দেশের মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রেখে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি (কারিকুলাম) প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেছেন, মাদরাসার যে পাঠ্যসূচি প্রণীত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী। এটা নাস্তিক্য ও বিধর্মী এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া কিছ্ইু নয়। গতকাল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এখানে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো স্বার্থ নেই। দ্বীনি শিক্ষা ও ভাবধারা অক্ষুণ্ন রাখতে সর্বদাই আমরা বদ্ধপরিকর। দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়। এখন যে কারিকুলাম তথা শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণিত হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে ইসলামী শিক্ষার প্রতি যে ভালোবাসা তা মøান হতে দেবেন না।
গতকাল মহাখালীস্থ বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকেই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ বর্তমানে যিনি শিক্ষামন্ত্রী তিনি যেন এ দুনিয়ায় নেই। ৯২ ভাগ মুসলমানদের দেশে তিনি যাদের সঙ্গে চলেন তারা প্রগতিশীলতার নামে নাস্তিক্যবাদের প্রতি অতি উৎসাহী। কাজেই তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) তাদের বাইরে যেতে পারবেন বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ব্যক্তি জীবনে দ্বীনদার মানুষ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। যা শুধু মাদরাসা, মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনে আহ্বানে আগামী ১৪ তারিখের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি তারই একটি অংশ মাত্র। এখানে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো স্বার্থ নেই। দ্বীনি শিক্ষা ও ভাবধারা অক্ষুণ্ন রাখতে সর্বদাই আমরা বদ্ধপরিকর। মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় না রেখে যে কারিকুলাম তথা শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণীত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী। এটি এখন শুধু মাদরাসার বিষয় নেই, জাতীয় বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই বিষয়টিতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব ও ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তি। মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম। আশা করছি, এধরনের নাস্তিক্য ও বিধর্মী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে তিনি তার সরকারের এত দিনের অর্জন ও দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে তার প্রতি যে ভালোবাসা তা ম্নান হতে দিবেন না।
এ এম এম বাহউদ্দীন আরো বলেন, বিশ্বে যতগুলো উন্নত ও সমৃদ্ধ মুসলিম দেশ রয়েছে তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার জন্য ডারউইনের মতবাদ কিংবা মূর্তিপূজার স্থান দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তারা কোন দিকে দিয়ে পিছিয়ে আছে? বরং তারা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আধুনিকতার নামে মূর্তিপূজা, ভ্রান্তমতবাদ, অশ্লীলতা, অনইসলামিক কর্মকাণ্ড মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলাম বাদ দিয়ে কখনই আধুনিকতা নয়। বরং ইসলামের মাঝেই সকল আধুনিকতা রয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিততত্ত্ব, পরমাণু, ইতিহাস, আধ্যাতিকতা এসকল বিষয়ে অসংখ্য মুসলমান মনীষীদের অবদান রয়েছে। এজন্য তাদের ইসলামবহির্ভূত জ্ঞানার্জন প্রয়োজন হয়নি। যুগেযুগে ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামের সোনালি অধ্যায়গুলো মুছে ফেলার বহু চক্রান্ত হয়েছে। মুসলমানদের পূর্বপুরুষগণের বীরত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বে ইতিহাস বিলীন করে দিয়ে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার অপচেষ্টা বহুকাল ধরেই পৃথিবীতে অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষার জন্য প্রণীত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এধরনের কর্মকাণ্ডকে কখনই কোনো আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ সমর্থন করতে পারে না। মাদরাসা শিক্ষা ধারার নতুন কারিকুলাম পরির্তন করে মাদরাসা শিক্ষার সকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়নের দাবি নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া দল, মত নির্বেশেষে সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, মাদরাসার কারিকুলাম নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত সমাধান না করলে এটি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে বিষয়টিকে বাড়তে না দিয়ে মাদরাসার সকীয়তা বজায় রেখে নতুন বছরের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা। যাতে কেউ এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে না পারে।
সভায় সকলের বক্তব্যের আলোকে আগামী ১৪ নভেম্বর, সোমবার, বেলা ১১টায় দেশের সকল জেলা ও মহানগরী শাখার উদ্যোগে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় সংগঠনের দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে জেলা প্রসাশক মহোদয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে সকল জেলা ও মহানগরীর নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর পরিচালনায় আয়োজিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দিক, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা এজহুরুল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা রেজাউল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার, উপাধ্যক্ষ মাওলানা কুতুবুল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো: ছাদেক হাসান, অধ্যক্ষ মাওলানা বরকত উল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান শেখ, অধ্যক্ষ মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা শাহজাহান মিয়া, অধ্যক্ষ মাওলানা আ ন ম বোরহান উদ্দীন, উপাধ্যক্ষ মাওলানা আমান উল্লাহ, ড. মাওলানা নেছার উদ্দীন প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন