শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে রায়পুরের মানচিত্র

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২২, ১:৪১ পিএম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পাশর্^বর্তী মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলী জমি। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে স্থলভূমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বদলে যাচ্ছে রায়পুরের মানচিত্র। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানালেও প্রতিশ্রুতি পর্যনন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা। গত ১০ বছরে সহ¯্রাধিক ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নানারকম সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্রমত্তা মেঘনার পাশর্^বর্তী হওয়ায় বর্ষাকালে তীব্র ¯্রােতের কারণে প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী তীরবর্তী জেলে ও কৃষক পরিবারগুলো স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্ষা মৌসুমে ঝড়-জলোচ্ছাস ও নদীভাঙন আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তাদের। ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদীর তীব্র ¯্রােতের কারণে চোখের সামনেই প্রতিবছর অনেকের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। অথচ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় আলতাফ মাস্টার ঘাট, সরদার এন্ড মোল্যা পর্যটন কেন্দ্র ও রাহুল ঘাট নামে তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগম ঘটে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মৎস্য আড়তের মাধ্যমে পাশর্^বর্তী বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে বরিশাল, ভোলাসহ মেঘনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নদী তীরবর্তী ঘাটগুলো হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের এই নদী ভাঙন কবলিত এলাকাটি রয়েছে চরম অবহেলিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। পাশর্^বর্তী হাইমচর ও কমলনগর উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে মধ্যবর্তী রায়পুরের নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জালিয়ার চরের ভূক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, “তিন যুগ ধরে মেঘনার ভাঙ্গনে চোখের সামনেই অনেককে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বহারা হতে দেখেছি। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ দেখিনি।”

উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, “প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে বহুবার স্থানীয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি।”

পানি উন্নয়নবোর্ড, লক্ষ্মীপুরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুখ আহম্মেদ জানান, “মেঘনা নদীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যার সৃষ্টি হবে, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।”
রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন,“নদী ভাঙ্গন রোধে সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, এডভোকেট নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, “রায়পুরের হাজীমারা থেকে চাঁদপুরের হাইমচর সীমানা পর্যন্ত তীর সংরক্ষণ করার জন্য ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করি। ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি স্থায়ী বাঁধ চেয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।”

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন