মীর আব্দুল আলীম : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্প সুদূরপ্রসারি অবদান রেখে চলেছে। এদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম গার্মেন্টস শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় এবং স্থানীয় অর্থনীতিকেও সুদৃঢ় করে চলেছে এ শিল্প। আর এ শিল্পকে ঘিরেই ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছেতো চলছেই। ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশে-বিদেশে। সর্বশেষ রাজধানীর উপকণ্ঠে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আবারো সংকটে পড়েছে রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। টানা ১১ দিনের শ্রমিক বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ থাকে ৫৯ পোশাক কারখানা। কারখানা সচল থাকলেই তৈরি হবে পোশাক। এতে রফতানি হবে; হবে মুনাফা। দেশ এগিয়ে যাবে সামনে। গার্মেন্ট শিল্প টিকে থাকলেই শ্রমিকরা টিকে থাকবে। শ্রমিকরাও জানে, কারখানা বন্ধ থাকলে তারাও ভোগান্তিতে পড়বেন। বেতন ভাতা বন্ধ থাকবে। তারপরও কেন এ আন্দোলন? বিক্ষোভের ধরন দেখে মনে হচ্ছে গোটা বিষয়টাতে ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। প্রশ্ন হলো গার্মেন্টস ধ্বংসের পাঁয়তারা কাদের ইন্ধন? এ ষড়যন্ত্র কেবল গার্মেন্টস শিল্পের জন্য নয়। এ ষড়যন্ত্র গোটা দেশের বিরুদ্ধে। আর তাই হচ্ছে বিগত দিনে। অতীতে গার্মেন্টস শিল্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং ভাংচুরের ঘটনার পর সাধারণ শ্রমিকরা জানিয়ে ছিলো, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে তাদের রাস্তায় নামানো হয়েছে। সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিকরা কখনোই রুটি-রুজির প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস চান না। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে কিছু শ্রমিক নেতা দেশি-বিদেশি চক্রের ইন্ধনে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামায়। পর্দার আড়ালে কিছু এনজিও অর্থ ব্যয় করে শ্রমিকদের আন্দোলন বেগবান করে। পুরনো সেই ষড়যন্ত্র আবার হঠাৎ শুরু হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পের এ ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশে ষড়যন্ত্র এখনই রুখতে না পারলে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
আশুলিয়ার শ্রমিক আন্দোলন-বিক্ষেভে সেখানকার কারখানাগুলোতে দিনে এক কোটি মার্কিন ডলারের অর্থাৎ প্রায় ৮০ কোটি টাকা পোশাক উৎপাদন ব্যহত হয় বলে বিজিএমইএ’র হিসাবে জানতে পারি। অর্থাৎ এগারো দিনে যে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে তার মূল্য ১১ কোটি ডলার (৮৮০ কোটি টাকা)। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবির করলেও বিজিএমইএ’র দাবি, উৎপাদনশীলতার বিচারে সেখানকার পোশাক শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি কোনোভাবেই কম নয়। তাছাড়া আন্দোলনে যাবার আগে মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সরকার অথবা কারখানার মালিক বরাবর কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি। অনেকটা হঠাৎ করেই শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। এর ফলে সেখানকার পোশাক শিল্প হোঁচোট খাওয়ার পাশাপাশি এখাতে বৈদেশিক সুনাম দারুণভাবে নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে মোট রফতানি আয়ের ৮১ ভাগের বেশি আসে পোশাক খাত থেকে। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে এ শিল্পে জড়িত রয়েছে প্রায় সোয়া কোটি মানুষ। এ শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই হচ্ছে নারী শ্রমিক। সে হিসেবে নারীর অগ্রযাত্রা ও কর্মসংস্থানে এ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এমনি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প সেক্টর নিয়ে শুরু হয়েছে বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র। এদেশীয় জ্ঞানপাপিদেরও এ ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অকপটে বলতেই হয় মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জোটগত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এ ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পের সক্ষমতা যাচাইয়ের অজুহাতে দেশের অগ্রগামী এ সেক্টরের উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানি ও নাজেহাল করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হলো তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতা জোটের অতি বাড়াবাড়িতে বর্তমানে বিপর্যস্ত পর্যায়ে গড়িয়েছে এ শিল্পটি। বিধিবহির্ভূত অতিরিক্ত খবরদারি ও কারখানা সংস্কারের ধুয়া তুলে এরা একের পর এক অযৌক্তিক শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদের এ ধরনের ও জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নানা শর্ত পূরণ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের এখন কঠিন দশা। এদের অব্যাহত অতিরিক্ত চাপের মুখে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে এ ব্যবসায় অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮০০ মালিক তাদের কারখানা গুটিয়ে নিয়েছেন। আরো প্রায় চার শ’ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে এরই মধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ শ্রমিক। এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে। এরা কমপ্লায়েন্সের নামে বাড়াবাড়ি করলেও পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সুপারিশ করে না। তাদের কাজ শুধু শ্রমিকের বেতন-ভাতা বাড়ানো ও অবকাঠামো নিয়ে ত্রুটি তালাশ করা। এ বিষয়ে বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ এবং এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে বৈঠক করে এ অভিযোগ করেছে বলে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট রফতানি আয়ের ৮১ ভাগের বেশি আসে পোশাক খাত থেকে। সেই সুবাদে দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশের মর্যাদা বাংলাদেশের। পোশাক রফতানিতে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই কোটি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। গুরুত্বপূর্ণ এ অবদান সত্ত্বেও পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এই খাতের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকান্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পোশাক শিল্প। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর নাজুক অবস্থায় পড়ে পোশাক খাত। এসব ধকল কাটিয়ে পোশাক শিল্প যখন ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিক তখনই শুরু হয়েছে আশুলিয়ার আকস্মিক শ্রমিক অসন্তোষ। এ শ্রমিক অসন্তোষকে শ্রম মন্ত্রণালয় ষড়যন্ত্র হিসাবে উল্লেখ করেছে। তাদের বক্তব্য এমন- পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা নস্যাত করতে কতিপয় অসাধু শ্রমিক নেতা কোন ইন্ধনে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা একটি বিষয় বেশ লক্ষ করেছি এবারের এ আন্দোলনের শুরুতে একটি চমক ছিল। আন্দোলনের আগে আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টসে একটি লিফলেট বিলি করা হয়েছে। নিম্নতম মজুরি বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ দাবি করে লিফলেটটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বেনামে ছড়িয়ে দেওয়া ওই লিফলেটের জের ধরে এরপর থেকেই একটি দুটি করে কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। কিছু শ্রমিককে নিয়ে ওই এলাকায় একটি সমাবেশও করা হয়। কে বা কারা ওই লিফলেটটি শ্রমিকদের মাঝে বিলি করেছে তা জানা যায়নি। চমকটা এখানেই, ‘বেনামে লিফলেট বিলি’। এর হেতু কী? মালিকপক্ষ থেকে বলা হয়, যারা আন্দোলনে জড়িত হয়েছেন তাদের বেতনভাতা যথারীতি দেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলোতে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো সমস্যাও ছিল না। এমন শান্ত পরিস্থিতিতে বেনামি লিফলেটের ওপর ভরসা করে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়। এত কারখানার উৎপাদন বন্ধ করায় বিপাকে পড়েন এসব কারখানার মালিকপক্ষ। এতে অনেক মালিকই যথাসময়ে তাদের বিদেশি বায়ারের কাছে পণ্য পাঠাতে ব্যর্থ হবেন। ফলে অর্ডার বাতিল হতে পারে। আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়বেন তারা।
দেশের মোট রফতানি আয়ের শতকরা ৮০ সতাংশ আসে রফতানি পোশাক শিল্প থেকে। আমেরিকার জিএসপি স্থগিত এবং ইউরোপের বাজারে নানা টানাপোড়েনের মধ্যেও গতবার ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার আয় হয়েছে তৈরি পোশাক রফতানি করে। দেশের তৈরি পোশাক আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই গার্মেন্টস শিল্পের ওপর শকুনি দৃষ্টি পড়ে। দেশি বিদেশি চক্র গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। ৩০/৩৫ ধরে সে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মাঝেই শিল্পকে অস্থির করে তোলা হয়। কখনো শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির দাবির অজুহাতে; কখনো কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ইস্যুতে। চক্রটি চায় দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বাজার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে। আর একাজে তারা ব্যবহার করে কিছু শ্রমিক পরিচয়ধারী নেতা, এনজিও এবং অখ্যাত বাম নেতাদের। বাস্তবতা হলো শ্রমিকরা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে যথেষ্ট আন্তরিক। গার্মেন্টস শিল্পের প্রকৃত চিত্র হলো যে সব শ্রমিকদের উত্তপ্ত করে এসব আন্দোলনে নামিয়ে গার্মেন্টস ভাংচুর করা হয় সে সব শ্রমিক প্রকৃত কারণ জানেনই না। উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে ভুল বুঝিয়ে কিছু এনজিও এবং তথাকথিত শ্রমিক নেতা খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করে তোলেন। এ প্রবণতা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই রোধ করতে হবে। দুর্মূল্যের বাজারেও দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ‘স্থিতিশীলতা’ আসছে। কেবল পুরুষ নয়, গরীব ঘরের মেয়েরা আজ এ শিল্প ঘিরে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দেশও এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এ অবস্থায় গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমেরিকার জিএসপি স্থগিতের পর ইউরোপের বাজার যখন ধরে রাখা যখন চ্যালেঞ্জের মুখে তখন হঠাৎ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামানো হয়।এ কথা অকপটে বলতেই হয়, আমাদের গার্মেন্টস শিল্প আজ ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা এবং ষড়যন্ত্রেও পরও যে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প টিকে আছে এটি সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টার সুফল। গার্মেন্টস শিল্পে আজ সংঘাত-সংঘর্ষ বাধিয়ে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, বিদেশে বদনাম রটিয়ে এবং বাজার নষ্ট ও ধ্বংস করতে তৎপর একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এদের ষড়যন্ত্র থেকে আমদেও সাবধান হতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদেও দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সাবধান হতে হবে। দেশের স্বার্থে,আমাদের সবার স্বার্থেই গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শ্রমিকদের বুঝতে হবে, এ শিল্প ধ্বংস হলে তারাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে মানবিক ও দায়িত্বশীল তাহলে ফিরে আসবে স্বস্তি, নিশ্চিত হবে অধিকার।
আমরা মনে করি, শ্রমিক অসন্তেষ এড়ানো এবং গার্মেন্টস শিল্পকে সামনে এগুনোর লক্ষে আমাদের কতকগুলি অনুকুল নীতি গ্রহণ জরুরী। তা হলো- মালিকদের মুনাফার হার কমিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারকে এগিয়ে এসে শ্রমিকদের জন্য সস্তায় রেশন ও স্বল্প ভাড়ায় বাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মালিকদের বিষয়টিও সরকারকে আমলে নিতে হবে। ব্যাংকের সুদের হার হ্রাস করতে হবে। তা অবশ্যই শূন্য ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। যা প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান করা জরুরি। অনুকুল ভৌত অবকাঠামো, বন্দও, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদির সুবন্দবস্ত করতে হবে। পোশাক শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভার পূরণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। এবিষয়ে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। পোশাক শিল্পের জন্য আরো ইপিজেড ও প্রয়োজনীয় পৃথক জমি বা এলাকা বরাদ্দ করা দরকার।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে এখনো শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি, নিরাপত্তা, পৃথক গার্মেন্টস ভিলেজ এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়নি। এযাবৎ কেবল ক্রেতাদের চাহিদা মাফিক পোষাক তৈরি করেছে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প গুলো। কখনোই স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ গুরুত্ব পায়নি। উপেক্ষিত হয়েছে পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষতা ও গবেষণা। আমার শুধুই অনুসরণ করে চলছি। এনিয়ে গবেষণা জরুরি। মুনাফা হচ্ছে আর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি এটাই মুখ্য হওয়া উচিৎ নয়। তাতে হোঁচোট খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যা হচ্ছে এখন। ফলে আজো গার্মেন্টর্স শিল্প কেবল টিকে থাকার চেষ্টাই চলছে। একটি সেক্টরের প্রকৃত উন্নয় ঘটে তখনই যখন সে বিষয়টি একটি ‘ভিশন’ সামনে রেখে এগুয়। এ ‘ভিশন’ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়নের ‘ভিশন’কে সামনে রেখে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিরূপণ করা এবং সে অনুযায়ী অগ্রসর হওয়া এখন খুব বেশি জরুরি। এজন্য সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি, পর্যাপ্ত গবেষণা, শ্রমিক মালিকের সম্পর্ক উন্নয়ন কেবল- এ শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্যই নয়; বরং গোটা অর্থনীতির স্বার্থেই জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার যে স্বপ্ন দেখি, সেটি বাস্তবায়নের জন্য গার্মেন্টস শিল্পের যথাযথ পরিচর্যা করার বিকল্প নেই। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকার ও বিরোধীদলের সম্মিলিত প্রয়াসে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদি ভিশন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই এ শিল্পের কোনো নেতিবাচক সংবাদ আমাদের সমগ্র দেশেরই ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করে। রাজধানীর উপকণ্ঠের আশুলিয়ায় সম্প্রতি যে ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে তা আমাদের এ শিল্পের উন্নয়নে অন্তরায় বটে। এটি স্পস্টত এ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যতীত কিছু নয়। এজাতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। সরকার, প্রশাসন সর্ব্বোপরি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
newsstore13@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন