনে নেয়! তাওহীদের দাওয়াত কবুল করে! না, তারাও সাড়া দিলো না। শুধু কি তাই, নির্দয়ভাবে ক্ষতবিক্ষত করল প্রাণপ্রিয় নবীজীকে। এমন মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ডেকে নিলেন প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঊর্ধ্বজগতে। রাতের এক খন্ডে, জিবরাঈলকে পাঠিয়ে, বুরাকে চড়িয়ে। কোরআনের ভাষায় : পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। (সূরা ইসরা : ১)।

বস্তুত ইসরা হচ্ছে, মক্কা মুকাররমা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণের সেই পর্বটুকু, যা রাতের একটি অংশে সংঘটিত হয়েছিল। আর মিরাজ হচ্ছে সেখান থেকে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের সেই বিস্তৃত অধ্যায়। আল্লাহ তাআলা সূরা নাজমে আরো বলেন : বস্তুত সে তাকে (হযরত জিবরাঈল আ.-কে) আরো একবার দেখেছে। সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তবর্তী কুলগাছ)-এর কাছে। তারই কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মা’ওয়া। তখন সেই কুল গাছটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল সেই জিনিস, যা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। (রাসূলের) চোখ বিভ্রান্ত হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি। (অর্থাৎ দেখার ব্যাপারে চোখ ধোঁকায় পড়েনি এবং আল্লাহ তাআলা তার জন্য যে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি তা লঙ্ঘনও করেননি যে, তার সামনে কী আছে তা দেখতে যাবে।) বাস্তবিকপক্ষে, সে তার প্রতিপালকের বড়-বড় নিদর্শনের মধ্য হতে বহু কিছু দেখেছে। (সূরা নাজম : ১৩-১৮)।

ইসরা ও মিরাজের ব্যাপারে কোরআনের বর্ণনায় সংক্ষেপে এতটুকুই বলা হয়েছে। আর বিস্তারিত এসেছে হাদীসের পাঠগুলোতে। সীরাত, সুন্নাহ এবং তারীখের নির্ভরযোগ্য সূত্রে রয়েছে এর বিশদ বিবরণ। পবিত্র কালামুল্লাহর এই আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো সামনে আসে তা হচ্ছে : ক. আল্লাহ তাআলা পবিত্র সত্তা। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেকের সীমাবদ্ধ গন্ডি পেরিয়ে তাঁর শক্তি ও সক্ষমতা। তিনি তার বান্দাকে রাতে পরিভ্রমণ করিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সর্ব প্রকার সংশয় ও দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

খ. ইসরা ও মিরাজ রাতে সংঘটিত হয়েছিল। গ. মক্কা মুকাররমা থেকে নবীজীকে প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নবীজী ঊর্ধ্বজগতে আরোহিত হন। ঘ. বাইতুল মুকাদ্দাস ও তার চারপাশের এলাকা বরকতময়। ঙ. আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীব (সা.)-কে মিরাজের নিআমত দান করেছেন তিনি তার বড় বড় কুদরত ও নিশানা দেখাবেন বলে।
চ. মিরাজের বিষয়টি এমন, যা সাধারণ বোধগম্য বিষয় নয়। এটা কেবলই মহান রবের কুদরতের কারিশমা। মাখলুকের সীমাবদ্ধ হিসাব-নিকাশ সে পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম নয় ইত্যাদি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মামুন রশিদ চৌধুরী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৩ এএম says : 0
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর বহু মুজিজার মধ্যে অন্যতম সেরা মুজিজা হলো মিরাজ। অন্য কোনো নবী ও রাসুলের মিরাজ হয়নি।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
মিরাজের রাতে মসজিদুল আকসায় সব নবী ও রাসুলের জামাতে নবীজি (সা.) ইমামতি করেন। এতে তিনি ‘ইমামুল আম্বিয়া’ (নবীদের ইমাম বা নেতা) ও ‘সাইয়িদুল মুরসালিন’ (রাসুলদের সরদার) অভিধায় অভিহিত হন। মিরাজের সফরে আমাদের নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে বিভিন্ন নবী–রাসুলের বিশেষ সাক্ষাৎ হয়।
Total Reply(0)
মনির হোসেন মনির ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
মিরাজে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত মানবজাতির কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত কোরো না, পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, নিকট আত্মীয়স্বজনের অধিকার দাও; মিসকিনদের অধিকার দাও; অপচয় কোরো না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই, কৃপণতা কোরো না, সন্তান হত্যা কোরো না, ব্যভিচারের নিকটেও যাবে না, মানব হত্যা করবে না, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ কোরো না, প্রতিশ্রুতি পালন কোরো, মাপে পরিপূর্ণ দাও, অজ্ঞতার সঙ্গে কোনো কিছু কোরো না, পৃথিবীতে গর্বের সঙ্গে চলো না।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২২-৪৪)।
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৬ এএম says : 0
রজব মাস ইসলামী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় দখল করে আছে। নবুওয়াতের ১০ম সনে এ মাসে ইসরা ও মেরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়।
Total Reply(0)
কাজী আনাস রওসন ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
ইসরা ও মেরাজের ঘটনা নি:সন্দেহে রাসুল (সা.) এর বৈশিষ্ট্য , অন্য কারো ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু নবীর সঙ্গে খা’স হওয়া সত্ত্বেও উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে যে, মানুষের পক্ষেই এই উর্ধ্ব জগতে ওঠে আসা সম্ভব হয়েছে, অন্য কোন জাতির দ্বারা এটা সম্ভব হয়নি। এর দ্বারা মানব জাতির ইজ্জত-সম্মান যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনিভাবে মানুষের উন্নতির ব্যাপকতাও বুঝা গিয়েছে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহ তরফ থেকে দেয়া ইজ্জত-সম্মানের কদর করা।
Total Reply(0)
সাইমুম চট্টগ্রাম ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) কে মেরাজের মতো মর্যাদার সফর দান করেছিলেন স্বাভাবিক কোনো অবস্থার পরে নয়। দীর্ঘ তিন বছর অবরোধে থেকে যখন বের হয়ে এলেন, অল্প সময় ব্যবধানে দু’জন প্রিয় মানুষকে হারান। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজের কাছে ডেকে নেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় ইজ্জত-সম্মান পেতে হলে আগে ত্যাগ ও কুরবানি পেশ করতে হয়। ত্যাগ ও কুরবানি ছাড়া কখনো সম্মান আসে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন