বিশেষ সংবাদদাতা : প্রথম দিন যেখানে থেমেছে, সেখানেই ইনিংস ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দ্বিতীয় দিন উদ্দেশ ছিল একটাই বোলারদের পরখ করে নেয়া। বিশেষ করে সাদা বলে ভয়ঙ্কর মুস্তাফিজুর লাল বলে কতোটা কার্যকর, সেই পরীক্ষাটা ভালভাবেই দিয়েছেন এই কাটার মাস্টার। ইনজুরি থেকে ফিরে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে, টি-২০ খেলানো হলেও মুস্তাফিজুরকে টেস্টে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি টিম ম্যানেজমেন্ট। টেস্টের জন্য প্রস্তুত না হয়ে, ফিটনেস ফিরে না পেয়ে টেস্ট খেলতে আপত্তি ছিল বলে হায়দারাবাদ টেস্টের দলে চাননি থাকতে মুস্তাফিজ নিজেই। বিসিএলের ২ রাউন্ড খেলে টেস্টের জন্য মুস্তাফিজ নিজে হয়েছেন প্রস্তুত, ২০ মাস পর টেস্টে ফেরার পরীক্ষা গতকাল মোরাতুয়ায় দিয়েছেন এই বাঁ হাতি পেস বোলার। চার স্পেলে ১২ ওভার করেছেন বল, ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট (২/২৮)। পেস আক্রমনে স্বস্তির খবর দিয়েছেন তাসকিনও (৩/৪১)।
নুতন বলে ইনিংসের দ্বিতীয় ডেলিভারীতে বাউন্ডারি খেয়ে তেঁতে উঠেছেন মুস্তাফিজ। প্রথম স্পেলেই (৪-১-৯-০) দিয়েছিলেন ভয়ংকর বোলিংয়ের আভাস। এন্ড চেঞ্জ করে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে নেমেই শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট একাদশ ওপেনার চন্দ্রগুপ্তকে রিটার্ন ক্যাচে দিয়েছেন ফিরিয়ে। শূন্যে লাফিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে ফিল্ডিংয়ের পরীক্ষাটাও ভালভাবে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় স্পেলটি ছিল তার ভয়ংকর ২-১-২-১। শেষ স্পেলে ফ্রান্সিসকোকে বোল্ড আউটে দিয়েছেন ফিরিয়ে মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজুরের স্বরূপে ফেরার দিনে আর এক পেস বোলার তাসকিনের বোলিং ছিল প্রশংসনীয়। প্রথম স্পেলে (৫-১-১৮-২) ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি প্রতিপক্ষের ২ টপ অর্ডারকে। নুতন বলে মুস্তাফিজ-তাসকিনের বোলিংয়ে স্কোরশিটে ২৯ উঠতে ৩ উইকেট হারিয়েও হতোদ্যম হয়নি শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট একাদশ। ৪র্থ জুটির ৮১,৫ম জুটির ৫৩, ৬ষ্ঠ জুটির ৫৬ ৭ম জুটির ৬২ এবং ৮ম জুটির অবিচ্ছিন্ন ৭২ বলে ১১২ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মুশফিকুরদের স্কোর টপকে গেছে শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট একাদশ (৪০৩/৭)। এই ৫টি পার্টনারশিপের নেতৃত্ব দিয়েছেন চান্দিমাল। রঙিন জার্সির চান্দিমাল যে টেস্ট সিরিজে হয়ে উঠতে পারেন ভয়ংকর, তার আভাস দিয়েছেন এই লংকান মিডল অর্ডার। ২৫৩ বলে ২১ চার ৭ ছক্কায় ১৯০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে দিয়েছেন সতর্ক সংকেত।
প্রথম রানটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে ১৭টি বল। অথচ, এর পরই অন্য এক চান্দিমাল হাজির মোরাতুয়ায়। বাংলাদেশের ২ বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল,সাকিবের উপর একটু বেশিই চড়াও হয়েছেন তিনি। তাইজুলের তিনটি ওভারেই পর পর ২ বলে নামতা গুনে ছক্কা,চার করে নিয়েছেন! সাকিবের এক ওভারেও এমনটা করেছেন চান্দিমাল। তাকে অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেননি টেল এন্ডার চামিকা করুনারত্নে। ৪২ বলে ৭ চার ২ ছক্কায় হার না মানা ফিফটি করেছেন ১২ টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই লংকান। সাকিবকে শেষ ওভারে পাড়া-মহল্লা মানের বোলারে নামিয়ে এনেছেন করুনারতেœ। যে ওভারে পর পর তিনটি ছক্কার পাশে ছিল তার একটি বাউন্ডারি! শেষ ঘন্টায় শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট একাদশের এই ঝড়ো ব্যাটিংই বাংলাদেশের জন্য সতর্ক সংকেত।
গতকাল দলের দুই উইকেট কিপার মুশফিকুর,লিটন দাস ছাড়া অবশিস্ট সবাই করেছেন বোলিং। মুস্তাফিজ,তাসকিন ছাড়া বলার মতো বল করেছেন মিরাজ (১/৬৮),সৌম্য (১/৫৩)। মুশফিকুরের হাত থেকে টেস্টে কিপিং গ্যাভস খুলে লিটনের হাতে তা পরিয়ে দেয়ার সুফল গতকালই দেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিংয়ে (৫৭ নট আউট) আস্থার স্বাক্ষর রাখা লিটন দাসএকটি ক্যাচ এবং একটি স্ট্যাম্পিং করেছেন ।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩৯১/৭ ডি. (৯০ ওভার), তামীম ১৩৬ (রিটায়ার্ড ), সৌম্য ৯, মুমিনুল ৭৩, মুশফিক ২১, সাকিব ৩০, মাহামুদুল্লাহ ৪৩, লিটন দাস ৫৭*, মিরাজ ১,তাইজুল ৪, করুনারত্ন ৩/৬১।
শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট একাদশ ১ম ইনিংস : ৪০৩/৭ (৯০ ওভার), চন্দ্রগুপ্ত ২০, চান্দিমাল ১৯০*, রোশন সিলভা ৩৮, বুদ্দিকা ৩২, ফ্রান্সিসকো ২৭, হাসারাঙ্গা সিলভা ৩২, চামিকা করুনারত্নে ৫০*, মুস্তাফিজ ২/২৮, তাসকিন ৩/৪১, মিরাজ ১/৬৮, সৌম্য ১/৫৩। ফল : ড্র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন