মুসলিম জাতির ঐতিহাসিক দিক উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, সারা পৃথিবীর যেখানে মুসলমানদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবই সুফি দরবেশ, ওলি আউলিয়াকেরামের কারণে। ভারতে খাজা মইনউদ্দীন চিশতি, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, বাংলাদেশে হযরত শাহজালাল রহ. এবং ৩৬০ আউলিয়াসহ আরও অনেক ওলি আউলিয়াকেরামের বদৌলতে উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সর্বত্রই ছিল মুসলমানদের আধিপত্য। শুধুমাত্র ভারতেই মুসলমানরা প্রায় আটশো বছর শাসন করেছেন। সম্প্রতি ভারতে মুসলমানদের ওপর যেটা হচ্ছে এটা রায়ট নয়, রায়ট হচ্ছে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি। কিন্তু ভারতে একটি পক্ষই সব করছে। সারা দুনিয়া বলছে, এটি গণহত্যা। স্বয়ং মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন সেখানে মুসলমানদের ওপর গণহারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, এদেশের মানুষ ভালো আছে। তবে যেকোন পরিস্থিতিতে এদেশের মুসলমানদের ঐক্যের জায়গায় থাকতে হবে। ওলী আউলিয়াদের হাতে গড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতাই আমাদের স্বাধীনতার প্রধান নিয়ামক শক্তি। তাদের প্রচারিত শান্তিময় ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি এ দেশের রক্ষাকবচ। যত মতপার্থক্যই থাকুক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি আমাদের এক কাতারে এনে দেয়। ইসলাম, দেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে আমাদের আওয়াজ একটাই হবে- আর এটা হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার’। আরেকটি বিষয় হলো , আমাদেরকে পীর আউলিয়াদের ত্বরিকা মেনে জীবন পরিচালনা করতে হবে। কোনো বিচ্ছিন্ন বা উগ্র মতবাদ গ্রহণ করা চলবে না।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মৌকারা দরবার শরীফের ইসালে সাওয়াব মাহফিলের শেষদিন সোমবার সন্ধ্যায় ধর্মীয় আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এসব কথা বলেন। ধর্মীয় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মৌকারা দরবারের পীর সাহেব ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লার সভাপতি আমীরুস সালেকীন আলহাজ্ব শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী।
এদেশে ইসলামী চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটছে উল্লেখ করে জমিয়ত সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, পীর-মাশায়েখ অধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের দোয়া ও মেহনতের মাধ্যমেই এদেশে ইসলাম এসেছে। বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ওলি আউলিয়াকেরামের দোয়ার বরকতে এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা এদেশের মুসলমানরা অনেক সুখে শান্তিতে আছি। আজকে বিভিন্ন ইসলামি দেশগুলোতে ফেৎনা ফাসাদের কারণে এতো সম্পদ থাকা সত্ত্বেও শান্তি নেই। এখনো ওলি আউলিয়া, পীর মাশায়েখদের ওপর আমাদের শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান অটুট থাকা এবং ওনাদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করার কারণে আজকে এদেশে ইসলামি চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটছে।
বাংলাদেশে আলেমদের সামাজিক নেতৃত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক আরও বলেন, আলেমগণ ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মানুষকে মঙ্গলের পথে, কল্যাণের পথে পরিচালনা করছেন। দেশের ওলামা-মাশায়েখগণ আলোকিত মানুষ তৈরি করছেন বলেই সমাজ দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সাইয়েদ আহসান উল্লাহ, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, জিএমএস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোলাম মোস্তফা, জিনিয়া টেক্সটাইলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল বাশার, নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সামসুদ্দিন কালু, ভাইস চেয়ারম্যান আবুু ইউসুফ ও লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী।
ধর্মীয় আলোচনায় সভাপতির বয়ানে মৌকারা পীর ছাহেব আমিরুস সালেকিন শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দীন ওয়ালিউল্লাহি বলেন, এ উপমহাদেশে আউলিয়ায়ে কেরামরাই মানবিক ও আধ্যাত্মিক খেদমতের মাধ্যমে ইসলামের মুলমন্ত্র মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য অর্জনের জন্য নেক আমল ও বিশুদ্ধ আকীদার বিকল্প নেই। জীবনের প্রতিটি স্তরে সুন্নিয়াতের আদর্শকে লালন করতে হবে। ত্বরিকা চর্চা করতে হবে। ত্বরিকতের মাধ্যমে ওলি-আউলিয়াগণের ফয়েজ ও বরকত অর্জন সম্ভব। মৌকারা পীর সাহেব দৈনিক ইনকিলাব দেশের উন্নয়ন ও ইসলামি তাহজিব তমদ্দুন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রাণপুরুষ আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) এর সুযোগ্য উত্তরসুরী সংগঠনের বর্তমান সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে আজকে মাদরাসা শিক্ষকরা মর্যাদার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকরাই এদেশে ইসলামী ভাবধারা সমুন্নত রেখে চলেছেন। মৌকারা দরবারের বর্তমান পীর সাহেব শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দীন ওয়ালিউল্লাহি আরও বলেন, এ দরবারের মরহুম পীর সাহেব ছিলেন ইসলামী জগতের আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি মানুষকে হেদায়েতের পথে, সুন্নিয়াতের পথে আসার দিশা দিয়েছিলেন। আর মৌকারা দারুসসুন্নাত নেছারিয়া কামিল মাদরাসা আল্লাহর একজন অলির হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বীনি ও সঠিক নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে সৎ আদর্শবান মানুষ।
মাহফিলের শেষদিনে বয়ান করেন- মৌকারা দরবারে ছোট হুজুর কেবলা আলহাজ মাওলানা আবদুল হালিম, প্রধান ওয়ায়েজ অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক (ঢাকা), মাওলানা নেছার আহম্দে চাঁদপুরী, অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ফেনি), উপাধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা এইচ এম আনোয়ার মোল্লা (ফরিদগঞ্জ), মাওলানা জাকির হোসেন সিদ্দিকী (লাকসাম)। উপস্থিত ছিলেন নূর মোহাম্মদপুর দরবারের পীর সাহেব অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের মোহাম্মদ সালেহ উদ্দীন, ফান্দাউক দরবারের পীর সাহেব মাওলানা সৈয়দ সালেহ আহাম্মদ মামুন, বরিশাল মির্জা এনায়েতুর রহমান কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ মির্জা মাওলানা সায়েমুর রহমান বেগ, শায়খে ফান্দাউক দরবার শরীফ সৈয়দ মাওলানা মঈনউদ্দীন আল হোসাইনি। মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও কলামিষ্ট আলহাজ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মাসউদ ও ওয়ালিয়া কমপ্লেক্সের ডিজি আলহাজ জাহেদুল মাওলা চৌধুরী হেলাল।
মাহফিলের শেষ দিন সোমবার দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জনপদের অন্যতম পূণ্যভূমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা দরবারে লাখো ভক্ত আশেকান মুরিদানের অভূতপূর্ব সম্মিলনের দৃশ্য ফুটে উঠে। আধ্যাত্মিক সাধক শাহসুফি আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ অলিউল্যাহ (রহ.) স্মরণে দুইদিন ব্যাপী ইসালে সওয়াব মাহফিলের শেষ দিন আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ আর মুসল্লিয়ানদের মিলনমেলা ও জিকিরের আওয়াজে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ। মঙ্গলবার সকালে মৌকারা পীর সাহেব আমীরুস সালেকীন শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত, দেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং রোগবালাই, মহামারি থেকে হেফাজতের কামনা করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন