শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

জমজমাট রাজশাহীর ঈদ বাজার

হিজাব বোরকার দোকানেও প্রচন্ড ভিড়

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে চাই নতুন জামা কাপড় জুতো। বছরজুড়ে এটা সেটা কিনলেও রমজান এলেই ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয় কেনা কাটার উৎসব। ক্রেতাদের কথা ঈদের সময় কেনাকাটার মজাই আলাদা। সেই জন্মের পর থেকেই ঈদে কেনাকাটা চলছে। এ সময় সিয়াম সাধনার পাশাপাশি অন্যরকম আবহ বিরাজ করে। সারা বছরে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও ঈদে ছেলে মেয়ে জামাই নাতীনাতনী বাবা মা ভাইবোনদের জন্য চলে কেনাটাকা। নিজের জন্য তেমনি কিছুনা হলেও অন্যদের পরন নতুন জামা কাপড় দেবার আনন্দ কম নয়। এসময় যেমন বিত্তবানরা তাদের বিলাসী কেনাকাটা করে। কেনাকাটার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তরা তাদের চিরচেনা টান পোড়নের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে স্বজনদের মুখে হাসি ফোটাতে প্রানান্তর চেষ্টা চালায়। এতে করে কারো কারো ঋনের বোঝা ভারী হয়। এবারো ঈদকে সামনে রেখে নিত্য নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে নিজেদের সাজিয়ে নিয়েছে রাজশাহীর মার্কেটে ছোট বড় দোকান গুলো। নি¤œ বিত্তদের ভরসাস্থল ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে নেই জামা কাপড় জুতো স্যান্ডেল নিয়ে। ঈদ বাজার পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এবারো ভারতীয় সিনেমা সিরিয়াল ছবির নাম করনের পোশাকে ভরে গেছে বাজার। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাহুবলী-২, বন্ধন, খোকাবাবু, জামাইরাজা, সারেগামাপা আর পিচ্চি নান্নু। জরি পাথর কাঁচ চুমকীর কাজ করা জমকালো পোশাক শোভা পাচ্ছে দোকান গুলোয়। ডিসপ্লেতে রাখা হয়েছে। কাপড়ের প্যাকেটের মধ্যে মডেলদের ছবি। এসব আকৃষ্ট করছে ক্রেতাদের। এসব কাপড়ের পাশাপাশি বাংলাদেশী থ্রিপিসও কম যায়না। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় ডিজাইনকে ও টেক্কা দিয়েছে। অনেকে ক্রেতার মন বুঝে দেশী কাপড়ও ভারতীয় বলে বিক্রি করছে। এসবিটি কথ¬ ষ্টোরের চৌকস সেলসম্যান রাজীব বলেন যে দেবতা যে ফুলে সন্তোষ্ট তাকে সেটি দেয়া হচ্ছে। ক্রেতার মন বুঝে ব্যবসা। ভারতীয় সিরিয়ালের নামে আসা কাপড় গুলোর তুলনায় বাংলাদেশী কাপড় গুলো বেশ ভাল। শুধু টিভির জমকালো প্রচারনায় ভারতীয় কাপড়ের দিকে ধুকছে। আর যেভাবে যে পারছে দাম হাকাচ্ছে। এমন দেখা গেল একটা থ্রিপিসের দাম সাড়ে তিন হাজার চাওয়া হলো এরপর ক্রেতার মর্জি। যার কাছ থেকে যেমন পাওয়া যাচ্ছে কেটে নেয়া হচ্ছে। কারো কাছে একই থ্রি পিছ তিন হাজার থেকে এগারো’শো টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যতই দাম হাঁকা হোক একটু সাহস করে কম দাম বলে দরাদরি করতে হবে। বিত্তবান যারা দরাদরি পছন্দ করেন না তারা পছন্দ হলেই বিক্রেতার দামে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের অবস্থা এমন দাড়িয়েছে বছরের এগারো মাসের ব্যবসা এক মাসেই করে নিতে চাচ্ছে। এমন অবস্থা ছেলেদের শিশুদের কাপড়ের দোকানেও। জুতো স্যান্ডেলের বাজারের একই অবস্থা। তবে জুতোর বাজার জমবে একেবারে শেষ মুহুর্তে। জামা কাপড়ের সাথে ম্যাচিং করে কেনা হবে জুতো স্যান্ডেল। এবারের আবহাওয়ায় গরমভাব বেশী অনুভুত হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে ক্রেতারা ঝুকছেন সুতি কাপড়ের মত ভাল আরামদায়ক কাপড়ের দিকে। এজন্য থান কাপড়ও ভাল বিক্রি হচ্ছে। ভীড় বেড়েছে দরজি বাড়ি গুলোয়। কাপড় কিনে ছুটছেন পছন্দের টেইলার্সে। ভীষন ব্যাস্ত দরজীবাড়ি গুলো। কয়েকজন জানালেন মধ্য রমজানের পর থেকে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেবেন। একদম শুরু দিকে যারা কাপড় দিয়েছেন এখন তাদের গুলো তৈরী করা হচ্ছে। অনেক ক্রেতা রয়েছেন যারা অপেক্ষায় থাকেন নিত্যনতুন ডিজাইনের। তারা শেষ পর্য্যায়ে এসে কেনাকাটা করেন। এরাও আগাম বুকিং দিয়ে রাখছেন। বাজার পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় থ্রিপিসের ধাক্কায় শাড়ির দোকান গুলো বেশ কোনঠাসা। অনেকে দোকানে শাড়ির পাশপাশি থ্রিপিস রাখা হচ্ছে। কারন শাড়ির চেয়ে থ্রিপিসের চাহিদা বেশী। কিশোরী থেকে শুরু করে পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধা পড়ছেন থ্রিপিস। অনেকের মতে থ্রিপিসে শরীর ভাল ঢাকা থাকে। আবার বয়স্ক মহিলারা পছন্দ করছেন ম্যাক্সি। গরমে ব্যবহার করে আরাম বলে। কেউ কেউ বলেন বাঙ্গালীর আটপেড়ে শাড়ির দিন বুঝি কমে আসল। বিয়ে শাদীতেও বেনারশী কাতানের পাশপাশি লেহেঙ্গা ব্যবহার হচ্ছে। হলুদ শাড়ির বদলে হলুদ থ্রিপিস। এ বদলের হাওয়া শহর থেকে গ্রামের মধ্যবিত্তদের মধ্যে পৌছে গেছে। এসবের পাশপাশি হিজাব, বড় ওড়না, বোরখার চাহিদা বেড়েছে। সব বয়েসী মেয়েরা বোরখা ব্যবহার করছে। এ কারনে বোরকায় লেগেছে ফ্যাসানের ছোঁয়া। এতে লেশ পাড় জরি লাগিয়ে জমকালো করা হচ্ছে। কারো কারো মন্তব্য বোরকা পড়লে থ্রিপিসের ফ্যাশানের দরকার পড়েনা। কমদামী থিপিস হলেও বোরকার নীচে ব্যবহার করা যায়। বোরকাকে আকর্ষনীয় করে তোলা হচ্ছে। এর ব্যবসায়ীরা জানালেন সব বয়েসী মেয়েদের মাঝে এসেবর চাহিদা বাড়ছে। বোরকা হিজাব নেকাব নিয়ে নেতিবাচক প্রচারনা কোন কাজে আসছেনা। বরং ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শিুশু ও ছেলেদের পোশাক সার্ট প্যান্ট পাঞ্জাবীর দোকানে ভীড় জমছে। কেউ রেডিমেট কিনছে। আবার কেউ বানাচ্ছে নিজের মত করে। ক’বছর ধরে ব্রান্ডের কাপড়ের দোকানের শোরুমের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের দেশী বিদেশী কাপড় শোভা পাচ্ছে। বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটা চলছে এখানে। এখনো ভীড় জমেনি নি¤œবিত্তের ভরসা গণকপাড়া, রেলস্টেশনের সামনের রাস্তাসহ রাস্তা ফুটপাতের উপর বসা কাপড়ের দোকান গুলোয়। রমজানের শেষদিকে এসে এসব স্থানে ভীড় বাড়বে। কাপড় ব্যবসায়ীরা জানালেন শুরুর দিকে তাদের ব্যবসায় একটা ঢিলেভাব ছিল। কারন এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রমজানের শুরুতে বন্ধ দিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা চলে গেছে নিজ ঘরে। এখানে বাইরে থেকে এরাই ক্রেতাদের বড় একটা অংশ। নিজেদের জন্য ছাড়াও স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যায়। এবার সে সুযোগ ঘটেনি। গতবারও মধ্য রমজান পর্যন্ত খেলা ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। এসব শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ায় বিরুপ পড়েছে এখানকার অর্থনীতিতে। অটো রিক্সা চালকরা জানালেন তাদের যাত্রী নেই। ফটোকপি, কম্পিউটারের দোকান গুলোয় ভীড় নেই। অলস সময় কাটাচ্ছে। ফাষ্টফুডের দোকান গুলো ইফতারী বেচে পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। এসবের মধ্যে আবার প্রকৃতিও বিরুপ আচরন শুরু করেছে। প্রচন্ড গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। কোন কোন সময় গাছের পাতাও যেন নড়ছেনা। এক দম বন্ধকর অবস্থা। মানুষ দিনের বেলা বাজার আসা এড়িয়ে চলছে। দুপুরের পরও ইফতারীর পর ভীড় বাড়ছে। কিন্তু এখানেও বিঘœ ঘটাচ্ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং যন্ত্রনা। সবচেয়ে বড় কষ্টে আছেন রাজশাহী নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর মার্কেট আরডিএ মার্কেটের ক্রেতা বিক্রেতারা। ক্রেতাদের মন্তব্য মার্কেটতো নয় যেন হিটলারের গ্যাস চেম্বার। এমন বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন