হোসেন মাহমুদ : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আরবদের সাথে তিনবার যুদ্ধ, হেজবুল্লাহর সাথে একবার রক্তক্ষয়ী লড়াই ও হামাসের উপর বারংবার ভয়াবহ হামলা করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেপরোয়া ইসরাইল গত সপ্তাহে অপ্রত্যাশিতভাবে এক ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ এমন এক সমস্যা যেখানে অজেয় বলে কথিত ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও চেষ্টা করে এ বিপদের সমাধান করতে পারেনি। বলা যায়, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে মারাত্মক উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এ বিপদ। আর তা হল ভয়াবহ দাবানল। এ বিপদ মোকাবেলা করতে মাঠে নামে দমকল বাহিনীর কর্মীসহ ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে বিশে^র কয়েকটি দেশ। তবে নিজ সাধ্যজাত সামান্য সম্বল সাহায্য পাঠিয়ে সবাইকে বিস্ময়াভিভূত করে খোদ ইসরাইলসহ বিশে^র প্রশংসা কুড়িয়েছে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা রাষ্ট্র ফিলিস্তিন।
এ রকম অগ্নিকা- ইসরাইলে গত ১শ’ বছরে হয়নি। ঘটনার শুরু হয় ২২ নভেম্বর। উত্তর ইসরাইলে অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার লোক অধ্যুষিত বন্দর নগরী হাইফার জঙ্গলে দাবানলের সূত্রপাত হয়। উল্লেখ্য, হাইফা বা গোটা ফিলিস্তিন ভূখ-েই প্রাকৃতিক কোনো জঙ্গল নেই। ইসরাইল কর্তৃপক্ষ ১৯৪৮ সালের পর ফিলিস্তিনি গ্রামগুলো ধ্বংসের ঘটনা আড়াল করতে ব্যাপক হারে বৃক্ষ রোপণ করে। এর সিংহভাগই ছিল পাইন গাছ। পাইন মূলত ইউরোপীয় বৃক্ষ। ইউরোপ থেকে আগত ইহুদিরা যাতে ফেলে আসা দেশের আবহ পায় সে জন্যই ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনের প্রচলিত বৃক্ষ জলপাই, সিট্রাস প্রভৃতি নির্মূল করে পাইন বন সৃজন করে। এভাবে হাইফা এলাকায় অরণ্য গড়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষ জানায়, দু’মাসের বেশি সময় ধরে চলা খরা ও বাতাসের বেগই এ দাবানল সৃষ্টির মূল কারণ। প্রথম দিকে এ জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে আগুন লাগে। তা নির্বাপণের চেষ্টা চলার মধ্যে বৃহস্পতিবার তা গোটা হাইফাতে ছড়িয়ে পড়ে। দাবানলের বিস্তার এমন রূপ গ্রহণ করে যে এক পর্যায়ে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে জানা যায়, যে কল্পনার চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ইসরাইলের দাবানল। প্রথমে দেখা গিয়েছিল শুধু একটু ধোঁয়ার কু-লি। লোকজন আতংকিত হয়ে চারদিকে ছুটোছুটি শুরু করে। দেখতে দেখতেই আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে তা উঠে যায় প্রায় ৩০ ফুট উপরে। ইসরাইল কর্তৃপক্ষ দাবানল নিয়ন্ত্রণের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তার বন্ধু দেশগুলো এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে আছে সাইপ্রাস, রাশিয়া, ইটালি, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, তুরস্ক, আজারবাইজান, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ। একা তুরস্কই তিনটি অগ্নি নির্বাপক বিমান পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্র পাঠায় ৭৪৭ সুপার ট্যাংকার। আগুন নেভাতে ৪৮০টি বিমান থেকে আড়াই লাখ টন পানি ছিটানো হয়।
ইসরাইলের এ বিপদের দিনে মানবতার সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করে ফিলিস্তিন। হাইফার দাবানল ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সাহায্যের প্রস্তাব দেয় ফিলিস্তিন। কিন্তু চিরশত্রু ও অহংকারী ইসরাইল তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে ২৬ নভেম্বর ইসরাইল সাহায্যের প্রস্তাব গ্রহণ করলে ফিলিস্তিন ৮টি অগ্নি নির্বাপক গাড়ি পাঠায় ফিলিস্তিন। তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, দাবানল থেকে বাঁচতে হাইফা শহর থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে প্রায় ৮০ হাজার লোক পালিয়ে যায়। আগুনে কেউ মারা না গেলেও ছোটখাটো আঘাতের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৩০ জন। এদের অধিকাংশই অবশ্য ধোঁয়ায় শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছিল। শহরের স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও কারাগারগুলো খালি করে ফেলা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় শহরের দক্ষিণে জেরুজালেম ও তেল আবিব সংযোগ মহাসড়ক। আগুন ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার একটি স্কুল থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেয়া হয়। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী একাধিক শহর ও জেরুজালেমের দিকে তা ছড়াতে শুরু করে।
আরেক খবরে বলা হয়, ইসরাইলের ভয়াবহ দাবানল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইহুদি বসতির কাছেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেখানকার লোকজন পালাতে শুরু করেছে। ইসরাইলি পুলিশের এক নারী মুখপাত্র জানান, রামাল্লাহ শহরের কাছে হালামিশ বসতি থেকে ২৬ নভেম্বর প্রায় এক হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারী চলে যেতে বাধ্য হয়।
এ দাবানলে ৮০ হাজার মানুষ হয়েছে গৃহহীন। ৮০০ ঘরবাড়ি পুড়ে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে। হাইফায় প্রায় দশ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। পুরো হাইফা এখন প্রায় পোড়া, পরিত্যক্ত এক নগরী। এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখন বাস করছে খোলা আকাশের নিচে।
এদিকে চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী ইসরাইলি এ দাবানলের দায় ফিলিস্তিনি ও আরবদের ঘাড়ে চাপাতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের কট্টরপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নেফতালি বেন্নেত দাবি করেছেন, আরব অথবা ফিলিস্তিনিরা এই দাবানলের পেছনে দায়ী। তিনি এক টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘ইসরাইলকে যারা নিজেদের দেশ বলে মনে করে না, ইসরাইলকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার অপকর্ম কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব।’
জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী জিলাড এরদান চ্যানেল ১০ নামে একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘কিছু এলাকায় দাহ্য বস্তু ও তরল জ্বালানি পাওয়া গেছে।’ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘আগুন লাগার কারণ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ছাড়া অন্য কিছুকে দেখার সুযোগ নেই। যে বা যারাই ইসরাইলি রাষ্ট্রের একাংশকে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে তাদেরকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।’ এর জন্য দায়ী হিসেবে ইতোমধ্যে সন্দেহবশত আটক করা হয়েছে ৩০ জন ফিলিস্তিনি ও আরবকে।
এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের এ ধরনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গাছ ও ঐতিহাসিক মাতৃভূমি পুড়ছে।’ ফিলিস্তিনের ফাতাহ আন্দোলনের পক্ষ থেকে এর উত্তরে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে ইসরাইলকে। ফাতাহ বলেছে, ইসরাইলের কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনের উপর মিথ্যা দায় চাপাতে এই দুর্ঘটনাকে ব্যবহার করছে।
এদিকে হাইফার এ দাবানল নিয়ে আরবিভাষী সামাজিক মাধ্যমগুলোকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার কথা জানা গেছে। কিছু সামাজিক মাধ্যমে বলা হয়, এটা আযান বন্ধ করার কারণে আল্লাহর তরফ থেকে ইসরাইলের উপর গযব।
৪ অক্টোবর জেরুজালেমের আল রহমান, আল তায়বে ও আল জামিয়া নামের তিনটি মসজিদে আজান দেয়া বন্ধ করে দেয় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। বলা হয় যে, শব্দ দূষণ সৃষ্টির কারণে নাগরিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বলা দরকার যে বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের দখলে থাকলেও জেরুজালেমের মসজিদগুলো থেকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে নিয়মিতই শোনা যেত আজানের ধ্বনি। পবিত্র আল আকসা ও অন্যান্য মসজিদকে ঘিরে নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন মুসলমানরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, নিজেদের শহরে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার সাথে সাথে মসজিদগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তারা।
সাম্প্রতিককালে আযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনে উড়ে এসে জুড়ে বসা এক শ্রেণির ইহুদি। তাদের দাবি যে আযানের শব্দে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এক ইহুদি বলে, আযানের শব্দ খুই বিরক্তিকর লাগে আমাদের কাছে। দিনে এমনকি সন্ধ্যার পরেও দু’বার আযান দেয় মুসলমানরা। এভাবে দিনের পর দিন সহ্য করে যাওয়া অসম্ভব। এদিকে কিছু কট্টরপন্থী ইহুদি সংগঠন আযান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এর পর ১৩ নভেম্বর ইসরাইলি মন্ত্রিসভা মাইকের মাধ্যমে মসজিদে আযান দেয়া বন্ধ করে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। পরবর্তীতে ইসরাইলি পার্লামেন্টে অনুমোদনের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হবে।
তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানায় মুসলমানরা। তাতে লাভ হয়নি। উল্লেখ্য, ইসরাইল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মসজিদ রয়েছে ৪ শতাধিক। একজন মুসলিম নেতা বলেন, জেরুজালেমকে একটি পূর্ণ ইহুদি নগরী বানাতেই আযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তারা আরবি ভাষা শুনতে চায় না। তারা জেরুজালেমকে ইহুদিদের রাজধানী বানাতে চায়। এমনকি খ্রিস্টানদের গির্জাও রাখতে চায় না তারা। জেরুজালেমের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি একরিমা সাবরি ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় মসজিদের মাইকে আযান বন্ধের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে এ যাবতকালের অন্যতম এক বর্ণবাদী ও বৈষম্য মূলক আইন। তিনি বলেন, জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিরা এবং ইসরাইলের সকল মুসলমান এ প্রস্তাবিত বিলের বিরোধী। মাইকে আযান প্রচার অব্যাহত থাকবে যা আযানকে ঘৃণাকারী বর্ণবাদী ও ফ্যাসিস্টদের কানকে বধির করে দেবে। খবরে জানা যায়, বিতর্কিত এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত আছে ইহুদিদের মধ্যেই। আহমাদ তিবি নামের একজন আরব-ইসরাইলি আইন প্রণেতা পার্লামেন্টের অধিবেশনে নিজে আজান দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে যে মাইকে আযান দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বলবত হলে প্রতিটি ঘর থেকেই আযান দেয়া হবে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের অনেকের বিশ^াস যে আযানকে অবমাননা করার স্পর্ধা প্রদর্শনের কারণেই ইসরাইল এ গযবের সম্মুখীন হয়েছে।
বলা দরকার, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ যখন আযান বন্ধের ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছে তখন নজিরবিহীনভাবে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা। ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় আযান বিষয়ে বিতর্কিত বিল পাশের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের একটি চার্চ থেকে আযান দেয়া হয়। নাজারেথের একটি চার্চ ২১ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নেয় ও চার্চ থেকে আযান দেয়। সেখানকার মুসলিমরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। জানা যায়, ‘মিনারগুলো কখনো নীরব হবে না’ লেখা ব্যানারের নিচে শত শত মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি আযান দিয়ে ইসরাইলের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার তাদের প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছে দেয়।
নাবলুসের ক্যথলিক চার্চের বিশপ ইসুফ সাদাও ইসরাইলের আযান বিরোধী সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইসরাইলি দখলদারদের নীতিগত, নৈতিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের লক্ষণ। হামাস বলেছে, এ হচ্ছে সর্বত্র মুসলিম অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত এবং ইসলাম ধর্ম পালন ও আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ।
তবে এক্ষেত্রে সবাইকে অবাক করেছে বিতর্কিত বিলটির ব্যাপারে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের বিরোধিতা। প্রেসিডেন্ট রিভলিন ২৯ নভেম্বর জেরুজালেমে ধর্মীয় নেতাদের এক বৈঠক ডাকেন। তিনি তাদের সাথে আলোচনায় বলেন, আমাদের মধ্যকার একটি সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট ধর্মবিশ^াসের সাথে সাংঘর্ষিক আইন পাস করা একটি লজ্জাস্কর ঘটনা হবে। তিনি বলেন, আমি সে ব্যক্তির সন্তান যিনি কুরআন তর্জমা করেছিলেন এবং ইহুদি ধর্ম পালন করতেন। আমি মনে করি, আমার একটি সুষ্ঠু পথ গ্রহণ করা উচিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সমর্থিত বিলটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যায়িত করেন। বিলটি প্রথম শুনানির জন্য ৩০ নভেম্বর ইসরাইলের পার্লামেন্টে উত্থাপন করার কথা। জানা গেছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান আযান বন্ধ সংক্রান্ত বিলটি অনুমোদনের নিন্দা করেছেন। তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রেসিডেন্ট রিভলিনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইসরাইলের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে তিনি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষা ও জেরুজালেম রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে ঐ বৈঠকে এক শীর্ষ মুসলিম নেতা আবদ-আল সামারা আল হাকিম বলেন, উত্তেজনা হ্রাস ও বিরোধ এড়াতে তিনি ইসরাইলের সব মসজিদে মাইকের আওয়াজ কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
যাইহোক, ইসরাইল ও তার মিত্রদেশগুলোর সর্বাত্মক চেষ্টায় ২৬ নভেম্বর থেকে দাবানলের তীব্রতা হ্রাস পায়। হাইফা ছেড়ে চলে যাওয়া লোকজন পোড়া মাটিতে ফিরে এসেছে। নতুন করে জীবন শুরুর চেষ্টা করছে তারা। তাদের মধ্যে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমান সবাই আছে। হাইফার কফিশপগুলো আবার চালু হয়েছে। সেখানে সবাই আবার আড্ডা দিতে শুরু করেছে। একজন অধিবাসী জানান, এখানকার সাধারণ মানুষদের মধ্যে কোনো বিভেদ বা বিদ্বেষ নেই।
ইসরাইল দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর নির্মম নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদপূর্বক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপন করে চলেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে তারা এখনো রাজি নয়। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গুলতি ছুড়ে ও ঢিল নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ জানানো পশ্চিম তীরের কিশোর-তরুণদের উপর গুলি চালিয়ে ও আটক করে দমন অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে গাজায় যথেচ্ছ হামলা চালিয়ে হামাসকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের আত্মপ্রকাশে ইসরাইলই একমাত্র ও অদম্য বাধা। ফিলিস্তিনি দমন-দলনে মসজিদ থেকে মাইকযোগে আযান প্রচার বন্ধ এক নতুন সংযোজন যা সরাসরি ইসলামের ওপর আঘাত। তারপরও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ মহাশত্রু ইসরাইলের মহাবিপদের দিনে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইসলামে নির্দেশিত উদারতা ও সহমর্মিতার প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
হাইফার দাবানল আযান বন্ধের ঔদ্ধত্যের জন্য ইসরাইলের প্রতি গযব কি না তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মসজিদ থেকে মাইকে আযান দেয়া বন্ধের আইন ইসরাইলের পার্লামেন্টে পাস ও তা কার্যকর করা হলে ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি ফিলিস্তিনসহ বিশ^ মুসলমানের ক্ষোভ ও ঘৃণা আরো প্রবল হবে।
লেখক : সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন