শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

আশুরার তাৎপর্য ও মর্মবাণী

আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলামি বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস মুহররম। আর মুহররম মাসের দশ তারিখই আশুরা নামে অভিহিত। অনেকগুলো তাৎপর্যমÐিত ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছিলো। দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অতীব গুরুত্বের দাবিদার। হজরত আদম (আ.)-এর তওবা মহররমের দশম দিন তথা এই আশুরায় কবুল হয়েছে। বর্ণিত আছে, তিনি দীর্ঘ ৩০০ বছর কান্নার পর আশুরার দিন তাঁর তওবা কবুল হয়। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। এ দিনে হজরত নূহ (আ.)-এর জাহাজ মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে (বর্তমানে আরারাত পর্বত শ্রেণিতে) এসে স্থির হয়। (মুসনাদে আহমদ)। আল্লাহতায়ালা হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে আশুরার এ দিনে উঁচু মর্যাদায় আসীন করেন। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। হজরত ইবরাহিম (আ.) আশুরার দিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং আল্লাহতায়ালা এ দিনে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন ও আগুন থেকে মুক্তি দেন। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। হজরত ইউসুফ (আ.) এ দিনে জেল থেকে মুক্তি পান। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। আল্লাহতায়ালা এ দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তার উম্মতকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। (মুসলিম)। এ দিনে হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। (তাম্বীহুল গাফিলীন)। এই দিনেই হজরত সোলাইমান (আ.)-কে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বাদশাহী দেয়া হয়েছিল। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। এ দিনে হজরত ঈসা (আ.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। আরশ, কুরসী, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, তারকা, বেহেশত এ দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছে। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। এ দিনেই সর্বপ্রথম আসমান থেকে জমিনে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। (তাযকিরাতুল কুরতুবী)। আশুরার দিন পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)ও রোজা রাখতেন। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল রোজায় পরিণত হয়। এ দিনেই হুজুর (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, বেহেশতি যুবকদের সরদার হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন।
এভাবে যতগুলো ঘটনা এদিনে অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে, সবগুলোই সমগ্র উম্মাহর জন্য, গোটা মানবজাতির জন্য ছিলো রহমত। আর এরই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ছিলো সিয়াম পালন। ইহুদিরা কেবল আশুরার দিনেই সিয়াম পালন করতো। প্রিয়নবী (সা.) ইহুদিদের ইবাদত-বন্দেগীর সঙ্গে ইসলামি ইবাদতের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত করবার নিমিত্তে আশুরা দিবসের সঙ্গে নবম দিবসেও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা নবম ও দশম মুহররমের রোজা রাখো এবং ইহুদিদের খেলাফ করো অর্থাৎ তাদের মতো কেবল একদিন সিয়াম পালন করো না।’ মোটকথা, খিলাফতে রাশিদা পর্যন্ত সমগ্র উম্মাহর মধ্যে এ দিনটিকে তাৎপর্য ও মর্মবাণী উল্লেখিত ঘটনাবলির ভেতরই সীমিত ছিলো। আর এ কারণেই দিনটিকে মুসলিম জাতি পবিত্র ও বরকতময় মনে করেন। ৬১ হিজরির এ দিনটিতেই এমন একটি ঘটনা সংঘটিত হয় যা উল্লেখিত সকল ঘটনাকে ছাপিয়ে ওঠে দিনটিকে একটি অনন্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করে। আর তা হলো, এ দিনেই রাসুলে আরাবি প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, খাতুনে জান্নাত হজরত ফাতেমা (রা.)-এর কলিজার টুকরা হজরত হুসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে শাহাদাত বরণ করেন। কারবালার এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সেইদিন থেকে আজ অবধি যত অশ্রু ঝরিয়েছ, পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত অন্য কোনো ঘটনা সেই পরিমাণ অশ্রু ঝরাতে পেরেছে কিনা সন্দেহ। এ নির্মম ও নৃশংস শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ যেভাবে শোকাতুর হয়েছে এবং যেরূপ নানাভাবে শোক প্রকাশ করছে, মাতম করছে মুসলিম উম্মাহর অপর কোনো সদস্যের মৃত্যুতে এর খÐাংশও দেখা যায় না। কিন্তু কেনো এই শাহাদত? কেনো এই নৃশংস ও শোকাবহ ঘটনার জন্ম হলো?
হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের পর হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সমঝোতাক্রমে মুসলিম জাহানের এককভাবে খিলাফত লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ২০ বছর একাদিক্রমে খিলাফত পরিচালনা করেন। অতঃপর তিনি তার পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী খলিফা হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে যান। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় সবাই এ মনোনয়ন মেনে নিলেও যে কয়েকজন সিংহদিল আল্লাহর বান্দা তা মেনে নিতে পারেননি। তাদের মধ্যে হজরত হুসাইন (রা.)-এর নাম ছিলো সর্বাগ্রে। তিনি ইয়াজিদকে স্বেচ্ছাচারী, অযোগ্য ও অপদার্থ হিসেবে খলিফা হবার সর্বাংশে অনুপযুক্ত মনে করেন। তার হাতে বায়আত করতে অস্বীকার করেন। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) তার জীবতকালে এ বিষয়ে হজরত হুসাইন (রা.)- এর ওপর কোনোরূপ পীড়াপীড়ি না করার নীতি মেনে চললেও তার ইনতেকালের পর তৎপুত্র ইয়াজিদ সে নীতিকে উপেক্ষা করে বায়আতের জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। এমনকি যেকোনো মূল্যে ইয়াজিদ হজরত হুসাইন (রা.)-এর বায়আত গ্রহণে কৃতসংকল্প হয়। ওদিকে হজরত হুসাইন (রা.) ও সুবিপুল মর্যাদার অধিকারী মহান সাহাবায় কেরাম এবং বিরাট সংখ্যক মর্যাদাবান তাবিঈর উপস্থিতিতে ইয়াজিদের মত একজন বিলাসী ও ক্রীড়া-কৌতুকপ্রিয় অনির্ভরযোগ্য স্বভাব চরিত্রের ব্যাক্তির হাতে বায়আত করতে এবং তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে কীভাবে রাজী হতে পারেন? তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ইয়াজিদের তুলনায় হাজারগুণে গুণান্বিত উত্তম আখলাক বিশিষ্ট যোগ্য লোক উম্মাহর মধ্যে এখনও রয়েছে। তদুপরি তার মনোনয়নের ভেতর মুসলিম উম্মাহর সত্যিকার মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি এবং খুলাফায়ে রাশেদার আমলে মহান খলিফা চতুষ্টয়ের অনুসৃত কোনো নীতি কিংবা আদর্শও অনুসরণ করা হয়নি। অতএব, তার দ্বারা মহান খলিফা চতুষ্টয়ের আদর্শ অনুসরণ বা ইসলামি খিলাফতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করা আদৌ সম্ভব নয়। ইয়াজিদের জানা ছিলো যে, রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.) কর্তৃক তার বায়আতকে অস্বীকারের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সাধারণের ওপর কী হতে পারে। ফলে সে পীড়াপীড়ি মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং যেকোনো মূল্যে বায়আত নিতে দৃঢ় সংকল্প হয়।
এমতাবস্থায় হজরত হুসাইন (রা.) ইয়াজিদের এর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার আশায় মক্কায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে ইরাক থেকে হজরত হুসাইন (রা.)-কে কুফায় আগমনের আহŸান ও তার প্রতি সর্বপ্রকার সাহায্য-সমর্থনের দৃঢ় আশ্বাসসূচক অসংখ্য চিঠি হাজির হয়। তাদের আহŸান ও সাহায্য-সমর্থনের আশ্বাস কতটা আন্তরিক তা সরেজমিন দেখার জন্য তিনি আপন চাচাতো ভাই হজরত মুসলিম বিন আকিল (রা.)-কে কুফায় পাঠান। হজরত মুসলিম (রা.) কুফায় অনুকূল পরিবেশ লক্ষ্য করে হজরত হুসাইন (রা.)-কে কুফায় আগমনের সবুজ সংকেত প্রদান করেন।
ইয়াজিদ পরিস্থিতি মুকাবেলার উদ্দেশ্যে কুফার গভর্নর নুমান ইবনে বশীরের স্থলে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে নিযুক্ত করেন। এদিকে হজরত হুসাইন (রা.)-কে কুফার পথে অবরোধপূর্বক যেকোনো মূল্যে বায়আত গ্রহণের নির্দেশ দেন। উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কুফায় ক্ষমতার বাগডোর হাতে নিয়েই হজরত মুসলিম বিন আকিল (রা.)-কে হত্যা করে এবং একদল সৈন্য নিয়ে প্রেরণপূর্বক হজরত হুসাইন (রা.)-এর আগমনে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে উভয় কাফেলা কারবালা নামক স্থানে উপনীত হয় এবং সামনাসামনি অবস্থান গ্রহণ করে। হজরত মুসলিম বিন আকিল (রা.) শাহাদতের পূর্বেই হজরত হুসাইন (রা.)-কে বিশ্বস্ত লোক মারফত কুফার লোকদের বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে অবহিত করে পেছনে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে যান। কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.) ‘তাকদীরের লিখন অখÐনীয়’ এই বলে হাসিমুখে সকল অবস্থা ও প্রতিকূলতা মুকাবিলায় দৃঢ় সংকল্প হন। তার কুফা গমনে বাধা দানকারীদের মধ্যে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.), হজরত আবু সাইদ আল খুদরী (রা.), হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.), হজরত সাইদ ইবনুল মুসায়্যাব (রা.)-এর ন্যায় প্রমুখ সাহাবি ও তাবিঈ ছিলেন।
ইতোমধ্যে আমর ইবনে সাদ-এর নেতৃত্বে ইবনে জিয়াদ প্রেরিত আরও একটি বিরাট বাহিনী ময়দানে এসে উপস্থিত হয়। এদের প্রতি ইবনে জিয়াদের নির্দেশ ছিলো, যেকোনো মূল্যে বায়আত গ্রহণের। হজরত হুসাইন (রা.) এবং তার আত্মীয়-বান্ধব ও মুষ্টিমেয় সাথী অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবার বিপরীতে সত্য রক্ষায় শাহাদাতকে অগ্রাধিকার দেন। এ সময় ইবনে জিয়াদ-এর কাছে হজরত হুসাইন (রা.)-এর কাফেলাকে পানি বন্ধ করার নির্দেশ পৌঁছে। অনন্যোপায় হয়ে তিনি শক্তি প্রয়োগে পানির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং উদারতা ও মহানুভবতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন পূর্বক প্রতিপক্ষকে পানি ব্যাবহারের অনুমতি প্রদান করেন।
অবশেষে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথম তীর নিক্ষিপ্ত হলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। প্রথমে দ্ব›দ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। এতে হুসাইন (রা.) পক্ষের পাল্লা ভারী হওয়ায় আমর ইবনে সাদ একযোগে ব্যাপক আক্রমণের নির্দেশ দেয়। আসলে এ ছিলো যুদ্ধের নামে এক অসম যুদ্ধ। সুসজ্জিত চার হাজার বাহিনীর বিরুদ্ধে পদাতিক ও অশ্বারোহী মিলিয়ে নারী-শিশু বাদে মাত্র ৭২ জনের একটি ক্ষুদ্র দলের এ যুদ্ধকে যুদ্ধ বলা যায় না। হজরত হুসাইন (রা.) ও তার আত্মীয়-বান্ধবরা কোনো অবস্থাতেই অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে ন্যায়ের জন্য নীতির কাছে একটি পরম ও প্রিয় সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহর পিয়ারা হতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে বংশধরদের জন্য একটি অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মহত্তম নজির সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যা উম্মাহকে এমনিভাবে মহত্তর আদর্শ ও লক্ষ্যের জন্য কোরবানি পেশ করতে অনুপ্রাণিত করবে। আর এখানেই তাদের সাফল্য। যুদ্ধে হজরত হুসাইন (রা.) ও তাঁর আত্মীয় সবাই শাহাদাত বরণ করেন। সেনানায়ক শিমারের নির্দেশে হুসায়ন ইবনে নুমায়ের হজরত হুসাইন (রা.)-কে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে। তীর তার কণ্ঠে বিদ্ধ হয়। যুরআ ইবনে শুরায়ক তামীমি তরবারি দ্বারা তার কাঁধে আঘাত করে। অবশেষে সানান ইবনে আনাস নামক চরম হতভাগা নেজার আঘাত হানলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। অতঃপর সে তার তলোয়ার দিয়ে হজরত হুসাইন (রা.)-এর পবিত্র মস্তক, যেই মস্তক বিশ্ব¯্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামিনের সামনে ছাড়া আর কখনো নত হয়নি, পবিত্র দেহ মুবারক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
হজরত হুসাইন (রা.) ছিলেন এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব, যার প্রশংসা করেছিলো ইবনে জিয়াদের সামনে স্বয়ং তারই হত্যাকারী সানান ইবনে আনাস। সে বলেছিলো, ‘স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে আমার বাহন পূর্ণ করে দাও। কারণ, আমি এমন একজন নেতাকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন সৌন্দর্যমÐিত। আমি হত্যা করেছি এমন এক ব্যক্তিকে যিনি মাতা-পিতার দিক দিয়েও উত্তম এবং অতি উত্তম বংশজাত, যাদের নাম স্মরণ করা হয় তাদের মধ্যে সর্বোত্তম। ইবনে জিয়াদ শত্রুর এই প্রশংসা সইতে পারেনি। তক্ষুণি নিজের হাতে তাকে হত্যা করে। আর এভাবেই দুনিয়ার বুকে এই পাপিষ্ঠ হতভাগা তার কৃত পাপের শাস্তি লাভ করে।
স্থূল দৃষ্টিতে কারবালায় ইয়াজিদের জয় হলেও প্রকৃত বিজয় হজরত হুসাইন (রা.)-এর ও তার আদর্শেরই হয়েছিলো, আর পরাজয় ঘটেছিলো ইয়াজিদের। বৃক্ষের জন্য পানি যেমন জাতির জীবনে রক্ত তেমনি সঞ্জীবনী সুধা বিশেষ। হজরত হুসাইন (রা.) ও তাঁর সাথীবর্গ মুসলিম উম্মাহর জন্য রক্ত ঢেলে সেই সঞ্জীবনী শক্তিই যুগিয়ে গেলেন। যার প্রবাহ আজও আমরা আমাদের শিরা-উপশিরায় অনুভব করি।
ইয়াজিদ মারা গেছে সেই কবে। কিন্তু তার প্রেতাত্মারা বেঁচে আছে আজও। দেশে বিশ্বের নানা প্রান্তে আজও তারা নিত্য কারবালার জন্ম দিয়ে চলছে। তাই বলে হজরত হুসাইন (রা.) মারা যাননি। তাঁর কোরবানি, তাঁর আত্মদান দিয়ে চলেছে শতসহ¯্র লক্ষাধিক হুসাইন, যারা তারই দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হয়ে আত্মদান করে চলেছে কাশ্মীর, আরকান, ফিলিস্তিন, মিসর, আলজিরিয়া, বসনিয়া, চেচনিয়াসহ পৃথিবীর নানা অঞ্চল ও প্রান্তে। তারা শহিদ হন, কিন্তু মরেন না। বুলেট, বেয়নেট, জেল, টর্চার কেন্দ্রের অসহনীয় নির্যাতন তাদেরকে স্তব্ধ করে দিতে পারে না। হাসিমুখে সব সয়ে যান তারা। কারবালা তাদের পথ দেখায়, যেভাবে দেখিয়েছে যুগে যুগে।
লেখক: শিক্ষক, মাদরাসা বাইতুন নূর, ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন