বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ব্যবহারের আগেই শেষ সরকারের আড়াই কোটি টাকার প্রকল্প

পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২৩, ৬:০৪ পিএম

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রতিদিন সঠিক সময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালু করে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়গুলোতে বসানো হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র। তবে তদারকির অভাবে বিদ্যালয়ে স্থাপন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে সেই যন্ত্রের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ যন্ত্র ব্যবহার না করায় বিকল হয়ে পড়েছে। আর যেগুলো সচল রয়েছে সেগুলোর হচ্ছে না নিয়মিত ব্যবহার। শিক্ষকরা বলছেন, যন্ত্রটি স্থাপনের পরে তদারকির অভাবে কোনো কাজেই লাগেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৯ সাল থেকে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালু করে সরকার। সেই নির্দেশনার আওতায় পিরোজপুরের ৭টি উপজেলার ৯৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগে বসানো হয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কমিটি ও প্রধান শিক্ষক যন্ত্রটি ক্রয় করেন। তবে তদারকির অভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রগুলো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে হাজিরা নিশ্চিত করতে লাগানো হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র। যেগুলোর ৯০ ভাগ দুই বছর ঘুরতেই নষ্ট হয়ে গেছে। তদারকির অভাব ও ব্যবহার না করায় সেটি বসানোর পর কোনো কাজই আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে যন্ত্রটি ব্যবহার হচ্ছে সেগুলোতেও রয়েছে নানা সমস্যা। কয়েকদিন পর পর সেগুলো মেরামত করতে হয়।
এ বিষয়ে ৪৪নং দক্ষিণ পূর্ব জিবগা সাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের বিদ্যালয়ে এই যন্ত্রটি বসানো হয়েছে। আমাদের অফিস থেকে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি, তাই সেটি চালু করা হয়নি।
দক্ষিণ পারসাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিকা মোকসেনা আক্তার বলেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি করোনার আগে বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। মেশিনটি এখন নষ্ট পড়ে আছে।
৬০নং দক্ষিণ চিরাপাড়া কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন বলেন, একটি চালানোর জন্য একবার সিমকার্ড কেনা হয়েছে। সেই সিমকার্ডটি নষ্ট হলে আবারও কিনেছি। যাদের কাছ থেকে মেশিনটি কিনেছি তারপর তারা আর আসেনি। তাই ঠিক করাও হয়নি।
২৩নং কাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, করোনার আগেই বিদ্যালয়ে এই ডিভাইসটি কিনে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু করোনায় ১৭-১৮ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ব্যবহারের অভাবে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা যে ফান্ড থেকে এই ডিভাইসটি কিনেছিলাম সেই স্লিপ ফান্ডে এই মেশিনের জন্য আর কোনো বাজেট অবশিষ্ট না থাকায় এটি আর সচল করা হয়নি।
৪৮নং দেওনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা রানী ঢালী বলেন, হাজিরার মেশিনটি দুইবার নষ্ট হয়েছে মেরামত করিয়েছি। আবার নষ্ট হওয়ায় আর মেরামত করা হয়নি। আমরা বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপে অফিসকে হাজিরার কাগজের ছবি তুলে দেই।
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম বলেন, বছরখানেক আগে বায়োমেট্রিক হাজিরা ডিভাইসটি কিছু বিদ্যালয়ে সচল ছিল। এখন সচল আছে কিনা আমি জানি না। বিদ্যালয়গুলোর প্রতি আমাদের নির্দেশনা ছিল ডিভাইসটি সচল রাখার। তবে যেগুলো অচল রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ডিভাইস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, তিন বছর আগে সরকারের নির্দেশে আমরা স্লিপ ফান্ডের অর্থায়নে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সংযুক্ত করি। কিছু মেশিন সচল আছে। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে কিছু জায়গায় ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইসগুলোর ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে এটি সচল করা যায় এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসলে আমরা সব মেশিন চালু করব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন