হোসেন মাহমুদ : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশে^ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সাধারণত ভালো সম্পর্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। এ ভালো সম্পর্কের আবার রকমভেদ আছে। কোনো সম্পর্ক সাধারণ ভালো, কোনো সম্পর্ক বেশ ভালো, আবার কোনো সম্পর্ক এত ভালো যে কোনো সংজ্ঞাই তার জন্য আর যথেষ্ট হয় না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন সে পর্যায়ে পৌঁছেছে, যাকে বলে সর্বোচ্চ পর্যায়। এর কারণও আছে। ভারত হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তাকারী ও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশ। ভারত যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আরো রক্তক্ষয়ী ও আরো দীর্ঘকালীন হতে পারত। সুতরাং ভারতের কাছে বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতার যেমন সীমা নেই, তেমনি দেশটি আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝে দশক দুয়েকের বেশি সময় এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলেও এখন তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশ হলেই যে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হবে তা নয়, দু’প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্কও চোখে পড়ে। যেমন ভারত-পাকিস্তান, পাকিস্তান-আফগানিস্তান, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া প্রভৃতি। যাহোক, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে ভারতের চেষ্টার অন্ত নেই। তাতে আগ্রহী সে দেশের কূটনীতিক, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান সবাই। যেমন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।’ ভারত সফররত বাংলাদেশ যুব প্রতিনিধিদল ৫ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। তাঁর কথায় মনে পড়ে গেল, ’৯০-এর দশকে সাপ্তাহিক টাইমস বা নিউজউইক পত্রিকার একটি সংখ্যায় প্রকাশিত কভার স্টোরির শিরোনাম ছিল ‘হাউ মাচ ইজ টু-উ মাচ।’ আমরা বাংলা অনুবাদে তার শিরোনাম করেছিলাম ‘কত বেশি হলে খুব বেশি।’ ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির কথায় মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছেÑ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আর কত উন্নত হলে তা আরো উন্নত হবে? এই যে আরো উন্নত হওয়া, আরো উচ্চতায় পৌঁছাÑ এর শেষ কোথায়? কত বেশি হলে খুব বেশি হয়?
বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক বন্ধুত্বের, স্বার্থের নয়। এ সম্পর্কের মধ্যে স্বার্থ থাকে না। স্বার্থ থাকলে তা আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধুত্বের, বাস্তবে বা কাজে স্বার্থের। ১৯৭১-৯৬ সময়কালে ভারত যে স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি বা যে সুযোগ পায়নি, পরবর্তী সময়ে তা আদায় করে নিয়েছে অবলীলায়, একটু কঠিন করে বললে কড়ায় গ-ায়। কীভাবে এবং কতভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে নেয়া যায়, তা সবাই দেখেছে ও দেখছে। ১৯৯৬-২০০১ পর্যায়ে এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ভারতকে দেয়ার যে বন্যা বইছে তা অব্যাহত রয়েছে। কারো কাছ থেকে কিছুই না পেয়ে কেউ কাউকে যে কত ভাবে দিতে পারে, নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিতে পারে, বলা যেতে পারে যে ভারতকে দেয়ার মাধ্যমে তার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। সবারই বিষয়টি জানা। ট্রানজিট, চলমান তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়ে গতি¯্রােত রুদ্ধ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য মালামাল, বিশেষ করে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ভারি যন্ত্রপাতিসহ পরিবহন ইত্যাদি কত কি! ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে বিপুল পরিমাণ মালামাল বহন করা বাবদ কোনো ফি দেয়নি অর্থাৎ বিনা মাসুলে পণ্য পরিবহন করেছে। জানা যায়, এর আগে ভারতের মালামাল ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য টন প্রতি ১০৫৮ টাকা মাসুল নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ভারত সে প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এবং টন প্রতি ১০৫৮ টাকার স্থানে ১৯৩ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করে। আশ্চর্য যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আর কিছুই করা হয়নি। মেনে নেয়া হয় ভারতের প্রস্তাব।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে কিছুদিন আগে ভারত বাংলাদেশের দু’টি সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিজ দেশের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য তারা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করবে। তবে এ বন্দর ব্যবহারের জন্য তারা কাস্টমস ডিউটি বা অন্য কোনো শুল্ক দেবে না, শুধু প্রশাসনিক ফি প্রদান করবে। শুধু তাই নয়, বন্দর দু’টিতে তাদের পণ্য রাখার জন্য পৃথক স্থান চেয়েছে তারা। বলেছে, বাংলাদেশের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহারে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তাদেরও তা দিতে হবে। জানা যায়, ভারতের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি)-এর একটি খসড়া কপি তারা বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে। তাতে এসব কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত নিবিড় সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে অব্যাহত উদ্যোগের অংশ হিসেব ২০১৫ সালে বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও ভারতে নৌমন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে কিভাবে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করা যায়, তাই ছিল এ সমঝোতা স্মারকের মূল বিষয়। নভেম্বরে এ এসওপি পাঠিয়ে দিয়ে ভারত বলেছে, তারা চায় দ্রুত তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ তাদের মতামত অবহিত করুক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ৮ ডিসেম্বর জানানো হয়েছে যে, সফরটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের ইচ্ছা, তার এ সফরের সময় যেন চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক একটি ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়। বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্রুতই এসওপি পরীক্ষা করে তারা ভারতকে তাদের মতামত দেবে। হয়ত ইতোমধ্যে তা জানিয়ে দেয়া হয়েও গেছে।
বাংলাদেশের স্থল ও নৌপথ ব্যবহারের সকল সুবিধা পাওয়ার পর বাকি যা ছিল এবার সেদিকেও নজর দিয়েছে ভারত। অর্থাৎ বাংলাদেশের আকাশ পথ ব্যবহারের জন্য তারা অগ্রসর হয়েছে। পত্র-পত্রিকার খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী ভারত। সে জন্য তারা বাংলাদেশের কাছে ‘ওপেন স্কাই’ বা মুক্ত আকাশ সুবিধা চায়। এর আগে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের সময় এ বিষয়টিও তারা তার সাথে আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। জানা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত ২১ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সাথে তার মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এভিয়েশন সেক্টরের কোনো প্রকল্প, প্রস্তাবনা, এজেন্ডা তুলে ধরা হবে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ নেন। এ সময় তিনি ভারতকে মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও পর্যটনে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ দুই প্রতিবেশী দেশে যাতায়াত করে। এ প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং ব্যয় কমিয়ে আনতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ পথে যোগাযোগ আরও বাড়ানো দরকার। এ জন্য দুই দেশকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, লন্ডনগামী শিলংয়ের যাত্রীরা সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেলে অনেক আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন। পাশাপাশি তারা সিলেট থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যটন নগরীতে যেতে পারবেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা-দিল্লি, ঢাকা-ব্যাঙ্গালুরু, ঢাকা-চেন্নাই ও ঢাকা-গৌহাটির মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার এসেছিলেন মূলত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সিভিল এভিয়েশনের কোনো প্রকল্প বা প্রস্তাবনা এবং এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে কি-না সে বিষয়ে জানতে। তিনি ওপেন স্কাইয়ের কথা বলেছেন।
সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানেও ভারতীয় হাইকমিশনার মুক্ত আকাশ সুবিধার বিষয়ে মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত নতুন নীতিতে অন্যদেশগুলোর সঙ্গে ওপেন স্কাই সুবিধাকে বাড়াতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথেও তা করতে চায়। এতে করে দ’ুদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে। ভারতের হাইকমিশনার যুক্তি প্রদর্শন করে বলেন, ওপেন স্কাই সুবিধা চালু হলে দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। বাংলাদেশ সহজে ভারতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সুযোগ পাবে। বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষায় পরিবর্তন আসবে। নতুন বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার বক্তব্যের জবাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্র্যাক্টিকাল ওপেন স্কাই হয়েই আছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এদিকে এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, একটি দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহনে অন্যদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে অনুমতি লাগে। তবে ওপেন স্কাই চুক্তি থাকলে এ ক্ষেত্রে আলাদা অনুমতির দরকার হয় না। মুক্ত আকাশ চুক্তি দু’টি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা ততোধিক দেশের মধ্যেও হতে পারে। জানা যায়, ভারতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে দু’দেশের মধ্যে মুক্ত আকাশ চুক্তি হলে আকাশ পথে বিপ্লব ঘটবে। এতে বাংলাদেশী এয়ারক্রাফট সহজেই কম ভাড়ায় ভারতের যে কোনো বিমানবন্দরে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করতে পারবে। অন্যদিকে ভারতীয় বিমানও বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে।
মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় হাইকমিশন আমাদের এ প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের হাইকমিশনার মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মৌখিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে কারো ওপেন স্কাই নেই। তবে আমরা এর জন্য এখন প্রস্তুত নই। এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন খাত বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতকে মুক্ত আকাশ সুবিধা এই মুহূর্তে দেয়া বাংলাদেশের ঠিক হবে না। কারণ আমরা প্রস্তুত নই। আমাদের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি পর্যাপ্ত নয়। এখনই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমান ফেল করে। আমাদের এভিয়েশন সিকিউরিটিতেও দুর্বলতা রয়েছে, যার কারণে আমাদের দেশ থেকে কোনো কোনো দেশে কার্গো সুবিধা বন্ধ রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুবাইতে ওপেন স্কাই সুবিধা রয়েছে, ভারতেও আছে। তবে ভারত মাঝেমধ্যে পর্যটন বর্ষ উদযাপনের সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরের জন্য এ সুবিধা নির্ধারিত সময়ের জন্য দিয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত বড় দেশ। আমরা তাদের ওপেন স্কাই সুবিধা দিলে ঠিক থাকতে পারব না। আমাদের যে ফ্রিকোয়েন্সি আছে সেটাই আমরা পুরো ব্যবহার করতে পারছি না। ওপেন স্কাই সুবিধা দিলে ভারতের আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ নেয়া লাগবে না। আকাশকে উন্মুক্ত করে দিলে ব্যবসা ভারতের হাতে চলে যাবে।
বাংলাদেশের বহু মানুষ ভারতকে উজাড় করে দেয়ার বাংলাদেশের প্রবণতা দেখে ক্ষুব্ধ। কারণ, তারা শুধু দিতেই দেখছেন, পেতে নেয়। কেউ কাউকে কিছু দিলে প্রতিদানে পাওয়ার আশাও করে। বাংলাদেশ সে আশা করে না বলেই তারা দেখছেন। ভারত বিনাশুল্কে চট্টগ্রাম-মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চায়। তারা প্রশ্ন করেন, ভারত কি ঠিক অনুরূপ সুবিধা অন্য কোনো দেশকে দেবে?
বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে তার বিপরীতে কি কিছু পেয়েছে? সে বিষয়ে একটু তাকিয়ে দেখা যেতে পারে। এ দেশের জনগণের মধ্যে প্রচুর সরকার সমর্থক আছেন তা যেমন সত্য তেমনি বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের সমর্থক নন তাও সত্য। যারা সরকারের সমর্থকদলে নন তারা মনে করেন বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। তারা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে নদীর পানির ন্যায্য হিসস্যা পায়নি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন তিস্তার পানি চুক্তি হয়নি। ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা মেলেনি। ভারতের বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করেনি। বাংলাদেশীদের ভারত ভ্রমণের ভিসা প্রাপ্তি ব্যবস্থা সহজ করা হয়নি। এক কথায়, বাংলাদেশের কোনো চাওয়াই ভারত পূরণ করেনি। আর তার বিপরীতে ভারতের কোনো চাওয়া অপূর্ণ নেই তো বটেই, বরং আরো কোন প্রান্তে চাওয়ার কি পড়ে আছে তা খুঁজে পেতে দেখছে সে যার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে মুক্ত আকাশ সুবিধা চাওয়া।
বাংলাদেশকে যেমন ক্রমশই সর্বোতমুখী করে ভারত নির্ভর করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশের কাছ থেকে আর কি সুবিধা নেয়া যেতে পারে তার নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। কারো কারো ধারণা যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় এটা করা হচ্ছে। তারই সর্বশেষ প্রক্রিয়া হচ্ছে মুক্ত আকাশ সুবিধা চাওয়া। উল্লেখ করা যায় যে সাম্প্রতিককালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রশিক্ষণের চুক্তি মোতাবেক ভারতে তাদের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক’দিন আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক উপকরণ কেনারও প্রস্তাব দেয়া হয় যদিও বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেনি বলে জানা যায়। পাশাপাশি তিনি দু’দেশের মধ্যে অধিকতর সামরিক মহড়া ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও কথা বলবেন বলে তার সফরের আগে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস-এর প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছিল। সে বিষয়ে পরে কিছু জানা যায়নি। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশকে ভারতীয় জাল টাকা চেনার প্রশিক্ষণ ভারত দেবে বলে এর আগে খবরে জানা গিয়েছিল। ক’দিন পর হয়ত পুলিশ বাহিনীকেও ভারতে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেয়া হবে। সর্বশেষ জানা গেছে যে বাংলাদেশের বিচারকদের ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়ার বাংলাদেশের প্রস্তাবে ভারত রাজি হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
যাহোক, বাংলাদেশের কাছে ভারতের এই যে চাওয়া, এ চাওয়ার শেষ কোথায়Ñ আর কিছু না পেয়ে দেয়ারই বা শেষ কোথায়, তা কারো জানা নেই। তবে সরকার যা কিছুই করুক, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখেই তা করবে বলেই সর্বস্তরের দেশপ্রেমী মানুষের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন