মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলিল
আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের ন্যায় বর্তমানে কিছু ধর্মে নারীকে ভোগ্য সামগ্রী হিসেবে গণ্য করা হয়, বঞ্চিত করা হয় নারীর অধিকার থেকে, অথচ আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে ইসলাম নারীদের যথাযযথ অধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছে, পর্দা নামক অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সবচে’ মর্যাদপূর্ণ স্থানে। মায়ের সম্মান, স্ত্রীর মর্যাদা, মেয়ের অধিকার দিয়ে নারীকে উন্নীত করেছে সম্মানের শ্রেষ্ঠতম স্থানে। আলোচ্য নিবন্ধে ইসলামে নারীর অধিকার বিষয়ে পাঠক সমীপে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার প্রায়াস চালাব।
মুসলিম নারীদের আত্ম মর্যাদাবোধ: ইসলামে একজন নারীর মর্যাদা সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে। এমনকি কোন নারীর বিরুদ্ধে কেহ কোন প্রকার অপবাদ দিলে সে ব্যাপারে চার জন্য স্বাক্ষী উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে আধুনিক সমাজে নারীদের কুরুচিপূর্ণ বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে, অপবাদ দিয়ে বেড়ায়, সমাজে এর কোন বিচারের ব্যবস্থাও নেই অথচ ইসলামি বিচার ব্যবস্থা হলে অপবাদ প্রদানকারীকে চারজন স্বাক্ষী উপস্থাপন করতে পারলে ৮০ দোররা মারার স্পষ্ট নির্দেশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সূরা নুরের ৪ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন।
নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা: স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে বদান্যতা ও সুন্দর আচরণ করা, বাড়ির কাজে তাদের সহযোগিতা করা, পারিবারিক কাজে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা রাসূল সা. এরই নির্দেশ। রাসূল সা. তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সাথে ভালবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন। আয়শা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের ও তার পরিবারের সাথে সৎব্যবহার করে”।
অর্থনৈতিক অধিকার: ইহুদী ধর্মশাস্ত্র তালামুদে বলা হয়েছে, “নারীর কোন সম্পদের মালিক হওয়ার অধিাকার নেই। তার মালিকানাধীন সমস্ত সম্পদ স্বামীর বলে গণ্য হবে। স্বামীর মালিকানাধীন সম্পদ তো আছেই এমনকি স্ত্রীর সম্পদও স্বামীর মালিকানায় চলে আসবে। মহিলা কোন লোককে ডেকে মেহমানদারী করলে তা স্বামীর মাল থেকে চুরি হিসেবে গণ্য হবে” (তালামুদ :ংধহ ৭১ধ, মরঃ ৬২ধ )। অথচ ইসলামি অর্থনীতিতে নারীর কতই না চমৎকার অধিকার রয়েছে!
নারীদের জন্য খরচ করার বিধান: আল্লাহ তায়ালা নারীদের উপর ব্যয় করার বিষয়ে নিখুঁত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হল, যখন নারীদের সাথে ঘর সংসার করবে, তখন তাদের যাবতীয় খরচা তোমরাই বহন করবে। আর যদি তাদের সাথে ঘর সংসার করা কোনভাবেই সম্ভব না হয়, তখন তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের সাথে তাদের ছেড়ে দেবে। কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমাদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমরা সর্বদা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ করা ফরয: আল্লাহ তায়ালা স্বামীদের উপর তাদের স্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত মোহরানা আদায় করাকে ফরয করে দিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত মোহরানাতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করাকে আল্লাহ তায়ালা অবৈধ বা হারাম করে দিয়েছেন। তবে যদি স্ত্রী তার নিজের পক্ষ হতে কিছু কমিয়ে দেয় বা ক্ষমা করে দেয় সেটা হল ভিন্ন কথা। তখন তা হতে গ্রহণ করা স্বামীর জন্য অবশ্যই হালাল হবে। যার বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৪ নং আয়াতে দিয়েছেন।
নারীদের জন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠা: ইহুদী পÐিত এপষ্টাইন বলেন, “সে (নারী) উত্তরাধিকার সম্পদের অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেনন না, তাকে বিবাহের পূর্বে পিতার ও বিবাহের পরে স্বামীর মালিকাধীন সম্পদ (পণ্য) হিসেবে গণ্য করা হয় (ওনরফ., ঢ়. ১২১.)।”
আর ইসলাম নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারণ করে। ফলে তাদের মাতা-পিতা, সন্তানাদি বা নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে তারাও পুরুষদের মত সম্পত্তির মালিক হবে। আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৭ নং আয়াতে বলেন, “পুরুষদের জন্য মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশÑ তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক- নির্ধারিত হারে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন