মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : দুপচাঁচিয়া উপজেলার নাগর নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় একশ্রেণির অর্থ লিপ্সু বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। ফলে এলাকার নদ সংলগ্ন বাঁধ, রাস্তাঘাট, ফসলের জমিসহ শত শত গ্রাম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে গত ৯ জানুয়ারি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নাগর নদের এই সব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুপচাঁচিয়া ও কাহালু উপজেলার সীমানার বুক চিরে বয়ে গেছে নাগর নদ। নদের দু’ধার দিয়ে এলাকা রক্ষার বাঁধ, নির্মাণ ও বিভিন্ন স্থানে ফসলের জমিসহ বহু গ্রাম গড়ে উঠেছে। এই গ্রামগুলোতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার চামরুলের বলদমারা সদরের জাঙ্গালপাড়া, নিমাইকোলা, লালুকা, তালোড়ার নওদাঁপাড়া, পলিপাড়া, গন্ডিশ্বর, ফটনিতলা এলাকার বেশ কয়েকজন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নাগর নদের বিভিন্ন স্থান থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা নদের বিভিন্ন স্থানে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বোরিং করে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। অনেকে নদের দু’ধারে নাম মাত্র সামান্য জায়গা ক্রয় করে তাতে প্রথমে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে। একইভাবে অনেক স্থানে নদের মাঝে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে আসছে। এইসব বালু বহনের জন্য নদের রক্ষা বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আবার ওই সব ব্যবসায়ীরা উত্তোলনকৃত বালু নদের বাঁধের উপর রাখাসহ পাশের রাস্তাঘাটের উপর রাখছে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলসহ এলাকাবাসীর চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সরেজমিন উক্ত নাগর নদ সংলগ্ন সদরের লালুকা, তালোড়ার পলিপাড়া, গন্ডিশ্বর, নওদাঁপাড়া, ফটনিতলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে গ্রামগুলোর অবস্থা করুণ। গ্রামগুলোর চলাচলের রাস্তার উপর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় করে বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদের দু’ধারে গ্রামগুলোর অনেক বাড়িঘরসহ ফসলের জমিতে ফাটল ধরেছে। নদ রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদের থেকে রক্ষা বাঁধসহ রাস্তাঘাট নদেতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে প্রভাবশালী ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস না পেলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব গ্রামের অনেকেই “দৈনিক ইনকিলাব” কে জানান, ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তারা অবৈধভাবে নদ থেকে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে গত সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান খান সেলিম, তালোড়া পৌর মেয়র আব্দুল জলিল খন্দকার নাগর নদ থেকে এইসব অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ এই সব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদ সংলগ্ন বাঁধ, রাস্তা, ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ অনেক গ্রাম ভূমি ধসের মতো ঘটনা ঘটবে। তারা নাগর নদ থেকে স্থায়ীভাবে অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। াসবাবপত্র প্রদান করার আশ্বাস দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন